বিশেষ প্রতিনিধি, নয়াদিল্লী, ৩ আগষ্ট৷৷ কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলির সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে রাজ্যসভায় পাস হয়ে গেল কেন্দ্রের বহু প্রতিক্ষিত পণ্য পরিষেবা কর তথা জিএসটি বিল৷ বিষয়টিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে এই প্রেক্ষিতে সব দলকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ বুধবার সংবিধান বিল, ২০১৪ (১২২ তম সংশোধনী)-কে সংসদের উচ্চকক্ষ অনুমোদন করে৷ এদিন সাত ঘন্টা ঘরে বিতর্কের পর ভোটাভুটি হয়৷ বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ২০৩টি৷ বিরুদ্ধে একটিও ভোট পড়েনি৷ বিষয়টিকে কেন্দ্রের নৈতিক জয় হিসেবেই উল্লেখ করেছে রাজনৈতিক মহল৷ কারণ দীর্ঘদিন ধরেই এই বিলের বিরোধীতা করে আসছে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি৷ যার ফলস্বরূপ প্রায় দুই বছর ধরে আটকে ছিল জিএসটি৷ শেষে বিরোধীদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করে তাদের সমর্থন আদায় করতে সমর্থ হয় বিজেপি৷ এমনকি কংগ্রেসের দাবি মেনে বিলে সংশোধনী আনে মোদি সরকার৷ সেই অনুযায়ী ১ শতাংশ উৎপাদন কর বাতিল করা হয়৷ পাশাপাশি, রাজ্যগুলির যে আর্থিক ক্ষতি হবে তা পাঁচ বছরের জন্য পূরণ করার মতো বিষয়গুলিকে আরও পরিস্কার করে উল্লেখ করা হয় সংশোধীত বিলে৷
সারা দেশের একক পণ্য ও পরিষেবা কর চালু হলে প্রথম পাঁচ বছর রাজ্যগুলির আর্থিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি মেটাবে৷ পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশ কিছু রাজ্য ইতিমধ্যেই মেনে নিয়েছে বলে অরুণ জেটলি জানিয়েছে৷ কিন্তু এআইএডিএমকে ও সমাজবাদী পার্টি সহ কয়েকটি দলের বিরোধীতা এখনও জারি রযেছে৷ কংগ্রেসের দাবী জিসেটি সর্বোচ্চ সীমা ১৮ শতাংশে বেঁধে দিতে হবে৷ যদিও এই দাবি নিয়ে মন্ত্রিসভা অবশ্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷ এদিন কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন, কংগ্রেস কখনওই জিএসটির বিরোধীতা করেনি৷
এদিন বিলের সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, জিএসটি বিল রাজ্যগুলির রাজস্ব আদায় বাড়াবে৷ একই সঙ্গে কেন্দ্রেরও রাজস্ব আদায় বাড়বে৷ সব কর একই ছাতার তলায় এলে কর ফাঁকি দেওয়ার মতো দুর্নীতিও রোখা যাবে৷ প্রসঙ্গত, সমস্ত পরোক্ষ করকে এক ছাতার তলায় আনা হবে জিএসটিতে৷ কেন্দ্র ও রাজ্যের পৃথক জিএসটি কাঠামো গঠন করা হবে৷ ফলে সেন্ট্রাল এক্সাইস ডিউটি, পরিষেবা কর সহ যাবতীয় প্রত্যক্ষ করের পরিবর্তে থাকবে একটাই কর, যার নাম পণ্য ও পরিষেবা কর৷
এদিকে, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আশ্বাস দিয়েছেন, জিএসটির প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর তেমন পরবে না৷ সেইসঙ্গে রাজ্যগুলির কোন অসুবিধাও হবে না৷ অন্যদিকে রাজ্যসভায় পেস করা জিএসটি বিলের উপর আলোচনা শুরু হয়েছে বুধবার৷ নতুন কর ব্যবস্থার দরুণ কোন রাজ্য সরকারকেই অসুবিধার মুখে পরতে হবে না৷ রাজ্যগুলির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷ জিএসটি বিলে রাজনৈতিক সহমত তৈরীর জন্য সরকার কিছু সংশোধন করেছে বিলে৷ যে সংশোধন আনা হয়েছে সেগুলির মধ্যে রয়েছে, এক শতাংশ অতিরিক্ত কর লাগবে না৷ কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে বিবাদকে মিটানোর জন্য এমন ব্যবস্থা করা হবে যেখানে রাজ্য এবং কেন্দ্র একে অপরের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷ জিএসটি কার্যকর হওয়ার শুরু থেকে রাজ্যগুলিকে পাঁচ বছর পর্যন্ত পুরোপুরি অনুদান মিলবে৷
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, জিএসটি এর দর স্থীর করার দায়িত্ব জিএসটি কাউন্সিলের এবং এই সম্পর্কে শুধু রাজ্যই নয় সাধারণ জনহিতের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হবে৷ একই সঙ্গে দর স্থীর করার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির এম্পাওয়ার্ড কমিটির প্রস্তাবের প্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ এদিকে, এই বিল রাজ্যসভার পর লোকসভায় পেশ করা হবে৷ সংসদের দুটি কক্ষের সম্মতির পর এটি কমপক্ষে ১৫টি রাজ্যের বিধানসভায় অনুমোদিত করতে হবে৷ তারপর রাষ্ট্রপতি মঞ্জুরী দেবেন এবং তারপর জিএসটি কাউন্সিল গঠন করা হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে আগামী বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে নতুন কর ব্যবস্থা চালো করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