নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ জানুয়ারী৷৷ যান সন্ত্রাসে নিভে গেল এক যুবকের জীবনদীপ৷ বেপরোয়া ট্রাক ঐ যুবককে

পিষে মেরেছে৷ ঘটনাটি ঘটেছে আগরতলা শহরের পূর্ব থানার অধীন বিদ্যাসাগর বাজার সংলগ্ণ পাকা সেতুর কাছে সোমবার সকালে সাড়ে এগারটা নাগাদ৷ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন জনগণ৷ দূর্ঘটনাস্থলেই বালি বোঝাই ট্রাকটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা৷ এমনকি আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিসের ইঞ্জিনকেও ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ গণরোষে পড়তে হয়েছে পুলিশকে৷ বেশ কয়েকজন পুলিশকে মারধর করেছে স্থানীয় ক্ষুব্ধ যুবকরা৷
সংবাদে প্রকাশ, শহরতলীর রেন্টার্স কলোনী এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত দাসের ছেলে রনি দাস (২১) অন্যান্যদিনের মতো কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন৷ পেশায় শ্রমিক রনি বাইসাইকেল নিয়ে মোটরস্ট্যান্ডের দিকে আসছিলেন৷ রনি যখন বিদ্যাসাগর বাজার হয়ে পাকা সেতু অতিক্রম করে কলেজটিলা লেইকের পাড় দিয়ে মোটরস্ট্যান্ডের দিকে আসছিল তখন পেছন দিক থেকে দ্রুত বেগে ছুটে আসে বালি বোঝাই একটি ট্রাক৷ ট্রাকটি রনির বাইসাইকেলকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়৷ তাতে রনি রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে যায়৷ চালক ট্রাক না থামিয়ে রনির দেহের উপর দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যায়৷ তাতে ট্রাকের চাকায় পিষে ঘটনাস্থলে মারা যায় রনি৷
অফিস টাইমে এই রাস্তা দিয়ে প্রচুর সংখ্যায় যানবাহন চলাচল করে৷ মুহুর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা হতচকিৎ হয়ে উঠেন৷ এদিকে, যুবককে চাকায় পিষে মেরে সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় চালক৷ টির-০১-এ-১৫৩৫ নম্বরের বালি বোঝাই ট্রাকটি একটি কেরিং সেন্টারের অধীনস্থ বলে জানা গিয়েছে৷ এদিকে, দূর্ঘটনার সাথে সাথেই ঐ এলাকায় প্রচুর সংখ্যক

লোক সমবেত হয়ে যায়৷ এরই মধ্যে কিছু যুবক উত্তেজিত হয়ে ট্রাকে ভাঙচুর চালায়৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ট্রাকটিতে৷ একশ মিটার দূরত্বে থাকা চৌকি থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়৷ লাঠিধারী কয়েকজন পুলিশকর্মী ক্ষুব্ধ জনতার সামনে রীতিমতো ভিজে বেড়াল হয়ে পড়েন৷ পরবর্তী সময় খবর দেওয়া হয় আগরতলা পূর্ব থানায়৷ ওসি প্রণব দেবনাথ সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি৷ এদিকে, ঘটনাস্থলে পৌঁছেন কলেজটিলা ফাঁড়ির ওসি৷ তিনি সাদা পোশাকে ছিলেন৷ তাঁকে স্থানীয় জনগণ মারধর করেছে৷ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মীও ক্ষুব্ধ জনতার হাতে প্রহৃত হয়েছেন৷ ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফাঁয়ার সার্ভিসের ইঞ্জিন৷ ক্ষুব্ধ জনতা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে৷ ট্রাকের আগুন নেভাতে দেয়নি৷ পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে৷
ঘটনার খবর পেয়ে পশ্চিম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী, সেন্ট্রাল ডিএসপি, এসডিপিও, এসডিএম সহ অন্যান্য আধিকারীকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন৷ তাঁরা ক্ষুব্ধ জনতার সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন৷ তারপর পুনরায় সেখানে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের ইঞ্জিন৷ দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন৷ পূর্ব আগরতলা থানায় দূর্ঘটনার একটি মামলা রুজু করা হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত ইট, বালি, মাটি ইত্যাদি বোঝাই করা কোন গাড়িকে শহরের দিকে আসতে দেওয়া হয়না৷ যোগেন্দ্রনগর রেল ব্রিজের ওপারে গাড়িগুলিকে আটকে দেওয়া হয়৷ কিন্তু, অভিশপ্ত এই ট্রাকটি আগে থেকেই নো এন্ট্রির এদিকে কোন একটি রাস্তায় ছিল৷ সেটি শহরের দিকে আসছিল৷ তাতেই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে৷ এই বিষয়ে পুলিশ আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
এদিকে, স্থানীয় জনগণের অভিযোগ পুলিশ গোপন রফার ভিত্তিতে নির্দ্ধারিত সময়ের বাইরে এইসব মাটি, ইট, বালি বোঝাই গাড়িগুলিকে চলাচল করার অনুমতি দিচ্ছে৷ তাছাড়া মোটরস্ট্যান্ড থেকে বাইপাস পর্যন্ত এই রাস্তাটি অত্যন্ত সরু৷ যানবাহনের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ সড়কটি দিনদিন ব্যস্ততম হয়ে উঠছে৷ তারওপর চলছে রাস্তা সংস্কারের কাজ৷ তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই সড়কের উপর চাপ বেড়েছে৷ বিপদের ঝঁুকি নিয়ে যানবাহন ও পথচারীরা চলাচল করছেন৷