নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ জুলাই৷৷ নিমিষে শেষ হয়ে গেল দিল্লী ট্রেনের সমস্ত টিকিট৷ এসি কামরা, এমনকি স্লিপার কামরার টিকিটও অপেক্ষমান তালিকায়৷ রেলের দাবি অনুসারে শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও মূলত শনিবার সকাল থেকেই পুরোদমে যাত্রীরা ক্রয় করতে পারেন রিজার্ভেশন কামরার আসন৷ সকাল আটটা থেকে এদিন টিকিট কাউন্টার খুলতেই যাত্রীদের ভীড় ছিল লক্ষ্য করার মতো৷ দুপুরের আগেই স্লিপার কামরার সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে যায়৷ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এসি কামরারও টিকিট শেষ হয়ে যায়৷ রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সরাসরি দিল্লী যাওয়ার যাত্রী সংখ্যাও নেহাত কম নয়৷ তবে, গুয়াহাটি পর্যন্ত সর্বাধিক টিকিট বিক্রি হয়েছে৷ সূচনার দিনেই রেলযাত্রী করে ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী হতেই যাত্রীরা এই সুযোগ গ্রহণ করেছেন বলে অনেকটা ধারণা করা হচ্ছে৷ তবে, রেলওয়ে আধিকারীকরা অবশ্য সেই কথা পুরোপুরি মানতে চাইছেন না৷ তাদের মতে ত্রিপুরায় দূরপাল্লার যাত্রীসংখ্যা আগামীদিনেও নেহাত কম হবে না৷ যাত্রীদের রেল ভ্রমণের প্রতি ঝোক যেভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে দূরপাল্লার ট্রেনে ভীড়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রেলওয়ে আধিকারীকরা৷
আট আগষ্ট থেকে পুরোদমে ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক) চলতে শুরু করবে৷ ঐদিন দিল্লী থেকে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে ট্রেনটি৷ অনুরূপ ১১ আগষ্ট আগরতলা থেকে যাত্রী নিয়ে দিল্লীর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস৷ রেলওয়ে কর্তাদের মতে তখন থেকে ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেসে কামরার সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ এদিকে, দিল্লী পর্য্যন্ত স্লিপার কামরায় ভাড়া ৯৮৫ টাকা৷ অন্যদিকে, এসি থ্রি টিয়ার ২, ৪৮০ টাকা এবং এসি টু টিয়ারের বাড়া ৩, ৫৬৫ টাকা৷ ৪৮ ঘন্টার এই সফরে দিল্লীর আনন্দবিহার পর্যন্ত ১৭টি স্টেশনে দাঁড়াবে ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস৷ রাজ্যে আগরতলা থেকে রওয়ানা হয়ে আমবাসা এবং ধর্মনগরে দাঁড়াবে ট্রেনটি৷
এদিকে, রবিবার সকাল দশটায় রেলমন্ত্রী সুরশে প্রভাকর প্রভু আগরতলায় এসে পৌঁছাবেন৷ বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মহম্মদ মুজিবুল হক বেলা পৌণে এগারটা নাগাদ আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে রাজ্যে আসবেন৷ আজ তিনটি কামরা নিয়ে একটি স্পেশাল ট্রেনে করে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের প্রধান কার্য্যালয় থেকে জেনারেল ম্যানেজার সহ বেশ কয়েকজন আধিকারীক এখানে এসেছেন৷
উল্লেখ্য, ৩১ জুলাই রাজ্যবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আগরতলা-দিল্লী ব্রডগেজ যাত্রীবাহী রেল উদ্বোধন হতে চলেছে৷ এ উপলক্ষ্যে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনে দুপুর ১২টায় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু ১৪০১৯/১৪০২০ আগরতলা-আনন্দ বিহার, ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেসের (সাপ্তাহিক) উদ্বোধন করবেন৷ একই সাথে আগরতলা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ ব্রডগেজ রেল লাইনের শিলান্যাস করবেন ভারতের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু এবং বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক৷ ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ উপস্থিত থাকবেন ভারতীয় রেলের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই, রাজ্যের রাজস্ব, পূর্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী বাদর চৌধুরী, রাজ্যের বিদ্যুৎ, পরিবহন, নগরোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী মানিক দে, রাজ্যসভার সাসদ ঝর্ণা দাস বৈদ্য, লোকসভার সাংসদ শঙ্কর প্রসাদ দত্ত ও জীতেন্দ্র চৌধুরী এবং বিধায়ক দিলীপ সরকার৷ স্মরণীয় এই অনুষ্ঠানে সাক্ষী হতে ইতিমধ্যেই মানুষের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার হয়েছে৷
এদিকে, ব্রডগেজ রেল পরিষেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির বিষয়ে আজ দুপুরে মহাকরনে বৈঠক হয়৷ বৈঠক পরিবহণ দপ্তরের মন্ত্রী মানিক দে, মুখ্যসচিব যশপাল সিং, পুলিশের মহানির্দেশক কে নাগরাজ, তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরেরর বিশেষ সচিব এম এল দে, পরিবহণ সচিব সমরজিৎ ভৌমিক, পশ্চিম জেলার জেলা শাসক মিলিন্দ রামটেকে, পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার, এশ পি ট্রাফিক সহ রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷
বৈঠকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা দর্শকদের বসার ব্যবস্থা, পানীয় জলের ব্যবস্থা যানবাহনের ব্যবস্থা, পার্কিং প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকগণ জানান ইতিমধ্যেই সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে৷