BRAKING NEWS

কেন্দ্র বিরোধী জেহাদে জল ঢেলে দিয়ে নীতি আয়োগের সদস্য ডঃ বিবেক দেবরায় জানালেন হিসেব না দিলে ত্রিপুরা বাড়তি সহায়তা পাবে না

৷৷ সন্দীপ বিশ্বাস ৷৷
আগরতলা, ২৪ সেপ্ঢেম্বর৷৷ বঞ্চনার অভিযোগ তুলে রাজ্যগুলি কেন্দ্র বিরোধী যে জেহাদ ঘোষণা করে থাকে তাতে জল ঢেলে দিলেন নীতি আয়োগের সদস্য ডঃ বিবেক দেবরায়৷ তাঁর সাফ কথা, রাজ্য হিসেব না দিলে কেন্দ্র বাড়তি সহায়তা দিতে পারবে না৷ ত্রিপুরা সরকার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪৭৫ কোটি এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১৬ কোটি টাকার এখনও পর্যন্ত কোন হিসেব দেয়নি৷ এমনকি যোজনা কমিশন মুছে গিয়ে নীতি আয়োগ গঠন হওয়ায় এই রাজ্য সহ কোন রাজ্যই কি পরিমান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তাও সুস্পষ্টভাবে হিসেব দিয়ে জানায় নি৷ যদি নীতি আয়োগের কাছে হিসেব কষে জানানো হয় ক্ষতির পরিমান

নীতি আয়োগের সদস্য ডঃ বিবেক দেবরায়৷ ছবি নিজস্ব৷
নীতি আয়োগের সদস্য ডঃ বিবেক দেবরায়৷ ছবি নিজস্ব৷

