নোট বাতিল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে কেন্দ্রকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিলেন মমতা ও কেজরিওয়াল

নয়াদিল্লি, ১৭ নভেম্বর৷৷ নোট বাতিলের জেরে দেশের পরিস্থিতি অচল হয়ে গেছে দাবি করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা

বৃহস্পতিবার দিল্লির আজাদপুর মান্ডিতে জনসভায় সামিল হন মমতা ব্যানার্জি ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ ছবি-টিএমসি ওয়েবসাইট৷
বৃহস্পতিবার দিল্লির আজাদপুর মান্ডিতে জনসভায় সামিল হন মমতা ব্যানার্জি ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ ছবি-টিএমসি ওয়েবসাইট৷

ব্যানার্জি এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল একমঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে৷ তিনদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রীদ্বয়৷
বৃহস্পতিবার দিল্লির আজাদপুর মান্ডিতে জনসভায় সামিল হন মমতা ব্যানার্জি ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ বুধবার রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করার সময় মমতার সঙ্গী ছিল আমআদমি পার্টি৷ এদিনও মোদী সরকারকে চাপে রাখতে দুই মুখ্যমন্ত্রী এক মঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় মুখর হন৷ উভয়ই মোদী সরকারকে তুলোধোনা করেন৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, নোট বাতিলের জেরে সৃষ্টি হওয়া উদ্ভুত পরিস্থিতি দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন৷ কেন্দ্রের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তের জেরে প্রবল দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷ এধরনের বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা দেশবাসীর আগে কখনো হয়নি৷ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তিনদিনের মধ্যে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে৷ অন্যথায় দেশজুড়ে আন্দোলন সংগঠিত করা হবে৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও মমতার সুরেই মোদী সরকারের সমালোচনা করেন৷ তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষ তাঁকে বলেছেন নতুন নোটে কোন লাভ হবে না৷ বরং ২০০০ টাকার নোটে কালোবাজারি ও দুর্নীতি আরো বাড়বে৷ নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে কেজরিওয়াল দেশের বৃহত্তম দুর্নীতি বলেও অভিহিত করেছেন৷
এদিন সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতার প্রশ্ণ, আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন৷ কিন্তু আচ্ছে দিন আসার বদলে মানুষের চোখ দিয়ে জল বেরুচ্ছে৷ তাঁর দাবি, নোট বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষকে অভূক্ত থাকতে হচ্ছে৷ নোটের অভাবে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমান্তে দাঁড়ানোর বহু ট্রাকে সবজি পচে যাচ্ছে৷ তাঁর বক্তব্য, দেশের মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করেন৷ বাকি ৯৬ শতাংশ মানুষ নগদ টাকার মাধ্যমেই জিনিস কেনাবেচা করে থাকেন৷ এদিন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে নানাভাবে খোঁচাও দিয়েছেন৷ মমতা বলেন, এখন যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জরুরি অবস্থার সময়েও তা দেখা যায়নি৷ তাছাড়া একেক দিন একেক রকম নিয়ম করছে সরকার৷ কখনো বলছে সপ্তাহে ৪ হাজার টাকার উধর্বসীমা পর্যন্ত নোট বদলানো যাবে৷ এখন আবার সেটা কমিয়ে এনে করেছে ২ হাজার টাকা৷ এধরনের তুঘলকি সিদ্ধান্তের জেরে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার বলে মমতা দাবি করেন৷
এদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া মুশকিল বলে দাবি করেন৷ তাঁর বক্তব্য, পরিকল্পনা ছাড়া এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দেশবাসীকে দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে৷ বিকল্প ব্যবস্থা না করে চট করে কয়েক ঘন্টার নোটিশে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে দেওয়ায় মহাফ্যাসাদে পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷ দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাঙ্কে এবং এটিএম কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টাকা তুলতে হচ্ছে দেশবাসীকে৷ কখনো কখনো ব্যাঙ্ক কিংবা এটিএমে টাকা ফুরিয়ে গেলে মানুষের অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে৷ সমস্ত এটিএমে এখনো নতুন নোট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ যে উদ্দেশ্যে মোদী সরকার এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কাজে আসবে না বলে দাবি করেন কেজরিওয়াল৷ তাই তিনিও সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের চরম সীমা বেঁধে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *