পদ্ধতিগত ত্রুটির বাহানায় চাকুরী বাতিল ও নতুন পদ সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা খারিজ, উত্তপ্ত বিধানসভা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ মে৷৷ ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল এবং ১৩০০০ নতুন পদ সৃষ্টি ইস্যুতে বিরোধী বেঞ্চের সদস্যরা রাজ্য সরকারকে চাপে ফেলতে মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে জনস্বার্থে আলোচনার প্রস্তাব আনেন৷ কিন্তু, পদ্ধতিগত ত্রুটির যুক্তি দেখিয়ে উপাধ্যক্ষ তা খারিজ করেন দেন৷ তাতে তুমুল চটে লাল হয়ে যান তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ এবং কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায়৷ এই দুটি ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ দিতেই হবে বলে দাবিতে সোচ্চার হন৷ কিন্তু উপাধ্যক্ষ কিছুতেই রাজী হচ্ছেন না দেখে সুদীপবাবু বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং জানতে চান রাজ্য সরকারের ঐ দুটি ইস্যুতে আলোচনায় কোন আপত্তি রয়েছে কি না৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঐ দুটি ইস্যুতে আলোচনায় রাজ্য সরকারের কোন আপত্তি নেই৷ কিন্তু, আলোচনা করার আগে শিক্ষা মন্ত্রীকে প্রস্তুতি নিতে হবে৷ যেহেতু এসংক্রান্ত আলোচনার জন্য বিধানসভা সচিবালয় থেকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে কোন নোটিশ যায় নি৷ ফলে, তিনি আজ প্রস্তুত হয়ে আসেননি৷ আগামী দুইদিন ঐ দুটি বিষয়ে আলোচনা হতেই পারে৷ তাতে আপত্তির কিছু নেই৷ অবশেষে উপাধ্যক্ষ ঐ দুটি আলোচনার জন্য অনুমতি দিয়েছেন৷ বিধায়ক গোপাল রায়ের উত্থাপিত বিষয়টি নিয়ে বুধবার এবং বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে৷
এদিন উল্লেখ পর্বে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ উপাধ্যক্ষের কাছে জানতে চান, রুল ৯৩ মোতাবেক ১৩০০০ নতুন শূণ্যপদ সৃষ্টি নিয়ে জনস্বার্থে আলোচনার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি কেন৷ উপাধ্যক্ষ জানান, পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য নোটিশটি গ্রাহ্য হয়নি৷ তিনি বলেন, শূণ্যপদ কখনো সৃষ্টি হয় না৷ নতুন পদ সৃষ্টি হয়৷ কিন্তু, নোটিশটিতে বলা হয়েছে ১৩০০০ শূণ্যপদ সৃষ্টি হয়েছে৷ তাই নোটিশ খারিজ করা হয়েছে৷ তাতে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন সুদীপবাবু৷ বলেন, এমন বহুবার বানানে কিংবা পদ্ধতিগত ভূল করা হয়ে থাকে৷ কিন্তু, বিধানসভা সচিবালয় তা সংশোধন করে দেয়৷ তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে বাঁচানোর জন্যই এই ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না৷ তাই তিনি জোর দিয়ে দাবি করেন, নোটিশটি সংশোধন করে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হোক৷ এদিকে, কংগ্রেস বিধায়কও জনস্বার্থে আলোচনার জন্য একটি নোটিশ জমা দিয়েছিলেন৷ সেটিও খারিজ করে দিয়েছেন উপাধ্যক্ষ৷ গোপালবাবুর নোটিশের বিষয়বস্তু ছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল হয়ে যাওয়ায় আগামী বছর নতুন শিক্ষাবর্ষ চালু হলে রাজ্যের বিভিন্ন সুকলগুলিতে কি ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে এই সংক্রান্ত৷ উপাধ্যক্ষ বলেন, এই নোটিশে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে, তাই তা গ্রাহ্য করা হয়নি৷ গোপালবাবু তাতে জানতে চান, কোথায় পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানাতে হবে৷ কিন্তু, উপাধ্যক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে কি পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে তা জানান নি৷ এনিয়ে বিধায়ক গোপাল রায় এবং বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং আলোচনার সুযোগ দিতেই হবে বলে দাবিতে অনঢ় থাকেন৷ একসময় সুদীপবাবু বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং জানতে চান রাজ্য সরকারের ঐ দুটি বিষয়ে আলোচনায় কোন আপত্তি রয়েছে কি না৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ঐ দুটি বিষয়ে আলোচনায় রাজ্য সরকারের কোন আপত্তি নেই৷ কিন্তু, আলোচনার জন্য এই মুহুর্তে শিক্ষামন্ত্রী প্রস্তুত নন বলে তিনি মনে করেন৷ কারণ, এমন কোন বিষয়ে আলোচনা করতে হবে বিধানসভা সচিবালয় থেকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে কোন নোটিশ যায়নি৷ ফলে, তিনি কোন প্রস্তুতি নিয়ে আসেননি৷ নতুন করে নোটিশ জমা দিলে আগামী দুই দিনে ঐ দুটি বিষয়ে আলোচনা হতেই পারে, তাতে আপত্তির কিছুই নেই, বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অবশেষে ঐ দুটি বিষয়ে সংশোধিত আকারে উপাধ্যক্ষের কাছে নোটিশ জমা দেন সুদীপ রায় বর্মণ এবং গোপাল রায়৷ উপাধ্যক্ষ বুধবার গোপাল রায়ের উত্থাপিত বিষয়টি নিয়ে এবং বৃহস্পতিবার সুদীপ রায় বর্মণের উত্থাপিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সম্মতি দিয়েছেন৷