নয়াদিল্লি, ১২ ডিসেম্বর (হি.স.) : নোট বাতিলকে পোখরাণ বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করলেন বিশ্ব বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ
তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক এস গুরুমূর্তি| দিল্লির বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনের এক অর্থনৈতিক আলোচনা তিনি বলেন, নোট বাতিলের ঘটনাক্রমকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে একটা বিষয় দেখা যায় তা হল প্রথম এনডিএ সরকারের পোখরাণ বোমা বিস্ফোরণের মতো| পোখরাণে পরমাণু পরীক্ষা পর্যন্ত পুরো বিষয়টিকে গোপন রাখা হয়েছিল| পোখরাণ বোমা বিস্ফোরণের পর সমগ্র বিশ্ব, বিশেষ করে পশ্চিমী দুনীয়া এর বিরোধিতা করেছিল| সেসময় দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একে ধ্বংসাত্বক বলে সরব হয়েছিল| তবে পরে বিশ্ব ভারতে শক্তিশালী মানতে বাধ্য হয়| কারণ তখন ভারত পারমানবিক শক্তিতে শক্তিশালী| ঠিক এমনটাই হয়েছে নোট বাতিলের ক্ষেত্রেও| কারণ মন্ত্রীরাও বিষয়টি জানাতেন না| সারা বিশ্ব ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে চমকে গেছে| আর পোখরাণের মতোই আগামী দশবছরে বিশ্ব আর্থিক দিক থেকে ভারতে শক্তিশালী মানতে বাধ্য হবে | এমনটাই দাবি করেন এ গুরুমূর্তি|
তাঁর মতে এই সিদ্ধান্ত ভারত সরকারের আর পাঁচ থেকে সাত আগে নেওয়া উচিত ছিল | তাহলে মানুষের এত সমস্যা হত না| কারণ এখন নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতেই হতো | এই সিদ্ধান্ত না নিয়ে উপায় ছিলনা| পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, ২০০৪ সালে প্রথম এনডিএ সরকারের সময় কালো টাকা হিসেবে ৫০০ ও হাজারের নোট ছিল ১.৪ লক্ষ কোটি| যেটা ২০১৬ সালে হয়েছে ১৪.৬ লক্ষ কোটি| যদি নোট বাতিল না করা হত তবে ২০২০ সালে এই সংখ্যা পৌঁছাত ৩০ লক্ষ কোটিতে| কালো টাকা আমাদের অর্থব্যবস্থার পঞ্চম অংশ হয়ে গেছিল| আমাদের অর্থ ব্যবস্থার ২০ শতাংশ কালো টাকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল| এই পরিস্থিতিতে কোনও সরকারের কাছেই নোট বাতিল ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না| যদি আপনি আপনার দেশের আর্থিক ব্যবস্থার সংরক্ষণ করতে চান তো এই সিদ্ধান্ত ছাড়া উপাছ ছিল না|
পূর্ববর্তী কংগ্রস সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের সময়কে কংগ্রেস ভারতীয় অর্থনৈতিক অবস্থার সূবর্ণ সময় বলে উল্লেখ্য করে| তবে প্রকৃত বিষয় হয় ওই ছয় বছরেই সব কিছু বিগড়ে গেছে| তিনি বলেন, ১৯৯৯ -০০৪ সালে মধ্যবর্তী সময়ে ৬ কোটি রোজগার তৈরি হয়েছিল কিন্তু পরবর্তী ছয় বছরে অর্থাত্ ২০০৬-২০১০সালের মধ্যে শ্রেফ যেটা ২৭ লাখে সীমাবদ্ধ ছিল| সরাসরি বললে ২০০৬-১০ সময় ছিল রোজগারহীন উন্নতি| অর্থাত্ উন্নতি হয়েছিল, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাজ ছিল না| তাঁর প্রশ্ন তবে এটা কেমন উন্নতি? কারণ এই সময় শেয়ার বাজারে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে| সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২০ শতাংশ| রিয়েল এস্টেটের বৃদ্ধিও ছিল ৩০০ শতাংশের বেশি| আর এসবই হওয়া সম্ভব হয়েছিল কারণ সে সময় দেশের বড় অর্থাত্ ৫০০ এবং হাজার টাকার নোটের ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছিল তাই| সরাসারি বললে এই সময় যে উন্নতি দেখা গেছে তা ছিল এই নগদের বৃদ্ধি |
নোট বাতিল প্রসঙ্গে আলোচনা সভায় একাধিকবার বিরোধীদের খোঁচা দিয়ে গুরুমূর্তি বলেন, রঘুরাম রাজনের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনর থাকাকালীন অবস্থায় নোট বাতিলের মতো কঠিন ও দেশের কল্যাণকারী আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব ছিল না| কারণ রাজন আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, ফেডরেল ব্যাঙ্কের প্রমূখ হওয়ার জন্য নির্বাচিত হওয়ার উপযুক্ত হতে পারেন| তবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জন্য নয়| কারণ হিসেবে তিনি বলেন রাজনের ভারতের সাধারণ মানুষ সম্পর্কে জ্ঞান নেই| আর ভারতকে ভালোভাবে ৱুঝতে না পারলে ভারতীয় অর্থব্যবস্থাকে পথ দেখাবেন কিভাবে ? প্রশ্ন তোলেন গুরুমূর্তি|
এবিষয়ে দেশি বিদেশি বিশেষ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেন যারা ভারতকে বোঝে না এমন লোকেদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিল প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা সাজে না| গুরুমূর্তি পরামর্শ এরা আগে ভারতকে জানুন | পরে ভারতের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিনি নিয়ে আলোচনা করবেন|
নোট বাতিলের জেরে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মারা যাওয়া লোকেদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই পরিসংখ্যান প্রতিদিন দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া লোকেদের সঙ্গে তুলনা করুণ|
নোট বাতিলের সপক্ষে তিনি দেশের একের পর এক জঙ্গি নাশকতার কথা তুলে ধরে বলেন, এক জঙ্গিদের নাশকতা চালাতে বিপুল পরিমান অর্থ খরচ হয় জঙ্গিদের | আর সেই নাশকতার পর দেশকেও বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হতে হয়| এপ্রসঙ্গে মুম্বাই বোমা বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন , ওই হামলায় জঙ্গিদের সম্ভবত ২৫ লক্ষ ডলার খরচ করতে হয়েছিল| তবে ওই হামলার পর ভারতীয় অর্থনীতিতে ১০০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার ক্ষতি হয়েছিল | প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে|
বিশ্বের আর্থনীতিবিদদে সমালোচনার জবাব দিয়ে গুরুমূর্তি আরও বলেন, অর্থনীতিবিদরা প্রথমে উন্নতির কথা বলেন| পরে আর্থিক সংকট এলে বলেন, যে এটা উন্নতির অংশ| এর জন্য উপায় খুঁজতে হবে| কিন্তু ভারতের কালো কাটার কারণে যে আর্থিক সংকট আসত তা নোট বাতিল করে আগেই করা সম্ভব হয়েছে| এখন কম করে আগামী দশ বছর ভারতীয় অর্থব্যবস্থা ঠিক রাস্তায় থাকবে| সর্বশেষে গুরুমূর্তি ফের নোট বাতিলকে পোখরাণ বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, নোট বাতিলের ফলে আগামী দশ বছর ভারতের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির সম্মান করবে বিশ্ব|