উদ্ধার হল নিখোঁজ শিক্ষকের, মৃতদেহ হত্যাকান্ডের রহস্য ভেদে ব্যর্থ পুলিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ মে৷৷ আশঙ্কাই সত্যি হল৷ দীর্ঘ আট দিন পর দত্তক সিং পাড়ায় একটি লুঙ্গা থেকে নিখোঁজ সর্বশিক্ষার শিক্ষক তপন দেবের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ বুধবার অম্পি থেকে গন্ডাছড়ায় সড়কের দত্তক সিং পাড়ায় একশ ফুট গভীরে লুঙ্গায় একটি পচাগলা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় জনগণ৷ সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠানো হয় অম্পি থানায়৷ পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়৷ খবর দেওয়া হয় তপন দেবের বাড়িতে৷ তপন দেবের পরিবারের সদস্যরা দেহটি সনাক্ত করেছে৷ এরপর পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছে৷
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, তপন দেব নামে ঐ ব্যক্তি সর্বশিক্ষার একজন শিক্ষক৷ তিনি আবার পরিবহন ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন৷ শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে সিন্টিকেটেও কর্তৃত্ব জাহির করতেন৷ তার দুটি গাড়িও রয়েছে৷ একটি বাস গাড়ি ক্রয় করার পরিকল্পনা ছিল৷ গত সোমবার তিনি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অম্পি ব্রাঞ্চ থেকে আড়াই লক্ষ টাকাও তুলেছিলেন৷ অবশ্য টাকা বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন৷ রাতে তিনি নাকি তার মাকে ফোন করে বলেছিলেন ফাইনান্স কোম্পানির সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনি উদয়পুরে গেছেন৷ রাতে বাড়িতে ফিরবেন না বলেও জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরদিন ফাইনান্স কোম্পানির লোকজন বাড়িতে এসে তার খোঁজ করেন৷ এবং তারা জানান গতকাল তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি৷ তার ফোনের সুইচড অফ দেখাচ্ছিল৷ ফলে সন্দেহ ক্রমশ ঘনীভূত হতে শুরু করে৷ এদিকে, অম্পিতে রাতেও তাকে দেখা গিয়েছিল বলে সংবাদ৷ সে অনুযায়ী পুলিশ তার কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও চালিয়েছে৷ তাতেই খানিকটা ক্লু খঁুজে পেয়েছে পুলিশ৷ রাতে মদের আসরে তাকে খুন করা হয়েছে বলে আশঙ্কা৷ ফলে মৃতদেহ উদ্ধার না হওয়ায় এবিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছুই বলতে নারাজ পুলিশ৷
শিক্ষক তপন দেবকে উদ্ধার করার জন্য অম্পি নগর থানার পুলিশ বিগত কয়েকদিন যাবত তল্লাশি চালিয়ে গেলেও ব্যর্থতা ছাড়াও আর কিছুই পাচ্ছে না৷ এদিকে গত রবিবার রাতে অম্পি নগর থানার পুলিশ নিখোঁজ কান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে রাংবাং রিয়াং নামে এক যুুবককে আটক করে৷ ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়৷ গত মঙ্গলবার অর্থাৎ তপন দেব নিখোঁজ হওয়ার দিন রাত ১২টা পর্যন্ত তারা মাংস রান্না করে বিপুল সাহার বাড়িতে মদর আসর করে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, রাংবাং রিয়াং নাকি পুলিশকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে বিপুল সাহা খাবারের সাথে বিষ পান করিয়ে তপনকে হত্যা করেছিল৷ এমনকি সে রাতেই নাকি অম্পি থেকে গন্ডাছড়া রাস্তার মধ্যে এক গভীর জঙ্গলে তপনের মৃতদেহটি ফেলে দেওয়া হয়৷ রাংবাং রিয়াংয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সোমবার সকাল ১১ ঘটিকা হতে ওই এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালায় অম্পি নগর থানার পুলিশ৷ তল্লাশি অভিযানে নেতৃত্ব দেন গোমতী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তপন দেববর্মা ও অম্পি নগরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রানাদিত্য দাস৷ পুলিশ ও টিএসআর জওয়ানদের পাশাপাশি অম্পি নগর এলাকার তিনশতাধিক যুবক তল্লাশি অভিযানে যোগদান করেন৷ রাংবাং রিয়াংকে সাথে নিয়ে কুুনারাম বাড়ি এলাকার গভীর জঙ্গলের বিভিন্ন প্রান্তে তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরও তপন দেবের মৃতদেহের কোন হদিশ পাওয়া যায়নি৷ সকাল ১১টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত টানা দীর্ঘক্ষণ গভীর জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ প্রশাসনকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে৷ রাংবাং রিয়াংয়ের বয়ানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ অভিযোগ পুলিশ নিখোঁজ কান্ডের সঠিক কারণ উদ্ধার করতে এখনো ব্যর্থ৷ এদিকে, পুরো ঘটনার পিছনে তপনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিপুল সাহার দিকে বারবার অভিযোগের তীর উঠলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ ওই অভিযুক্ত বিপুলকে আটক করতে পারেনি৷ বেশ কয়েকদিন যাবত বিপুল তার নিজস্ব গাড়ি নিয়ে পািিলয়ে বেরালেও পুলিশ তার টিকির নাগাল পাচ্ছে না৷