নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ জুলাই ৷৷ ধর্মনগরে উত্তর ত্রিপুরা জেলা শাসকের সভা কক্ষে আজ বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জেলা ভিত্তিক পর্যালোচনা সভা করেন৷ সভায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী বিজিতা নাথ, উত্তর ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিমা দাস, মুখ্যসচিব যশপাস লিং, জেলা শাসক ডাঃ সন্দীপ এন মাহাত্ম্যে, মহকুমা শাসকগণ, বি ডি ও গণ সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার পর্যালোচনা সভায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, সেচ, পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধি, মৎস্য, প্রাণীসম্পদ, হর্টিকালচার, বন, হাউজিং, প্রভৃতি দপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করেন৷
সভায় শুরুতে জেলাশাসক জেলার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন৷ জেলা শাসক জানান, জেলার ১ হাজার ৩৪১ টি পরিবারকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল৷ এর মধ্যে হাজার ৩৩৮টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের হাউজিং স্কীমে ১ হাজার ২৪৩টি গৃহ নির্মাণের কাজ হতে নেওয়া হয়েছিল৷ এরম মধ্যে ১ হাজার ২৩৭ টির কাজ শেষ হয়েছে৷ পূর্ত দপ্তরের আধিকারিক জানান, জেলায় ৭৩৯ টি জনবসতির মধ্যে ৭০৯ টিতে সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলা হয়েছে৷ বাকী ৩০ টি জনবসতির মধ্যে ১৭টি এ ডি সি র পূর্ত বিভাগ করবে বলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক জানান৷ বাকি ১৩টি জনবসতিতে সড়ক যোগাযোগ ২০১৭ সালের মধ্যে গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের আধিকারিককে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে বলেন৷ এব্যাপারে জেলা শাসককে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে সভা করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী
পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধি দপ্তরের আধিকারিক জানান, জেলার মোট ৭০৫ টি জনবসতির মধ্যে ৩১২টি সম্পূর্ণবত্রাবে এবং ৩৯৩ টিতে আংশিক ভাবে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু আছে৷ ২০১৬-১৭ সালে জেলায় পানীয় জলের সুযোগ আংশিক ভাবে পৌঁছানো পাড়াগুলিতে পানীয় জলের সুযোগ সম্পূর্ণ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরী করে কাজ করতে মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন৷ এ ব্যাপারে জেলা শাসককে দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে সভা করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন৷ পানীয় জলের সুযোগ সম্প্রসারণের ব্যাপারে দপ্তরের এস ই কে ১৫ ই আগষ্টের মধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরী করতে মুখ্যমন্ত্রী নিদের্শ দেন৷ কৃষি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচীর পর্যালোচনায় খাদ্য শষ্যের উৎপাদন আরো বাড়াতে পতিত জমিকে কাজে লাগাতে দপ্তরের আধিকারিককে মুখ্যমন্ত্রী বলেন৷ জলসম্পদ দপ্তরের আধিকারিক জানান, ৮ হাজার ৯৩৩ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে৷ আগামী তিন বছরের মধ্যে মোট কৃষি জমির ৬০ শতাংশ জমিকে সেচের আওতায় আনতে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরী করতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন৷ ফসল উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের উৎসাহ দানে আরও উদ্যোগ নিতে এবং বনাধিকার আইনে পাট্রা প্রাপ্তদের জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফসল ও ফল চাষে গুরুত্ব দিতে মুখ্যমন্ত্রী কৃষি ও হর্টিকালচার দপ্তরের আধিকারিককে নির্দেশ দেন৷
মৎস্য দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচীর পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মাছের উৎপাদন বাড়াতে রেগার মাধ্যমে জলাশয় সৃষ্টি করা, পাহাড়ী এলাকায় চেক ড্যাম বাড়াতে দপ্তরের আধিকারিককে নির্দেশ দেন৷ দুধের উৎপাদন বাড়াতে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরকে উদ্যোগ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পর্যালোচনা সভায় শিক্ষা দপ্তরের জেলা আধিকারিক জানান, ২০১৫ সালে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলায় ৬১,২৭ শতাংশ পাশ করেছিল৷ ২০১৬ সালে পাশের হার বেড়ে হয়েছে ৭১,৭২ শতাংশ৷ উচ্চমাধ্যমিকে ২০১৫ সালে পাশের হার ছিল ৭১৮১ শতাংশ৷ ২০১৬ সালে পাসের হার ৭৭৬৭ শতাংশ৷
মুখ্যমন্ত্রী ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ভিট শক্তিশালী করে তুলতে শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের আরো বেশী সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করতে বলেন৷ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিতির হার বাড়াতে দপ্তরকে উদ্যোগী হতে বলেন৷ আধিকারিকদের বিদ্যালয়ে নজরদারী আরো বাড়াতে বলেন তিনি৷ প্রতিটি ক্লাসের পরীক্ষার পর অ্যাসেসমেন্ট করে প্রয়োজনে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জিলা পরিষদ ও ব্লক স্তরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিশু কল্যাণ এর উপর স্থায়ী কমিটির সভা করতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন৷
সভায় বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিক জানান জেলায় মোট ৭৩৯ টি জনবসতি এলাকার মধ্যে ৬৯৮ টি জনবসতি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ বাকী ৪১টি বসতির মধ্যে ২০১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩১টি বসতিতে এবং ২০১৭-র মার্চের মধ্যে বাকী ১০টি জনবসতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য দপ্তরের আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
স্বাস্থ্য দপ্তরের পর্যালোচনায় ইনস্টিটিউশন্যাস ডেলিভারীর হার বাড়াতে আশা কর্মীদের আরো সক্রিয় করে তুলতে দপ্তরের আধিকারিককে নির্দেশ দিন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জেলার ৩টি মহকুমার মধ্যে ধর্মনগর ও কাঞ্চনপুর মহকুমার কাজের অগ্রগতির উপর নজর রাখবেন জেলা শাসক৷ পানিসাগর মহকুমার কাজকর্মের দায়িত্ব দেওয়া হয় অতিরিক্ত জেলা শাসকের উপর৷ মহকুমা শাসকদের ব্লক, নগর পঞ্চায়েত ও পুর পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি৷ ব্লকের সভায় কাজের সুবিধার্থে মহকুমা শাসকদের উপস্থিত থাকতে, প্রয়োজনে জেলা শাসককে ও অতিরিক্ত জেলা শাসককে ব্লকের সভায় যেতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সব দপ্তরকে নিয়ে এক সঙ্গে সভা না করে যে দপ্তর যে দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত আছে সেসব দপ্তরকে এক সঙ্গে নিয়ে সভা করতে মুখ্যমন্ত্রী জেলা শাসককে বলেন৷ পূর্ত দপ্তরের আধিকারিককে রাস্তা সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেন তিনি৷ কাঁঠালতলী রাস্তায় যতটা সম্ভব গাড়ী চলাচলের ব্যবস্থা সচল রাখতেও মহকুমা শাসককে বলেন৷ নব নির্মিত জেলা কারাগারের কাজ গুণমান বজায় রেখে দ্রুততার সঙ্গে ২০১৭ সালের জানুযায়ীর মধ্যে শেষ করতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন৷ পর্যালোচনা সভায় উন্নয়ন মূলক কাজ রূপায়নের বিষয়ে আলোচনা করেন সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী বিজিতা নাথ, সভাধিপতি প্রতিমা দাস৷ এছাড়া মুখ্যসচিব যশপাল সিং ও আলোচনা করেন৷