নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ মে৷৷ সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে অদৃশ্য সমঝোতা হচ্ছেই৷ অন্তত কংগ্রেসের ডাকা বন্ধকে ঘিরে রবিবার সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর বিবৃতি থেকে এমনটাই স্পষ্ট৷ বিবৃতিতে সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী নয়া উদারবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি ক্রমশ শক্তিশালি হয়ে উঠার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ত্রিপুরা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য কংগ্রেস দলের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ এর আগে কখনোই বন্ধ ডাকা হলে রাজনৈতিক দলকে তা প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানায়নি শাসক দল৷ বরং তারা দাবি করেছে রাজ্যবাসী ঐ বন্ধ প্রত্যাহার করবে এবং রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যেই বন্ধ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাতো সিপিএম৷ কিন্তু, এদিনের বিবৃতিতে সিপিএম কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে যে অনুরোধ জানিয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, বিজেপিকে আটকাতে দুই দল নিশ্চিতভাবে অদৃশ্য সমঝোতার দিকেই এগুচ্ছে৷ এদিন বিবৃতিতে আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কংগ্রেস দলের জনবিচ্ছিন্নতা নয়া উদারবাদী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলিকে শক্তিশালি করেছে, তাতে সিপিএম ভিষণ চিন্তিত৷
রবিবার এক বিবৃতিতে সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী বলেছে, কোন কোন ইস্যুতে এই বন্ধ আহ্বান করা হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ শুধু চিটফান্ড ইস্যুতে সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়ে হুট করে রাজ্যের জনগণের উপর বন্দ চাপানোর চেষ্টা নিরর্থক ও অযৌক্তিক৷ সিপিআই(এম) এধরনের হটকারি পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে৷
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চিটফান্ড ইস্যুতে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারই প্রথম সরকারের কাছে জমা পড়া অভিযোগগুলি যথাযথ তদেন্তর জন্য সিবিআইকে অনুরোধ জানায়৷ সিবিআই কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত করতে রাজি হয়৷ এবং বাকিগুলি রাজ্যে ফেরত পাঠিয়ে দেয়৷ রাজ্যের উচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধাােন বিশেষ তদন্ত টিম অভিযোগগুলি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত গুটিয়ে এনে পরবর্তী পদক্ষেপও গৃহীত হয়েছে৷ এবস্থায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে বন্ধ আহ্বান করা নিছক বামফ্রন্ট বিরোধী রাজনীতি ছাড়া কিছু নয়৷
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একটার পর একটা অর্থনৈতিক আক্রমণ দেশবাসীর উপর নামিয়ে আনছে৷ ত্রিপুরার জনগণও এই আক্রমণের বাইরে নয়৷ অন্যদিকে ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রাদায়ভুক্ত মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা এবং দলিত, উপজাতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবন-জীবিকার উপর দুর্বিসহ হামলা সংগঠিত করছে৷ আরএসএস পরিচালিত বিজেপি ত্রিপুরায়ও একই কর্মকৌশল নিয়ে এগোবার বিরুদ্ধে লাগাতর রাজনৈতিক-মতাদর্শগত লড়াই ও গণআন্দোলন সংগঠিত করে চলেছে৷ কংগ্রেস দলের এই বন্ধ কার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আহুত হয়েছে? রাজ্যে কংগ্রেস দলের বরাবরের এই নেতিবাচক রাজনীতি কংগ্রেস দলের জনবিচ্ছিন্নতা বাড়িয়েছে৷ নয়া উদারবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি সম্পর্কে কংগ্রেসের মতাদর্শগত নীরবতা দলের অনুগামীদের একাংশকে একটি ফ্যাসিষ্টসুলভ শক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷
এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিপিআই(এম) ১২ ঘন্টা ত্রিপুরা বন্ধের আহ্বান প্রত্যাহার করার জন্য কংগ্রেস দলের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ আর তাতেই ধারণা করা হচ্ছে, সিপিএম কংগ্রেসের হাত ধরেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নামবে৷
2017-05-15

