শপথ গ্রহণ করিয়াই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের জন্য মূল বেতনের একটা অংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়া ত্রিপুরার বামফ্রন্ট সরকারকে অনেকটাই বেকায়দায় ফেলিয়া দিয়াছেন৷ সরকারী কর্মচারীরা বঞ্চিত হইয়া থাকিলেও যে বামফ্রন্ট সরকার ভাবিত নহেন তাহাও বারবার প্রমাণিত হইয়াছে৷ অতীতে বামেরা মুখে সরকারী কর্মচারীদের জন্য চোখের জলে বুক ভাসাইয়াছেন৷ সরকারী কর্মচারীদের ন্যায্য দাবী দাওয়ার জন্য লড়াই’র ময়দানে অগ্রণী ছিলেন এই বামেরা৷ এই সরকারী কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়া এরাজ্যে বাম সরকারের অভিষেকের শুভ সূচনা হইয়াছিল ১৯৭৮ সালে৷ কিন্তু, ক্ষমতায় বসিয়াই বামফ্রন্ট সরকার সেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলিয়া ময়দান গরম করিতে থাকে৷ এই দোহাই দিয়া বাম সরকার কর্মচারীদের বঞ্চনার কাহিনী আজও সমান ভাবে চালু রাখিয়াছেন৷ বদলী ইত্যাদি নানা কারণে সরকারী কর্মচারীদের সিংহভাগই এখন বাম সমর্থিত সরকারী কর্মচারী সমিতির সঙ্গে যুক্ত হইয়া বিপ্লব দীর্ঘজীবি
হউক শ্লোগান মারিতেছেন৷ বঞ্চনা ইত্যাদির বিরুদ্ধে সরব হইতেছেন৷ কিন্তু, রাজ্য সরকারের দীর্ঘ বঞ্চনার বিষয়ে একেবারে চুপ মারিয়া আছেন৷ ১৯৭৮ সাল হইতে ১৯৮৮ সালে কংগ্রেস যুব সমিতির জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সরকারী কর্মচারীদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়া যায়৷ রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের ভাবনার অতীত বর্দ্ধিত বেতন বকেয়া সহ পাওনা মিটাইয়া যে ইতিহাস তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সুধীর মজুমদার রাখিয়াছিলেন তাহার তুলনা নাই৷ কিন্তু এই কর্মচারীরা ভুলেও সুধীর মজুমদার বা জোট সরকারকে সাধুবাদ দিবার মতো সৌজন্যতাও দেখায় নাই৷
বুঝিয়া হউক বা না বুঝিয়া হউক ঢালাও হারে রাজ্য কর্মচারীদের বেতন কাঠামো দেওয়ার ঘটনায় রাজকোষেই টান পড়িয়া গিয়াছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী মজুমদার তখন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া ত্রিপুরার জন্য বাড়তি বরাদ্দ অনুমোদন করাইতে পারিয়াছেন বলিয়া জোট সরকার অল্পেতে বাঁচিয়া যায়৷ সরকারী কর্মচারীদের সব উজার করিয়া দেওয়ার মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নাই৷ সমাজে সরকারী কর্মচারীরাই সব সুবিধা পাইয়া যাইবে তাহা নিয়াও আজ বিতর্ক দেখা দিয়াছে৷ আজ সরকারী অফিসগুলির দুরবস্থা নিয়া তো কর্মচারীরা বা তাহাদের নেতারা সরব হইতেছেন না৷ একথা আজ অনেক বেশী সত্যি যে, সরকারী অফিসগুলির কাজ কর্মের অধোগতি রোধ করা যাইতেছে না৷ দক্ষ কর্মীর অভাব আজ রাজ্য সরকারের প্রতিটি দপ্তরে৷ কোনও দপ্তরের কাজ কারবারের মান এত নিম্নমুখী হইয়াছে যে, তাহা নিয়া তো কর্মচারী বা তাহাদের নেতাদের কোনও প্রতিক্রিয়া নাই৷ কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিই কি তাহাদের একমাত্র কাজ৷ কর্মচারীদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা, কর্মসংসৃকতি বজায় রাখা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে অগ্রণী হওয়া৷ কিন্তু দূর্ভাগ্যের ইহাই যে, সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে রাজনীতির ছায়ায় সর্বনাশের বীজ রোপণ হইয়াছে৷ সেখানে আজ কর্মনিষ্ঠা ও যোগ্যতার মূল্য নাই৷ মূল্য যাচাই হয় কর্মচারীরা কতখানি বামপন্থী৷ প্রকাশ্যে এইসব কর্মচারীরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হইয়া আছেন৷ সরকারী কর্মচারীদের এই রাজনীতিকরণ কর্মসংসৃকতির বারোটা বাজাইয়া দিয়াছে৷ সরকারী কাজে নিষ্ঠা ও দক্ষতা বৃদ্ধির কোনও প্রতিযোগিতা নাই৷ প্রতিযোগিতা আছে ক্ষমতাসীন দলের জন্য কার আগে কে করিবে প্রাণদান অবস্থা৷
রাজ্য সরকারের বেশীরভাগ সরকারী দপ্তরগুলি দক্ষ কর্মীর অভাবে ধঁুকিতেছে৷ রাজনীতির করাল ছায়ায় কিভাবে সরকারী দপ্তরগুলি কার্য্যত ঝিমাইয়া পড়ে তাহা আজকের ক্ষমতাসীনরা বুঝিতেছেন না৷ তাহারা কার্য্যত জাগিয়া ঘুমাইতেছেন৷ সরকারী কর্মচারীদের ন্যায্য দাবী দাওয়া পূরণে উদ্যোগ নিশ্চয়ই জরুরী৷ সরকারী অফিসগুলির প্রাণ শক্তি সরকারী কর্মচারীরা৷ তাহারা যদি দক্ষতা অর্জন করিতে না পারেন, সরকারী কাজে গতি না আসে তাহা হইলে রাজ্য সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়ণ হইবে কিভাবে? কিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচীর দ্রুত রূপায়ণ হইবে? এক্ষেত্রে সরকারী কর্মচারীরা যত বেশী অগ্রণী হইবেন ততই রাজ্যের ও রাজ্যবাসীর মঙ্গল৷ এই কর্মচারীরা এই সমাজেরই অংশ৷ তাঁহারা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করিয়াছেন কর্মের কোন বিকল্প নাই৷ সরকারী কর্মচারীরা যদি কর্মবিমুখ হয় তাহা হইলে জনতা তাহা মানিয়া নেয় না৷ এক্ষেত্রে জনরোষেরও আশংকা থাকিয়া যায়৷ সরকারী কর্মচারীরা যদি সমাজ ও দেশের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন তাহা হইলে দেশ অনেক বেশী অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে৷ প্রগতির জন্য লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়া নতুন পথের সন্ধান হইতে পারে৷ এক্ষেত্রে সরকারী কর্মচারীরা অনন্য ভূমিকা নিয়া কর্মসংসৃকতি রক্ষার ইতিহাসে নজীর সৃষ্টি করিতে পারেন৷ বাম অনুসারী কর্মচারী সমিতির সম্মেলন আগরতলায় মহা ধুমধামে সম্পন্ন হইয়াছে৷ এই সম্মেলনে রাজ্যের কর্মচারীদের অর্থনৈতিক দাবী দাওয়া তেমন প্রাধান্য পায় নাই৷ রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের সামনে আজ ঘোর প্রশ্ণ, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা কোনও ভাবেই মানিয়া নেওয়া যাইতে পারে না৷
2016-05-30

