BRAKING NEWS

মর্মান্তিক উড়ালপুল

kolkatamapযেন বিনা মেঘে বজ্রপাত৷ কলকাতার পোস্তায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্মীয়মান একশত মিটার দৈর্ঘ্য উড়ালপুল ভাঙ্গিয়া অন্তত আঠাশ জনের জীবন্ত সমাধি হইয়াছে৷ বহু আহত হইয়াছেন৷ সেনা বাহিনী এই ভয়াবহ ঘটনার উদ্ধারে নামিয়াছে৷ পোস্তায় জনবহুল ও আবাসন এলাকায় উড়ালপুল তৈরির ক্ষেত্রে যতখানি সতর্ক ও সজাগ থাকিবার কথা তাহা রক্ষিত হয় নাই৷ নিম্নমানের ও গোঁজামিলের কাজের পরিণতি কী ভয়াবহ হইতে পারে এই মর্মান্তিক উড়ালপুল চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল৷ গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই পুলিশ ব্যবস্থা নিবে৷ ঠিকেদারী সংস্থার অন্তত দশ জনকে গ্রেফতার করা হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে৷ এই মর্মান্তিক বিপর্যয়ের জন্য রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হইতে শুরু করিয়া সকল অংশের মানুষ শোক জানাইয়াছেন৷ উড়ালপুল ভাঙ্গিয়া এমন মর্মান্তিক পরিণতি ইতিপূর্বে আর কোথাও ঘটিয়াছে বলিয়া মনে হয় না৷ এই ঘটনাকে সকল অংশের মানুষই মানবিক দৃষ্টিকোণ হইতে দেখিতেছেন৷ এই দুঃখবহ ঘটনার ফলে যাহারা নিহত হইয়াছেন তাঁহাদের পরিবারকে এবং আহতদের চিকিৎসা ও অন্যান্য যাবতীয় সহায়তাই এখন সবচাইতে বড় কাজ৷ আশা করা যায়, এই কাজ শুরু হইয়াছে৷ রাজ্য সরকার এক্ষেত্রে কার্য্যকরী উদ্যোগ নিয়াছেন বলিয়াই মনে হইতেছে৷ মর্মান্তিক এই ঘটনা নিয়া যে নেতা বা রাজনৈতিক দল নোংরা খেলায় মাতিবেন তাঁহাদের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ক্ষমা করিবে না, তাহা স্পষ্ট হইয়াছে রাজনৈতিক নেতা বা দলগুলির অনেক বেশি সংযত আচরণের মধ্য দিয়া৷ কিন্তু কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা, বিশেষ করিয়া কংগ্রেসের ক্ষমতা পাগল অধীর চৌধুরীর বক্তব্য জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ারই সৃষ্টি করিবে সন্দেহ নাই৷ এই ঘটনায় সিপিএম নেতৃত্ব অনেক বেশি উদার ও সংযত ভূমিকা নিয়া প্রমাণ করিয়াছেন রাজনীতি শুধু বিরোধীদের জন্য বিরোধীতা নহে৷ এই দল এখন ক্ষমতায় না থাকিলেও তাঁহাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক অনুশীলন সেই শিক্ষাই হয়ত দিয়াছে৷ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী বা বিজেপির সিদ্ধার্থ সিং রাজনীতির আঙুল তুলিয়া নিজেদের বিরূপ চেহারাই জনমনে তুলিয়া ধরিলেন৷
রাত পোহাইলেই পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন৷ চার এপ্রিল প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনের মধ্য দিয়া সেই গণতান্ত্রিক বা মতদানের নীরব লড়াই শুরু হইবে৷ এইভাবে কোনও নির্বাচনের প্রাক্লগ্ণে, এমন বিপর্য্যয়ের এই ঘটনা রীতিমতো নজীর বিহীন৷ এই বিপর্য্যয়ের দায় কাহার তাহা নিয়া ইতিমধ্যেই হয়তো ডাইনী খোঁজা শুরু হইয়া গিয়াছে৷ ২০০৭-০৮ সালে দরপত্রের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আই ভি আর সি এল এ নির্মাণ সংস্থা এই উড়ালপুল তৈরির বরাত পাইয়াছিল৷ কেন্দ্রীয় সরকারও অনুমোদন দিয়াছিল৷ কিন্তু এই নির্মাণকারী