নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ জুলাই৷৷ সম্প্রতি বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের গতিবিধি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ণ এপাড়
ওপাড়ের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী৷ আইএসআইএস (আইসিসি) জঙ্গী সংগঠনের কোন অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই বলে দাবি করা হলেও বিজিবি এবং বিএসএফ সন্ত্রাসবাদীদের অস্তিত্বকে খাটো করে দেখছে না৷ স্বাভাবিকভাবেই সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তা বাড়িয়েছে ভারত-বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রের৷ সন্ত্রাসী সংগঠনের গতিবিধি বাংলাদেশে থাকলেও আইএসআইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর কোন অস্তিত্ব সে দেশে নেই বলে দাবি করেন বিজিবি’র (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) চিটাগাং রিজিওন্যাল কমান্ডার এডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহম্মদ হাবিবুল করিম৷ বুধবার শালবাগানস্থিত বিএসএফ ত্রিপুরা শাখার সদর কার্যালয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বিজিবি’র রিজিওন্যাল কমান্ডার এডিজি এই দাবি করার পাশাপাশি জানান, ত্রিপুরায় সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বিএসএফে’র সাথে মিলিত হয়ে কাজ করবে বিজিবি৷ আগরতলায় গত ২৪ জুলাই থেকে চারদিনের বিএসএফ এবং বিজিবি’র আইজি পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ তাতে, সন্ত্রাস, বাংলাদেশে আইএসআইএস গতিবিধি, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া, সীমান্ত অপরাধ, গরুপাচার, চুরি এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ এই আলোচনা দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত সেনার আইজি স্তরের আধিকারিকরা সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সমস্ত সমস্যা সমাধানে কাজ করবে বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন৷
বিএসএফ ও বিজিবি সীমান্তে আরো বিওপি নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ভারত ৫০৮টি নতুন বিওপি নির্মাণ করবে এবং বাংলাদেশ আরো ৫০টি বিওপি নির্মাণ করবে৷ ইতিমধ্যে ভারতের অংশে ১২০০টি বিওপি রয়েছে এবং বাংলাদেশের অংশে ৩৫টি বিওপি রয়েছে৷ বাংলাদেশের অংশে যে ৫০টি বিওপি নির্মাণ করা হবে এর মধ্যে ত্রিপুরা এবং মিজোরাম সীমান্ত লাগোয়া ৩৫টি বিওপি নির্মাণ করবে বিজিবি৷ বিজিবি’র রিজিওন্যাল কমান্ডার এডিজি এদিন তিনি দাবি করেন, ঢাকায় গুলশান এলাকায় সন্ত্রাসী আক্রমণ স্থানীয় সন্ত্রাসবাদীদের কাজ তাদের সাথে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কোন যোগাযোগ নেই৷ পাশাাপাশি জানান, ত্রিপুরা সহ পূর্বোত্তরের অন্যান্য রাজ্যগুলির সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত নিয়েও ভাবছে বিজিবি৷ ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে আরো বিওপি স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
এদিকে, বিএসএফের মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের আইজি পি কে দুবে জানিয়েছেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ আবহে ভারত-বাংলাদেশের দুই প্রান্তের সেনা আধিকারিকদের বৈঠকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ দুই রাষ্ট্র মিলে এই অঞ্চলের সীমান্ত সমস্যা সমাধান এবং সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা হবে৷ শ্রী দুবে জানিয়েছেন, পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হবে৷ ভারত-বাংলা জিরো লাইনে নয়টি স্থান চিহ্ণিত করা হয়েছে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া বসানো হবে৷ সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বিএসএফ৷ দুই রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক সম্মেলন থেকে আগামীদিনে সীমান্ত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে বলে বিএসএফের প্রতিনিধি এবং বিজিবি’র প্রতিনিধি দাবি করেন৷
এদিকে, আজ সকালে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস -কক্ষে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের দুই এডিশন্যাল ডিরেক্টর জেনারেল (রিজিওন কমান্ডার) মহম্মদ হাবিবুল করিম ও খোন্দকার ফরিদ হাসান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে দেখা করেন৷ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের এই দুই অফিসার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে পুষ্পস্তবক ও স্মারক উপহার তুলে দেন৷ এ সময় বি এস এফ -এর পক্ষ থেকে দু’জন পদস্থ আধিকারিকও উপস্থিত ছিলেন৷ উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের এখটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি আগরতলায় আসে সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে দু পক্ষের সহায়তামূলক আদানপ্রদান নিয়ে বি এস এফ-এর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে৷ শালবাগানস্থিত বি এস এফ-এর হেডকোয়ার্টারে বি এস এফ ও বি বি জি -এর মধ্যে এই আলোচনা চলে গত ২৪ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত৷
এদিকে, বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লীতে ভারত- বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ এই বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই প্রাধান্য পাচ্ছে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি৷ সীমান্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রশ্ণে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে এই বৈঠকে৷