এফসিআই উদ্যোগ নিলে রেশনের জন্য রাজ্য থেকে চাল সংগ্রহ করা সম্ভব ঃ খাদ্যমন্ত্রী

riceনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ ডিসেম্বর৷৷ রাজ্য সরকারের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোন সুনিদিষ্ট আশ্বাস পাওয়া না গেলেও এফ সি আই-র গুয়াহাটিস্থিত জোন্যাল অফিসের প্রকিউরমেন্ট বিষয়ক কর্মকর্তাগণ রাজ্যের উৎপাদিত ধান সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে কেনার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সমীক্ষা এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি দপ্তর এ ব্যাপারে এফ সি আই-র সাথে সমন্বয় রেখে চলেছে৷ আজ বিধানসভায় বিধায়ক বাসুদেব মজুমদার, বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী এবং বিধায়ক মণীন্দ্র চন্দ্র দাসের আনা একটি দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিসের জবাবে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতা স্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী ভানুলাল সাহা এই তথ্য জানিয়েছেন৷ তিনি জানান, গত ১৩ জুলাই, ২০১৬ এবং ৯ সেপ্ঢেম্বর, ২০১৬ তারিখে কৃষি দপ্তরের প্রধান সচিবের সভাপতিত্বে দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ এই বৈঠকগুলিতে রাজ্যে বর্তমানে ধান উৎপাদনের পরিমান, চাল প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা, কার্যক্রম নির্দিষ্টকরণ, পাইলট প্রকল্প ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে৷ প্রাথমিক আলোচনায় এটা দেখা গেছে যে, এফ সি আই কর্তৃক সদর্থক উদ্যোগ গ্রহণ করলে গণবন্টন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় চালের একটা বড় অংশ রাজ্যের মধ্য থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব৷
প্রসঙ্গত ঃ উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বোধজংনগর শিল্পনগরীতে সর্বসিদ্ধি এগ্রোটেক এবং ত্রিপুরেশ্বরী এগ্রো প্রোডাক্টস নামে দুটি বেসরকারী রাইস মিল স্থাপিত হয়েছে যাদের মাধ্যমে সংগৃহীত ধান প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব৷
খাদ্যমন্ত্রী শ্রী সাহা জানান, গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় চাল বর্তমানে এফ সি আই দ্বারা বহিঃরাজ্য থেকে আমদানী করা হয়ে থাকে৷ এই প্রচলিত পদ্ধতিতে পাজ্ঞাব, হরিয়ানা ইত্যাদি রাজ্য থেকে রেল পথে আমাদের রাজ্য অবধি চাল আমদানী এক সময় সাপেক্ষ ও অত্যন্ত ব্যয় বহুল প্রক্রিয়া৷ তদুপরি লামডিং – বদরপুর রেলপথের অত্যন্ত দুর্বল পরিকাঠামোর জন্য বিশেষতঃ বর্ষাকালে প্রায়শই আমদানী প্রক্রিয়া প্রবল ভাবে ব্যাহত হয় এবং রাজ্যবাসীকে যথাসময়ে রেশন দোকানের মাধ্যমে চাল পৌঁছে দিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷
অপরদিকে, একেবারে প্রান্তিক ভৌগোলিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের উৎপাদিত ফসল বহিঃরাজ্যে নিয়ে গিয়ে ন্যায্যদামে বিক্রয় করা কৃষকদের পক্ষে বাস্তবিক ভাবে অত্যন্ত কঠিন কাজ৷ যার ফলে মরশুমী ফলন (ধান/চাল ইত্যাদি) কৃষকগণ অনেক সময়ই কম দামে স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করতে বাধ্য হন৷ তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ফড়ে এবং মজুতদার কৃষক ভাইদের অভাবী বিক্রির সুযোগ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম ভাবে ধান/ চালের দাম বাড়িয়ে তুলতে চেষ্টা করে থাকেন৷
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এই দুটি দীর্ঘকালীন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এফ সি আই-এর মাধ্যমে নূ্যনতম সহায়ক মূল্যে সরাসরি রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ধান সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার প্রশাসনিক সহযোগিতা করা হবে বলেও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এফ সি আই কর্তপক্ষকে দেওয়া হয়েছে৷ এর ফলে এফ সি আই কর্তপক্ষ যেমন রাজ্যের গণবন্টন ব্যবস্থায় বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় চাল সংগ্রহ করতে পারতেন তেমনি রাজ্যের আপাময় কৃষক ভাইদেরও তাদের উৎপাদিত ফসলের যথাযথ দাম পেতে সুবিধা হত৷ খাদ্যমন্ত্রী জানান, আমাদের রাজ্যে প্রতি বছর গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিতরণের জন্য প্রায় ২৭১ লাখ মেঃটন চাল প্রয়োজন এবং রাজ্য সরকার কর্তৃক কৃষিক্ষেত্রের সার্বিক শ্রীবৃদ্ধির জন্যে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণের ফলে উক্ত পরিমানের থেকেও অনেক বেশি চাল বর্তমানে রাজ্যে উৎপাদিত হয়৷ তাই স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করেই এফ সি আই কর্তৃপক্ষ অতি সহজে গণবন্টন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় চাল যোগান দিতে পারেন৷ তদুপরি এই পদক্ষেপ রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রের সার্বিক উন্নতির জন্যও অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারত৷
প্রসঙ্গত ঃ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, রাজ্যে বর্তমানে এফ সি আই-এর একটি ডিভিশনাল অফিস চালু আছে যার কার্যকরী পরিকাঠামো এবং কর্মীসংখ্যা অত্যন্ত সীমিত৷ এই ডিভিশনাল অফিসকে রিজিওনাল অফিসস্তরে উন্নীত না করলে রাজ্যে ধান/চাল সংগ্রহ প্রক্রিয়া সুচারু রূপে সম্পন্ন করা অত্যন্ত কঠিন৷ এই জন্যে বহুদিন ধরেই রাজ্য সরকার আমাদের রাজ্যে একটি এফ সি আই রিজিওনাল অফিস রিজিওনাল অফিস স্থাপনের জন্য এফ সি আই কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের নিকট দাবী জানিয়ে আসছে৷ প্রাথমিক ভাবে এফ সি আই কর্তৃপক্ষ নীতিগত ভাবে এই দাবীর সঙ্গে সহমত হলেও এখন অবধি এই প্রস্তাব বাস্তবায়ণ কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি৷ অথচ, লোকসংখ্যার নিরিখে অনেক ছোট উত্তর-পূর্বের রা্যজ অরুনাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডে ইতিমধ্যেই এফ সি আই রিজিওনাল অফিস স্থাপন করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যের কৃষি ক্ষেত্রের সার্বিক বিকাশ এবং কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার স্বার্থে রাজ্য সরকার অতিসত্ত্বর নূ্যনতম সহায়ক মূল্যে ধান সংগ্রহ শুরু করতে অত্যন্ত উদগ্রীব এবং এর আশু বাস্তবায়নে এফ সি আই কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং আশা করা যাচ্ছে যে, আগামী দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের দাবী অনুযায়ী যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *