চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের বিষয়ে আইনের বাইরে গিয়ে কিছুই করা যাবে না ঃ সিপিএম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ এপ্রিল৷৷ চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পরিণতি কি হবে তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেল৷ সিপিএম রাজ্য

রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিজন ধর৷ ছবি নিজস্ব৷

সম্পাদক বিজন ধরের বক্তব্য, আইনের বাইরে গিয়ে কিছুই করা যাবে না৷ প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকেই যা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব তাই হবে৷ ফলে, তাঁর এই কথায় স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার ১০৩২৩ জন চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পাশে রয়েছে বললেও, আইনের উর্দ্ধে গিয়ে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়৷ পাশাপাশি তিনি আদালতের রায়ের এবং এনসিটিই’র গাইডলাইনের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন৷ তিনি মনে করেন, শুধু মার্কস দিয়ে কোন শিক্ষকের যথাযথ যোগ্যতা যাচাই করা সঠিক নয়৷
রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় দলের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ রাজ্য সরকার বলছে তাদের পাশে থাকবে৷ কিন্তু, এটা সম্পূর্ণ আইনী বিষয়৷ যতই আলোচনাই হোক, পার্টি কোন কিছুই করতে পারবে৷ যা করার সরকারকেই করতে হবে৷ তবে, এক্ষেত্রেও প্রচলিত আইন কানুনের মধ্যে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে৷ এদিন তিনি স্পষ্টভাবে জানান, আইনের বাইরে গিয়ে কেউ কোন কিছুই করতে পারবে না৷
এদিকে, বিজনবাবু এদিন শিক্ষক মামলায় আদালতের রায় এবং শিক্ষক নিয়োগে এনসিটিই’র গাইডলাইনের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন৷ তিনি বলেন, শুধু মার্কস দিয়ে কোন শিক্ষকের যোগ্যতা যাচাই করা সঠিক নয়৷ অনেক ভাল ছাত্র শিক্ষকতায় নিজেকে দক্ষ শিক্ষক হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন না৷ আবার এমন ছাত্র রয়েছেন যারা মেধাবি নন, অথচ দক্ষতার সাথে শিক্ষকতা করতে পারছেন৷ সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা ৮/১০ জন প্রাইভেট টিউটর রেখে ভাল নম্বর পেয়ে থাকেন৷ কিন্তু, গ্রামে যারা থাকেন তাদের পক্ষে কয়েকজন প্রাইভেট টিউটর রাখার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়৷ তবে কি, এই ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকতার চাকুরী করতে পারবেন না, প্রশ্ণ বিজনবাবুর৷ সিপিএম’র শ্রেণিগত অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেন, আমরা এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে৷
এদিন তিনি শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনেরও কড়া সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বলেন, মামলা যারা করেছেন তাদের মদত দিয়েছে তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন৷ বিজেপি বেকারদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে৷ অথচ যারা মামলা করেছেন তারা শিক্ষকদের বাতিল হউক তা চাননি৷ তারা চেয়েছিলেন তাদের কোন ব্যবস্থা হোক৷ বিজনবাবু বিরোধীদের এই অবস্থানের নিন্দা জানিয়েছেন৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, তাদের এই অবস্থানে বেকার বিরোধী চরিত্রই ফুটে উঠেছে৷
এদিন বিজনবাবু উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিজেপি রাজ্যের বিভিন্ন অবাম দলগুলিকে গ্রাস করার চেষ্টা করছে৷ দলগুলিতে ভাঙন ধরানোরও চেষ্টা চলছে৷ তিনি বলেন, নির্বাচন এলে আগেও রাজ্যে সাম্প্রদায়িক এবং জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে বিরোধ তৈরির ঘটনা ঘটেছে৷ রাজ্য প্রশাসন রুখবার চেষ্টা করেছে৷ আমরা বাঙালী রাজ্যভাগ করার চেষ্টা করেছে৷ এই তৎপরতাগুলি অশুভ লক্ষণ৷ তাই তিনি এই ধরনের প্রবণতা যাতে ফের রাজ্যে তৈরি না করতে পারে তার জন্য হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলির বিষয়ে সজাগ থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন৷
এই সমস্ত বিষয় সিপিএম রাজ্য কমিটির দুই দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন৷ বিজনবাবু আরো জানান, রেগায় শ্রমদিবস কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় রাজ্য কমিটি তীব্র বিরোধীতা করেছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যকে বঞ্চিত করার জন্য নানা শর্ত আরোপ করা হচ্ছে৷ রাজ্যে অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির জন্যই এই সমস্ত কিছু হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন৷ তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিরা রাজ্যে এসে অসত্য তথ্য দিচ্ছেন৷ আবার দপ্তরের মন্ত্রিরা সেই অসত্য তথ্য খন্ডন করলে ফের পাল্টা তথ্য তুলে ধরে নিজেদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে৷ এই সমস্ত কিছুর প্রতিবাদে আগামী দুই মাস বিভিন্ন কায়দায় রাজ্যের সকল অংশের মানুষের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে৷ রাজনৈতিক মতাদর্শভাবে এইসব শক্তিগুলিকে মোকাবিলা করার জন্য প্রত্যেক ইউনিট শাখাগুলির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে৷ যাতে খারাপ দিন ফের ফিরে না আসে৷ এদিন বিজন বাবু জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ মাসে সারা রাজ্যে বিভিন্ন অবাম দল ছেড়ে ১৪২৩ পরিবারের ৪২৬১ জন ভোটার সিপিএম এবং বামেদের পতাকা তলে এসেছেন৷ তবে, কতজন বাম শিবির ছেড়েছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট করে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি৷