নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ নভেম্বর৷৷ এক সময়ের পোড় খাওয়া সিপিএম নেতা রাজ্জাক মোল্লা এখন তৃণমূলের বিধায়ক

হিসাবে রাজ্যে এসে তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দাবি করেন ২০১১ সালের আগের ১০ বছর পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম যে রাজত্ব কায়েম করেছিল তা হিটলারকেও হার মানিয়েছে৷ জ্যোতি বসুর শাসনে পশ্চিমবঙ্গ হয়ত ভালোই ছিল, কারণ বুদ্ধদেবের জমানায় যে রূপ নিয়েছিল সিপিএম তাতেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাদের উৎখাত করতে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর মতে, সিপিএমে ল্যাং মারামারির খেলায় দলটিতে ক্ষয় ধরেছে, যা এখন অবক্ষয়ের রূপ নিয়েছে৷ তিনি জোর গলায় দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম আর কোনদিনও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না৷ এবিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায় দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম শ্মশানে গেছে৷ এমনকি দলটির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও হয়ে গেছে৷ তাঁর আরো দাবি, এরাজ্যেও সিপিএমের শ্মশানযাত্রা শুরু হয়ে গেছে৷ রবিবার বড়জলা সুকল মাঠে দলীয় প্রার্থী প্রকাশ চন্দ্র দাসের সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় মুকুল রায় এবং রাজ্জাক মোল্লা উভয়েই রাজ্যে পরিবর্তনের লক্ষ্যে এভাবেই শাসকদলের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন৷
রাজ্জাক মোল্লা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শিল্প কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সিপিএমের৷ তাই এখানে শিল্প আনতে শাসকদলের কান্ডারীরা ভয় পাচ্ছেন৷ তাই তিনি মনে করেন, এরাজ্যে সিপিএম যতদিন থাকবে শিল্পে স্বয়ম্ভর এই রাজ্য ততদিন হতে পারবে না৷ এদিন তিনি জানান, সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামে কৃষকদের জমি অধিগ্রহণকে ঘিরেই সিপিএমের সাথে তাঁর মতানৈক্য দেখা দেয়৷ বিরোধ তখন থেকেই শুরু হয়েছিল৷ অবশেষে সিপিএমের নীতি মেনে নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন দলনেত্রীর কাছে৷ তাঁর দাবি, সারা দেশে নেত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জিই সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য৷ আর এই কারণেই তিনি মনে করেন তৃণমূলই এরাজ্যে পরিবর্তন আনতে পারবে৷ তার পেছনে অবশ্য যুক্তিও রয়েছে৷ রাজ্জাক মোল্লা বলেন, এই রাজ্যে সিপিএমের শাসনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে৷ নারী নির্যাতন, কর্মচারী বঞ্চনা, এবং সন্ত্রাস এইরাজ্যে রের্কড মাত্রা ছাড়িয়েছে৷ তিনি মনে করেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য পুলিশ, কর্মচারীকুল, শিক্ষকমহল কেউই সিপিএমের কথা শুনবে না৷ এর মাধ্যমেই রাজ্যে পরিবর্তন আসবে বলে তিনি দাবি করেন৷ সিপিএমের পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধেও সুর চড়িয়েছেন রাজ্জাক মোল্লা৷ সাম্প্রদায়িকতার আড়ালে বিজেপি এদেশে ধর্মীয় বিভাজন করতে চাইছে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ শুধু তাই নয়, বিজেপি সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি আঘাত আনছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন৷ কারণ, কালো টাকা রোধে বিজেপি যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা হটকারি বলে তিনি কটাক্ষ করেছেন৷
তৃণমূল সর্বভারতীয় সভাপতি মুুকুল রায় এদিন দাবি করেন, সিপিএম আগামীদিনে বিরল দলে পরিণত হবে৷ কারণ, কমিউনিস্টরা বিভাজনের মুখে রয়েছে৷ ১৯৬২ সালে তাদের মধ্যে যে বিভাজন দেখা দিয়েছিল তার থেকেও বড় আকারে টুকরো হবে বলে মুকুলবাবু দাবি করেন৷ তাঁর যুক্তি, জনগণের সাথে যদি যোগাযোগ না থাকে তাহলে মানুষ বেশিদিন তাদের কাছে রাখেন না৷ তার বদলে ছঁুড়ে ফেলে দেন৷ সিপিএমকেও এরাজ্যের মানুষ ছঁুড়ে ফেলে দেবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷ তিনি এও দাবি করেন, দুটি আসনে উপনির্বাচনে সিপিএমকে ধাক্কা দিতে পারলে আগামী ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে তা প্রতিফলিত হবে৷ আর মমতা যেভাবে গুটি গুটি পায়ে এরাজ্যের দিকে এগুচ্ছে তাতে সিপিএমের শ্মশানযাত্রা শুরু হয়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন৷