নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ মার্চ৷৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠানোর লক্ষ্যেই দল কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিআইএম ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিজন ধর৷ আজ এখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজনবাবু বলেন, কংগ্রেসের সাথে আসন সমঝোতায় গিয়ে বামেরা ভুল করছে কি ঠিক করছে তা আগামী দিনে আলোচনা হবে৷ তারা এখন যে পথে হাটছে সে পথেই হাটুক৷ বিজনবাবুর এই অকপট বক্তব্য আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও সিপিএমের নয়া সমীকরণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ কারণ, কয়েকদিন আগে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজনবাবু স্পষ্ট জানিয়েছিলেন কংগ্রেসের সাথে কোনরকম সমঝোতার প্রশ্ণই আসে৷ কলকাতা প্লেনামে এইবিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ অথচ রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে ভোল পাল্টে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে সমঝোতার প্রশ্ণে সুর নরম করেছেন৷
রাজ্যে সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে বামেদের আসন সমঝোতায় আপত্তি না থাকার আরেকটি উদাহরণ হল দু’দিনের রাজ্যকমিটির বর্দ্ধিত অধিবেশনে এনিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি৷ এদিন, বিজনবাবু জানান, বর্দ্ধিত অধিবেশনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে বামেদের আসন সমঝোতা নিয়ে কোন প্রশ্ণ উঠেনি৷ ফলে সে বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেসের সাথে আসন সমঝোতার প্রশ্ণে পশ্চিমবঙ্গের বাম নেতৃত্বদের সিদ্ধান্ত এরাজ্যের দলীয় নেতৃত্বদের সায় রয়েছে বলেই এনিয়ে কোন আলোচনা হয়নি৷ কারণ, বিজনবাবুই জানিয়েছিলেন সিপিএমের একটাই লাইন৷ একেক রাজ্যের জন্য একেক লাইনে হাটে না দল৷ ফলে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে মতানৈক্য থাকলে এরাজ্যে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বর্দ্ধিত অধিবেশনে আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল৷ যেহেতু বিজনবাবুর মতে, এই বর্দ্ধিত অধিবেশন মূলত কলকাতা প্লেনামে গৃহিত সিদ্ধান্তের চুড়ান্ত রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ডাকা হয়েছে, তাতে আবারও স্পষ্ট বঙ্গ ব্রিগেড কলকাতা প্লেনামে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে আসন সমঝোতা নিয়ে যে দরবার করেছে তাতে সীলমোহর তখনই পড়েছিল৷
এদিকে, কলকাতা প্লেনামের কয়েকদিন পর দিল্লিতে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ ঐ বৈঠকে বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন সহ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে আসন সমঝোতা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়৷ তাতে যে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় তার নির্যাশ তুলে ধরে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি পশ্চিমবঙ্গ ইস্যুতে কৌশলী পন্থা অবলম্বন করে জানিয়েছিলেন, তৃণমূল সরকারকে হটাতে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে একত্রিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এরপর থেকে অবশ্য সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির প্রশ্ণে কংগ্রেসকেই বোঝানো হচ্ছে কিনা এনিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়৷ প্রকাশ্যে কোন সিপিএম নেতৃত্ব এবিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানাননি৷ এমনকি, গত সাংবাদিক সম্মেলনেও সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সাথে আসন সমঝোতার বিষয়টির কৌশলী জবাব দেন৷ সারা দেশে সিপিএম’র একটাই রাজনৈতিক লাইন, তাতে কংগ্রেসের সাথে সমঝোতা কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেছিলেন৷ কিন্তু এরপর রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিজনবাবুর অকপট স্বীকারোক্তি কংগ্রেস-সিপিএমের সমীকরণকে আরো মজবুত করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
এদিকে, দুই দিনের রাজ্য কমিটির বর্দ্ধিত অধিবেশন প্রসঙ্গে বিজনবাবু জানান, মোট ৩৯৫ জন প্রতিনিধির মধ্যে ৩৬৬ জন অংশ গ্রহণ করেছেন৷ এদের মধ্যে ৪৬ জন মহিলা প্রতিনিধি৷ মূলতঃ সারা দেশে শক্তিশালী বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি৷ এরই পাশাপাশি পার্টির সভ্য ও কর্মীদের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা গড়ে তোলার বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে৷ এদিন তিনি জানান, রাজ্যে সংগঠন আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পার্টি সভ্য ও কর্মীদের গুণগত মান বাড়ানোর বিষয়ে রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে৷ নবীন প্রজন্মকে পার্টির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েও সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে৷ তাতে, রাজ্যে দলের বৃদ্ধতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে তারুণ্যের হাতে রাশ তুলে দিতে চাইছে সিপিএম, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল৷ শুদ্ধিকরণের প্রশ্ণে রাজ্যে সিপিএমের সভ্য, কর্মীদের উপর নজরদারী রাখার বিষয়েও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে দলের রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন৷ এরই পাশাপাশি গণ আন্দোলন আরও সক্রিয় করে তুলে জনগণের কাছে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রচার আন্দোলনে লাগাতর কর্মসূচীর উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে৷ বর্দ্ধিত অধিবেশনে জাতি, উপজাতির একতা শক্তিশালী করা এবং সাম্প্রদায়িক ও বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে রাজ্যে শক্তিশালী বিপ্লবী চরিত্র তুলে ধরতে বর্দ্ধিত অধিবেশনে রিপোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে বলে বিজনবাবু জানিয়েছেন৷
2016-03-14