সংস্থাটি অন্যান্য রাজ্যে কালো তালিকাভুক্ত হইবার ঘটনা আছে৷ ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকার এই উড়াল পুলের দায়িত্ব আই ভি আর সি এল সংস্থার হাতে তুলিয়া দেয়৷ ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই উড়ালপুল ২০১১ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে সরকারের হাতে তুলিয়া দিবার কথা ওই নির্মাণ সংস্থার৷ এর মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল হয়৷ শুরু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানা৷ ঘোষিত সময়ে কাজ শেষ করা দূরের কথা গত বছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৯ বার সময় সীমা ছুঁইতে ব্যর্থ হয় ওই সংস্থা৷ জমি জটের কারণে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৪ সালে ওই সংস্থা রাজ্য সরকারের কাছে ৭২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে৷ এই জনবহুল এলাকায় উড়ালপুল নির্মাণে এলাকাবাসীর আপত্তি, জমিজট, এই সংস্থাকে বরাত দেওয়া হইয়াছিল বামফ্রন্ট আমলে ইত্যাদি নানা তথ্য ও অভিযোগ উঠিতেই পারে৷ কিন্তু গাফিলতির কারণে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এবিষয়ে দ্বিমত থাকিবার কথা নহে৷ এই ঘটনা নিয়া রাজনীতি নয় মানবিকতাই সবচাইতে বড় কাম্য৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন তিনটি জনসভা বাতিল করিয়া তড়িঘড়ি খড়গপুর হইতে ছুটিয়া আসিয়া, সোজা ঘটনাস্থলে, তদারকির কাজে, দূর্গত মানুষের পাশে, উদ্ধারের কাজ তদারকিতে নামিয়া পড়েন৷ এইভাবে কোনও মুখ্যমন্ত্রী মাঠে নামিয়া, মাইক হাতে নিয়া ইতিপূর্বে নামিয়াছেন, তাহা দেখা যায় নাই৷ ইতিহাস ঘাটিলে সেই ঘটনা মিলিবে না৷ মানবিকতার এর চাইতে বড় দৃষ্টান্ত আর কী হইতে পারে?
তবে, একথা বলিতেই হইবে যে, উড়ালপুলের বরাত পাওয়া আইভিআরসিএল সংস্থা কালো তালিকাভুক্ত হইয়াছে অন্যান্য রাজ্যে৷ হায়দ্রাবাদের এই সংস্থাটি খোদ হায়দ্রাবাদ পুরসভার তদন্তের মুখে পড়িতে হইয়াছে৷ কার্যত দেউলিয়া হইতে বসা এই সংস্থা উড়ালপুলের কাজ বন্ধ করিতে বাধ্য হইয়াছিল৷ আসলে, বামফ্রন্ট আমলে বরাত দেওয়া এই সংস্থাটি সম্পর্কে বর্তমান রাজ্য সরকারকে আরও বেশি খোঁজ খবর নিতে পারিলে হয়তো এই বিপর্যয় এড়ানো যাইত৷ এই সংস্থাটি কিভাবে উড়ালপুলের নির্মাণ কাজ চালু করিয়াছে, কাহাদের হাতে নির্মাণের দায়িত্ব দিয়াছিল, তেমন সতর্কতা নেওয়া হয় নাই কেন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয়টির উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করানো খুব বেশি জরুরী৷ এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়া কোনও রাজনৈতিক নোংরামী হইবে চরম অমানবিক কাজ৷ সেই নোংরামীর জবাব নিশ্চয়ই পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে দিতে হইবে৷ কলকাতার উড়ালপুল বিপর্যয়ের ঘটনা হইতে এখনই সতর্ক হইবার তাগিদ বাড়াইবে ত্রিপুরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থার৷ সমস্ত রকম ঝুঁকি এড়াইয়া আগরতলায় উড়ালপুলের কাজ সম্পন্ন হইবে বলিয়াই আশা করা যাইতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *