পৃথক রাজ্যের দাবীদারদের জঙ্গীপনা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা

হিংসার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করল সিপিএম
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ আগষ্ট৷৷ মঙ্গলবার রাজধানী আগরতলা শহর যে রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে তার জন্য সিপিএম CPIMদায়ী করেছে আইপিএফটি এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে৷ এদিন বিকালে সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিজন ধর এক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, এদিনের যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে তা আইপিএফটি পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই সংঘটিত করেছে৷ আইপিএফটির সাথে এই হিংসার মদত যোগিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ রাজ্যের শান্তি সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষ্যেই এদিন হামলা হুজ্জতি চালানো হয়েছে৷ বিজনবাবু বলেন, সিমনা তমাকারি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি আইপিএফটিকে সহায়তা করার জন্যই৷ তিনি আরও অভিযোগ কেরেছেন, আইপিএফটির সভাপতি এন সি দেববর্মা দলীয় কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে উস্কানীমূলক বক্তব্য রাখেন৷ তারই প্রেক্ষিতে এই হিংসার ঘটনা ঘটেছে রাজধানী আগরতলায়৷ সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাস বলেন, এদিন আইপিএফটি রাজধানীতে হামলা হুজ্জতি চালানোর জন্য পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল৷ তাই তারা স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে গাড়িতে করে প্রচুর পরিমানে রড ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছিল৷ যা নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা উদ্ধার করেছে৷ এদিন, নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন৷ মিছিলে অংশগ্রহণকারী আইপিএফটি কর্মী সমর্থকদের নিজ নিজ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ত্রিপুরা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন এবং কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে৷ বিজন ধর রাজ্যের সমস্ত অংশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য৷ কোন ধরনের প্ররোচনার ফাঁদে পা না দিয়ে আইন শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখার জন্য৷
ঘটনা সিপিএমের পূর্ব পরিকল্পিত বলল তৃণমূল
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ আগষ্ট৷৷ রাজধানী আগরতলায় মঙ্গলবার আইপিএফটির মিছিলকে কেন্দ্র করে যে হিংসার tmcঘটনা ঘটেছে তা শাসক দল সিপিএমের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিজন ধর সাংবাদিক সম্মেলন করে এদিনের হিংসার ঘটনার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করার পরপরই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, এটি সিপিএমের রাজনৈতিক খেলা৷ আগরতলা সহ গোটা রাজ্যের জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এদিন হিংসার বাতাবরণ তৈরী করেছে৷ তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্য আরক্ষা প্রশাসন এদিন সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে৷ একটি রাজনৈতিক দলের মিছিলের পরিপ্রেক্ষিতে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কাকে সামনে রেখে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন৷ কিন্তু স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তরফ থেকে এই বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেয়নি৷ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে সিপিএম৷ রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে রাজ্যে এক অস্থীর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছে সিপিএম৷ আশীষবাবুর দাবী গত ৯ আগষ্ট আগরতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের যে ঐতিহাসিক সমাবেশ হয়েছে তাতে সিপিএমের পায়ের তলার জমি সরে গিয়েছে৷ দিশাহীন হয়ে পড়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব৷ তাই তৃণমূল কংগ্রেসকে জড়িয়ে নানা ধরনের অপ্রচার করে চলেছে৷ রাজাধানী আগরতলা শহরে এদিনের যে হিংসাশ্রয়ী ঘটনা ঘটেছে তার জন্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে দায়ী করে তৃণমূল কংগ্রেস দাবী করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ৷ একই সঙ্গে এদিনের ঘটনার জন্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবী জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ এদিকে, এদিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এক হিংসার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ এই হিংসা ভ্রাতৃঘাতী রূপ যাতে না নিতে পারে সেজন্য আগামীকাল তথা বুধবার আগরতলায় শান্তি মিছিল সংঘটিত করবে তৃণমূল কংগ্রেস৷
