রেল রাজনীতি

RAILরেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু এবারের (২০১৬-১৭) রেল বাজেটকে জনমুখী যেমন করিতে পারেন নাই, তেমনি রেলের স্বাস্থ্য ফিরাইবার দাওয়াইও দিতে ব্যর্থ হইয়াছেন৷ রেল আছে সেই রেলের জায়গাতেই৷ প্রভুকে ভোটের বিষয় মাথায় রাখিয়াই বাজেট করিতে হইয়াছে৷ সোজা কথায় ভোটমুখী বাজেট৷ ভোটমুখী বাজেটে সাধারণত যাত্রী স্বাচ্ছন্দের দিকটাকেই বেশী করিয়া দেখা হয়৷ তবে যাত্রী ভাড়া না বাড়াইয়া রেলমন্ত্রী জনমন জয়ের চেষ্টা করায় রেলের ক্ষতি হইবে বছরে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা৷ খরচ কমাইয়া বছরে বাঁচানো হইয়াছে আট হাজার সাতশত বিশ কোটি টাকা৷ কেন্দ্রীয় বাজেট হইতে সহায়তা পাওয়ার কথা চল্লিশ হাজার কোটি টাকা৷ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনের কথা মাথায় রাখিয়া প্রভু খুব সাবধানী বাজেট করিতে গিয়া বড় বেশী চ্যালেঞ্জের সামনেই দাঁড়াইয়াছে রেল৷ রেলের আর্থিক অবস্থা একেবারেই বেহাল৷ এবারের রেল বাজেটে প্রবীণ নাগরিক, মহিলা শিশুদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা ঘোষণা করা হইয়াছে৷ গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়েও৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেলের গতি বৃদ্ধি ও আধুনিকীকরণের কথা বলা হইলেও অর্থসংকটের কারণে নতুন রেল ইত্যাদির ঘোষণা নাই এই বাজেটে৷ ফলে, এই বাজেটের জৌলুস কমিয়াছে৷ জনমনে তেমন কোনও উন্মাদনাও দেখা দেয় নাই৷
যে উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের প্রচার কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিনিয়তই করিয়া চলিতেছেন সেখানে এই অঞ্চল তো উপেক্ষিতই রহিয়া গেল৷ এমন কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অ্যাক্ট ইস্ট নীতিও কার্য্যকর করার কোনও প্রয়াসও দেখা গেল না এবারের রেল বাজেটে৷ রেল বাজেটে উত্তর পূর্বের জন্য গত বছরের তুলনায় কিছু বরাদ্দ বাড়িলেও ত্রিপুরার ভাগ্যে আসে নাই রাজধানী এক্সপ্রেস৷ সোজা কথায়, এই বাজেটে ত্রিপুরার জন্য কিছুই ঘোষণা নাই৷ একথা স্বীকার করিতেই হইবে যে, এবারের রেল বাজেটে ত্রিপুরা সহ গোটা উত্তর পূর্বকে কার্য্যত ধোঁকাই দেওয়া হইয়াছে৷ রেলমন্ত্রী বাজেট ভাষণে জানাইয়াছেন, ত্রিপুরায় পণ্যবাহী বিজি রেল চালু হইয়াছে৷ খুব তাড়াতাড়ি যাত্রীবাহী রেলও ছুটিবে ত্রিপুরায়৷ ত্রিপুরার মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হইলেও, দূরপাল্লার নতুন ট্রেন চালুর কোনও প্রস্তাব না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষের মনে ক্ষোভ দেখা দিবেই৷ আগরতলা আখাউড়া রেল লাইনের জন্য দীর্ঘ দিন যাবৎই তৎপরতা চলিতেছে৷ অথচ এইবারের বাজেটেও অর্থের সংস্থান রাখা হইল না৷ সোজা কথায়, এইবারের রেল বাজেট দিশাহীন৷ দীর্ঘমেয়াদী হইলেও নতুন উদ্যোগ, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে রেলের ভিতকে, সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে নতুন শক্তি আনিয়া দেয় বাজেট৷ কিন্তু এক ম্যাড়েমেড়ে রেল বাজেট ইতিপূর্বে দেখা গিয়াছে কিনা সন্দেহ৷
রেলের মুমুর্ষ অবস্থা কাটাইয়া উঠিতে গত রেল বাজেটে পণ্য ও যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করা হইয়াছে৷ ইহাতে কিন্তু জনমনে ক্ষোভের আগুন দেখা যায় নাই৷ এইবার যাত্রীভাড়া বাড়ানো হয় নাই শুধু ভোটের দিকে চাহিয়া৷ আর এই কারণে রেল আবার মুমুর্ষ হইয়া পড়িতে পারে৷ রেলের যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি না করার মধ্যে কোনও কৃতিত্ব আছে এমন দাবী মানিয়া নেওয়া যাইতে পারে না৷ কারণ, আগামী দিনে ভোটের বাজনা না থাকিলে ভাড়া বৃদ্ধির খড়গ ঝুলাইয়া দেওয়া হইবে না এমন নিশ্চয়তা নাই৷ রেল নিয়া সস্তা রাজনীতি যতদিন চলিবে ততদিন এই মুমুর্ষ অবস্থা হইতে মুক্ত হওয়া যাইবে না৷ দেশের যোগযোগ ক্ষেত্রে রেলের বিকল্প নাই৷ দেশের শিরা, উপশিরায় যোগাযোগের রক্ত প্রবাহ ঘটে এই রেলের মাধ্যমেই৷ এই রেলকে নিয়া নতুন ভাবে ভাবিতে হইবে৷ আরও দ্রুত, আরও উন্নত, আরও স্বাচ্ছন্দ যুক্ত রেল চালুর স্বপ্ণ সফল হইলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হইবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের এইখানেই রাজনীতির সংকীর্ণতা রেলকে কাঙ্খিত পথে আগাইতে বিঘ্ন সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে, একথা স্বীকার না করিয়া কি উপায় আছে?