নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ মে৷৷ রেগা প্রকল্পে ভূল তথ্য দেওয়ার কারণেই অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রাজ্যকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ রাজ্যের আটটি জেলার জেলাশাসকদের উদ্দেশ্যে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব জি এস জি আয়েঙ্গারের জারি মেমোরেন্ডামে এমনটাই স্পষ্ট৷ তাতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি প্রতিনিধি দল রাজ্য সফরে এসে রেগা প্রকল্পে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখেছে৷ তাঁদের বক্তব্য, জব কার্ড ভেরিফিকেশন সঠিকভাবে হয়নি এবং এমআইএস-এ ভূল তথ্য আপলোড করা হয়েছে৷ তাই গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব জেলাশাসকদের জেলা পর্যায়ে একটি করে টিম গঠন করে সমস্ত কিছু তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ তদন্তে যার বিরুদ্ধে গাফিলতি প্রমাণিত হবে তাদের উপর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরেছেন বিজেপি মুখপাত্র ডাঃ অশোক সিনহা৷
এদিন ডাঃ সিনহা যে তথ্য তুলে ধরেছেন তাতে দেখা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল এবং ৩ মে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে জেলাশাসকদের সাথে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব রেগা প্রকল্পের স্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন৷ তাতে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধি দলের সফরে উঠে আসা রাজ্যে রেগা প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম৷ রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব বলেছেন, রেগা বাস্তবায়নে আগামী দিনে রাজ্যকে মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখী হতে হবে৷ কারণ, রেগা প্রকল্পের সাথে যুক্ত আধিকারীকদের একাংশ তাদের কাজ ঠিকঠাক মতো করছেন না৷ তাই সিপাহীজলা এবং ঊনকোটি জেলার জেলা শাসকদের এই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন ডঃ আয়েঙ্গার৷ মূলতঃ বিশালগড় এবং চন্ডিপুর ব্লকের বিডিওদের কাজকর্মের বিষয়েই বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব৷ পাশাপাশি হেজামারা ব্লকের বিডিও অনুমতি ছাড়া ছুটিতে যাওয়ার বিষয়েও রিপোর্ট তলব করেছেন৷ শুধু তাই নয় রেগা প্রকল্পে জবকার্ড ভেরিফিকেশন, সাতটি রেজিস্টার কিভাবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং দেখাশোনা করা হয়েছে ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ভূমি উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ প্রথম পর্যায়ে কতটা করা হয়েছে তার রিপোর্ট শীঘ্রই জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন৷
ডাঃ সিনহার দেওয়া তথ্যে আরও জানা গিয়েছে, গত ২৪ এপ্রিল গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে জেলা শাসকদের সাথে রেগা প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে সিপাহীজলা জেলায় এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধি দল প্রশ্ণ তুলে গিয়েছেন৷ প্রতিনিধি দলের সদস্য মন্ত্রকের উপ সচিব এ কে সাম্বলি জানিয়ে গিয়েছেন, বিশালগড় ব্লকে জবকার্ডের কোন ভেরিফিকেশন হয়নি এবং এমআইএস-এ ভুল তথ্য আপলোড করা হয়েছে৷ ধলাই জেলাতেও রেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধি দল৷ রেগা প্রকল্পের এই অবস্থা রাজ্যকে লজ্জিত করেছে বলে ঐ আলোচনায় মন্তব্য করেছেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব৷ সাথে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই সমস্ত কারণেই রাজ্য রেগা প্রকল্পে অর্থ কম পাচ্ছে৷
গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব সিপাহীজলা জেলার জেলা শাসককে নির্দেশ দিয়েছেন, বিশালগড় ব্লকের বিডিওর সরকারী দায়িত্ব কর্তব্যে কেন গাফিলতি হয়েছে তা জানানোর জন্য৷ বিশেষ করে, জবকার্ড ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য এমআইএস-এ আপলোড এবং জমি সংক্রান্ত কাজকর্মে সন্দেহজনক তথ্য প্রদান করার বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন৷ বিডিওর কাছ থেকে যদি সন্তোষজনক বক্তব্য না মিলে তাহলে তার বিরুদ্ধে যাতে মামলা করা হয় সেই নির্দেশও দিয়েছেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব৷ পাশাপাশি দায়িত্বহীন সমস্ত আধিকারীকদের বিষয়ে রিপোর্ট দপ্তরের কাছে শীঘ্রই জমা দিতে জেলা শাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷
এদিকে, জিও ট্যাগিংয়েও রাজ্যের অবস্থা প্রচন্ড নিরাশাজনক৷ গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব জেলা শাসকদের সাথে আলোচনায় বলেছেন, এপ্রিলে ধলাইয়ে ৪৪.০৭ শতাংশ, উত্তর ত্রিপুরায় ২৫.৭১ শতাংশ৷ মে মাসে জিও ট্যাগিং করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬, ৯৮৩ টি৷ কিন্তু, সিপাহীজলা, দক্ষিণ ত্রিপুরা, উত্তর ত্রিপুরা এবং ধলাই জেলা যথাক্রমে ৩.৬৩ শতাংশ, ৩.৩৬ শতাংশ, ৭ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ জিও ট্যাগিং করতে পেরেছে৷ গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব জিও ট্যাগিং যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গুরুত্ব সহকারে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন৷
এদিকে, এই বিষয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ রেগা প্রকল্পে ২০০ দিনের কাজের দাবী করেছে সিপিএম৷ সেই কথা উল্লেখ করেন৷ মূল বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর বদলে তিনি আবারও অর্থ বরাদ্দ না হওয়ার জন্য কেন্দ্রের দোষারোপ করতে শুরু করেন৷ তাঁর বক্তব্য কেন্দ্র ইচ্ছে করে রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলতে এই উদ্যোগ নিয়েছে৷ তাঁকে পুনরায় গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিবের মেমোরেন্ডাম নিয়ে প্রশ্ণ করা হলে অবশেষে তিনি বলেন, রাজ্য সরকার বিষয়টি দেখবে৷ যদি কোন গড়মিল হয়ে থাকে তাহলে তা খঁুজে বের করে ব্যবস্থা নেবে৷
2017-05-23