তাহলে নিশ্চয়ই সহায়তা করা হবে৷ এরই পাশাপাশি তিনি জানান, সংবিধান মোতাবেক রাজ্যগুলিকে অর্থ দেওয়ার এক্তিয়ার কেবলমাত্র অর্থ কমিশনের রয়েছে৷ নীতি আয়োগের এবিষয়ে কোন এক্তিয়ার নেই৷ নীতি আয়োগ কেবলমাত্র সুপারিশ করতে পারে৷ আর রাজ্যগুলিকে অর্থ বরাদ্দ করার এক্তিয়ার যোজনা কমিশনেরও ছিল না৷ অর্থ কমিশন রাজ্যগুলিকে বরাদ্দ অর্থ ঠিক করে দিত৷ যোজনা কমিশনের হাত দিয়ে সেই অর্থ রাজ্যগুলিকে বিতরণ করা হত৷ গতকাল এখানে রাজ্য অতিথিশালায় এক সাক্ষাৎকারে নীতি আয়োগের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানান ডঃ বিবেক দেবরায়৷
তাঁর মতে, চতুর্দশ অর্থ কমিশন কেন্দ্রীয় শেয়ার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪২ শতাংশ করে রাজ্যগুলিকে দিয়েছে৷ এছাড়া কেন্দ্রীয় প্রকল্পে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি আগের মতোই ৯০ঃ১০ অনুপাতে অর্থ পাচ্ছে৷ ফলে, কেন্দ্রীয় শেয়ার থেকে যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ রাজ্যগুলি পাচ্ছে তা খরচ কোথায় হবে সেই পরিকল্পনা কোথায় রাজ্যের কাছে, প্রশ্ণ করেন তিনি৷ তাঁর সাফ কথা, সংবিধান মোতাবেক প্রত্যেক রাজ্যের পরিকল্পনা কমিশন থাকা উচিৎ৷ নীতি আয়োগ গঠিত হওয়ার পর রাজস্থান সরকার নিজস্ব পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেছে৷ এছাড়া আর কোন রাজ্যই এবিষয়ে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেনি৷ তাহলে, অর্থ কমিশন থেকে প্রাপ্ত অর্থ কিভাবে খরচ করবে রাজ্যগুলি সেক্ষেত্রে কোন পরিকল্পনাই তো তাঁদের কাছে নেই৷
তাঁর কথায়, আগে পরিকল্পনা কমিশনের দ্বারস্ত হয়ে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের দর কষাকষি করতে হতো৷ তখন একাধিক মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন কেন্দ্রের কাছে কেন আমাদের হাত পেতে চাইতে হবে৷ এখন নীতি আয়োগ হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীদের আর হাত পাততে হচ্ছে না৷ অর্থ কমিশন থেকে সরাসরি রাজ্যগুলি অর্থ পেয়ে যাচ্ছে৷ তা সত্বেও কিসের জন্য এখনও সমালোচনা হচ্ছে সেটাই পরিস্কার নয় বলে ডঃ দেবরায় বিস্ময় প্রকাশ করেন৷
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিষয়ে অযথা কেন রাজ্যগুলি সমালোচনা করছে সেটাই বোধগম্য নয় বলেও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, আগে পরিকল্পনা কমিশন কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি স্থির করে দিত৷ কোন রাজ্যে কি প্রকল্প চলবে, কত টাকা বরাদ্দ করা হবে এসমস্ত কিছু৷ কিন্তু এখন নীতি আয়োগের অধীন তিনটি সাব-গ্রুপ যেখানে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা এর সদস্য, তাঁরাই সমস্ত কিছু নির্ধারণ করছে৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্প, স্বচ্ছ ভারত এবং দক্ষতা বিকাশ এই তিনটি সাব-গ্রুপ রয়েছে নীতি আয়োগে৷ প্রতিটি সাব-গ্রুপে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনভেনার, এছাড়া অন্যরা সদস্য৷ ডঃ দেবরায় বলেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীও একটি সাব-গ্রুপের সদস্য৷ তিনি দক্ষতা বিকাশ নিয়ে যে সাব-গ্রুপটি রয়েছে তার সদস্য৷ ডঃ দেবরায় এই সাব-গ্রুপগুলির কাজকর্ম ভূমিকা বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি কোন রাজ্য কিভাবে পাবে এবং এই প্রকল্পগুলি চালাতে রাজ্যগুলির কি পরিমান অর্থের প্রয়োজন এসমস্ত রিপোর্ট সাব-গ্রুপ তৈরি করে নীতি আয়োগের কাছে জমা দিয়েছে৷ এর ভিত্তিতেই নীতি আয়োগ অর্থ কমিশনের কাছে সুপারিশ করেছে৷ তিনি জানান, ৩০টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প কোন কোন রাজ্যের জন্য উপকারি হবে এবং এর জন্য কি পরিমান অর্থের প্রয়োজন তা মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে গঠিত মুখ্যমন্ত্রীদের কমিটি স্থির করেছে৷ নীতি আয়োগ তাতে নাক গলায় নি৷ নীতি আয়োগ কেবল ঐ রিপোর্টের ভিত্তিতে অর্থ কমিশনের কাছে অর্থ মঞ্জুরির সুপারিশ করেছে৷ গত বছর অক্টোবরে তিনটি সাব-গ্রুপের রিপোর্ট নীতি আয়োগের কাছে জমা পড়েছে৷ ঐ রিপোর্টগুলি নীতি আয়োগের ওয়েবসাইটেও রয়েছে৷ ফলে, এখানে লুকোচুরি করার কোন স্থান নেই৷ তবুও কেন নীতি আয়োগ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সে বিষয়ে ফের বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি৷
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, সংবিধানের সপ্তম তপশিলে নির্দিষ্টভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের কি কি করা উচিৎ৷ রাজ্যগুলির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে অর্থ কমিশনের ফর্মূলা মোতাবেক হয়ে থাকে৷ তাঁর কথায়, তাতে আপেক্ষিক অর্থে কোন রাজ্য বেশি পায়, আবার কোন রাজ্য কম পায়৷ তবে, যদি কোন রাজ্য মনে করে থাকে অর্থ কমিশন তাদের অর্থ কম দিয়েছে, তাহলে সুনির্দিষ্টভাবে হিসেব দিলে নিশ্চয়ই সহায়তা করা হবে৷ তিনি দাবি করে বলেন, সিকিম, মেঘালয় সাহায্য চেয়েছে৷ নীতি আয়োগ তাদের সাহায্য করেছে৷ তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, কোন রাজ্য চাইলে তবে তো সাহায্য করা সম্ভব৷ কোন কিছু না বললে কিভাবে তাদেরকে সহায়তা করা সম্ভব, প্রশ্ণ তাঁর৷ তিনি আরো স্পষ্ট করে দেন, নীতি আয়োগ চায় না এর মাধ্যমে রাজ্যগুলিকে অর্থ বিতরণ করা হউক৷ এজন্যই দীর্ঘদিনের দাবি মোতাবেক নতুন পন্থা বের করা হয়েছে, যাতে রাজ্যগুলি উপকৃত হয়৷
তবে, রাজ্যগুলি কিভাবে কাজ করছে, সবকিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কি না সেদিকে তীক্ষ্ন নজর রাখাই নীতি আয়োগের প্রধান কাজ সে কথা তিনি মনে করিয়ে দেন৷ তাঁর সাফ কথা, যে খাতে রাজ্যগুলিকে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে সেগুলি কিভাবে খরচ হচ্ছে তার হিসেব রাজ্যগুলিকে পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে দিতে হবে৷ পাশাপাশি কাজের মান কিরকম, জনস্বার্থে কতটা ব্যবহৃত হচ্ছে সমস্ত কিছু এখন নীতি আয়োগের নজরে থাকবে৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, ১৫ বছর বাদে ভারতবর্ষের স্থিতি কি হওয়া উচিৎ নীতি আয়োগ সেটাও দেখছে৷
এদিকে, কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য রাজ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো৷ ডঃ দেবরায় স্পষ্ট বলেন, টাকা থাকলে যত খুশি চাকরি দিন৷ তাতে ভারত সরকারের কোন আপত্তি নেই৷ তবে টাকা কোথায়? এরও পথ তিনি বাতলে দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় শেয়ার থেকে যে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ মিলেছে সেই টাকায় রাজ্যগুলি চাকুরি দিতে পারেন৷ আলাদাভাবে কেন্দ্র থেকে চাকুরির জন্য কোন অর্থ দেওয়ার এখন আর সুযোগ নেই৷
আগরতলায় ফিকি আয়োজিত কানেক্ট নর্থ-ইস্ট সামিটে বঞ্চনা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য যে তরজার লড়াই শুরু হয়েছিল, এদিন নীতি আয়োগের সদস্য ডঃ বিবেক দেবরায়ের কথায়, রাজ্য সরকারগুলি রাজনৈতিক স্বার্থেই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে রাখে৷ সম্পর্কের তিক্ততার জন্য রাজনৈতিক দলগুলিই দায়ী তা এদিন তিনি প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ ফলে, আগামী দিনে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ফিরিস্তি তুলে ধরে রাজনীতি করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *