কলকাতা, ৪ এপ্রিল (হি.স.): নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতিই সার| রাজ্যে প্রথম দফার ভোটের দিনই শাসকদল এবং রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে উঠল ভুরি ভুরি অভিযোগ| কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হল কেন্দ্রীয় বাহিনীকে| সোমবার সকাল ৭টা থেকে মাওবাদী উপদ্রুত জেলা হিসাবে পরিচিত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয়| এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে রয়েছে ৬টি আসন (বিনপুর, গোপীবল্লভপুর, ময়াগ্রাম, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর এবং শালবনি), বাঁকুড়ার ৩টি আসন (রানিবাঁধ, তালড্যাংরা, রাইপুর) আর পুরুলিয়ার ৯টি আসন (বলরামপুর, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, পাড়া, রঘুনাথপুর, কাশীপুর, বান্দোয়ান, মানবাজার)| সকাল থেকেই উত্সবের মেজাজ ছিল জঙ্গল মহলের তিন জেলায়| বুথে বুথে ছিল ভোটারদের লম্বা লাইন| এরই মধ্যে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর এই তিন জেলার ভোটেই বিচ্ছিন্নভাবে অভিযোগ উঠতে শুরু করল শাসক দলের বিরুদ্ধে| অভিযোগ উঠল রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধেও|
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে বুথ দখলের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে| সিপিএম প্রার্থী শ্যাম পাণ্ডে অভিযোগ করেন, ওই বিধানসভা কেন্দ্রের ৮৬, ১০৮, ১০৯, ১৪৩, ১৪৪, ১৪৬, ১৪৭ এবং ১৯০ এই আটটি বুথে বামেদের এজেন্টদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে| তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের এই অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দায়ের করা হয়েছে| অন্যদিকে, মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ৯২ নম্বর বুথে বেনিয়া প্রাথমিক স্কুলে কোতোয়ালি থানার দুই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে ভোট তদারকির অভিযোগ উঠেছে| অথচ যে এলাকায় ভোট হচ্ছে স্থানীয় থানার কোনও পুলিশ কর্মীকে সেখানকার দায়িত্বে রাখা যাবে না বলেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ| তা সত্ত্বেও কী ভাবে ওই দুই পুলিশ কর্মী বুথের ভেতরে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন, উঠেছে সেই প্রশ্ন|
এ দিন সকালেই পুরুলিয়ার বলরামপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ২৩৯ নম্বর বুথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রিসাইডিং অফিসারকে| নতুন প্রিসাইডিং অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়| ভোট শুরু হওয়ার পর অভিযোগ ওঠে, ওই বুথে শাসক দলের এক এজেন্ট ভোটারদের কোথায় ভোট দিতে হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন| অভিযোগ পেয়ে নির্বাচন কমিশন বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়| ওই প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলা শাসক|
জঙ্গলমহলের প্রতিটি বুথই অতি স্পর্শকাতর| তাই প্রতিটি বুথেই মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী| মাও অধু্যষিত এলাকাগুলিতে চালানো হয়েছে চিরুনি তল্লাশি| ভোটগ্রহণ পর্বের পাশাপাশি চলছে কড়া নজরদারিও| প্রতিটি বুথে রাখা হয়েছে সিসিটিভি| বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও নজরদারি চালানো হচ্ছে আকাশপথেও| বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিতেই চলছে ভোটদানপর্ব| মেদিনীপুরের তিনটি এবং পুরুলিয়ার দুটি বুথে খারাপ হয়ে যায় ইভিএম মেশিন| বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয় ভোটগ্রহণ পর্ব| সকাল ৯টা পর্যন্ত, ভোটের হার পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৪%, বাঁকুড়ায় ২৯%, পুরুলিয়ায় ২২%| মোট ভোট পড়েছে ২৩ শতাংশ| এই আসনগুলিতে ভাগ্যপরীক্ষা হবে ১১ জন মহিলাসহ ১৩৩ জন প্রার্থীর| মোট ভোটার সংখ্যা ৪০ লক্ষ ৯ হাজার ১৭১|