ব্যর্থতার নজির গড়ল প্রশাসন, জানাল বিজেপি
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ আগষ্ট৷৷ একটি রাজনৈতিক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার আগরতলায় যে অপ্রীতিকর BJP LOGOঘটনা ঘটে গেছে তা সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরীর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ্৷ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যখন মিলেমিশে জীবনযাপন করতে চাইছে তখন এমন ঘটনা চিন্তাজনক৷ পূর্বনির্দ্ধারিত কর্মসূচী থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহনের পরিবর্তে প্রশাসন ব্যর্থতার চরম নজির এদিন স্থাপন করল বলে মন্ত্যব করেছে বিজেপি৷ দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এদিন বলা হয়েছে, চোখের সামনে অশান্তি ঘটতে দেখেও নীরব থেকেছে পুলিশ৷ টিভি’র পর্দায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তার ছবি দেখে সাধারন মানুষের মনে সন্দেহ তৈরী হয়েছে৷ বলতে দ্বিধা নেই সময়মতো ব্যবস্থা নিতে অশান্তির ব্যাপকতা আটকানো যেত৷ বিজেপি জাতি-জনজাতি উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে যেকোন মূল্যে শান্তিও ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষার জন্য আবেদন জানাচ্ছে৷ ক্ষমতার স্বার্থে মানুষে মানুষে বিভাজনের যেকোন চক্রান্ত ব্যর্থ করতেও আবেদন জানায়৷ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকা এক্ষেত্রে যথেষ্ট সন্দেহজনক৷ কারন কিছুদিন আগে থেকেই শাসকগোষ্ঠীর বিভিন্ন নেতা অশান্তির ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন৷ তাদের ইঙ্গিতবহ বক্তবোর জন্য সাধারন মানুষের মনে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছিল৷ কারন ১৯৮০ সালের ভয়াবহ স্মৃতি তাদের মন থেকে আজো মুছে যায়নি৷ শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ঘটনায় সেবছর ভীষণ ক্ষয়ক্ষতি হয় যা আজ পর্যন্ত এরাজ্যের মানুষের মনে রেখাপাত করে৷ শাসকদল এবং সরকারের ভূমিকা তখনও সন্দেহজনক ছিল৷ যার ফলে দাঙ্গার দোষীদের চিহ্ণিত করতে কোন উদ্যোগ সরকার নেয়নি৷ জনগণের তরফে প্রবল দাবি থাকা সত্ত্বেও তার তদন্ত করা হয়নি৷ আজকের ঘটনা ঘিরেও শাসকদের ভূমিকায় সন্দেহ দানা বাঁধছে৷ সারাদিন রাজধানীতে আতঙ্ক বিরাজ করলেও প্রশাসন প্রায় দর্শকের ভূমিকা পালন করে৷ সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেনি৷ উল্টো বিজেপি’র মতো রাষ্ট্রবাদী দলকে বদনাম করার অশুভ চক্রান্ত করা হচ্ছে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে যা এককথায় নিন্দনীয়৷
বিজেপি মনে করে রাজ্য সরকার তার সাংবিধানিক দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেনা৷ তার ব্যর্থতার জন্যই এমন ঘটনা ঘটতে পারলো৷ একমাত্র বিচার বিভাগীয় তদন্ত দিলেই সত্য বেড়িয়ে আসতে পারবে৷ মনে রাখা দরকার, কেন্দ্রে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের সময় গৃহীত একাধীক উদ্যোগের ফলেই ত্রিপুরার মানুষ উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পেরেছে৷ সীমান্তে কাটাতাড়ের বেড়া, একের পর এক আইআর ব্যাটালিয়ানের অনুমোদন, পুলিশের আধুনিকীকরন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করে বাজপেয়ীজির সরকার রাজ্যকে অশান্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটা সঠিক দিশা দেখিয়েছিল৷
নরেন্দ্রী মোদিজির নেতৃত্বে বর্তমান সরকারও যেভাবে ত্রিপুরার উন্নয়নে একটার পর একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে তাতে জাতি-জনজাতি উভয় অংশের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হওয়ার কথা৷ শহরের পাশাপাশি গ্রাম-পাহাড়ের জনতার মনেও তাই নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে৷ এই অবস্থায় মানুষকে চিরদিন বিপিএল বানিয়ে রাখতে আগ্রহীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে৷ জনগণের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করার চক্রান্ত এই আতঙ্কেই বহিপ্রকাশ৷ মানুষকে তাই সতর্ক থাকতে হবে৷
বিজেপি প্রদেশ সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব বিষয়টি আজ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের গোচারে নিয়েছে৷ তিনি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দৃষ্টিতেও নিয়েছেন সম্পূর্ণ ঘটনা৷ আগামীকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে গিয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানাবেন বিজেপি সভাপতি শ্রী দেব৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *