চক্রান্তের গ্রাসে দেশ

Government of Indiaদেশের ভাগ্য কি ক্রমেই রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের চক্রান্তের বলি হইয়া যাইবে? আজ যে গণতন্ত্রের জন্য ক্ষমতাসীনরা গর্ব করিয়া থাকেন, আসলে গণতন্ত্র তো ক্রমেই নির্জীব নিষ্ক্রিয় হইয়া উঠিতেছে৷ দেশের রাজনৈতিক দলগুলিই যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তাহা হইলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হইবে কি করিয়া? দেশের রাজধানী খোদ দিল্লীতে সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর এ কে গোপালন ভবনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালাইয়াছে বলিয়া দলের পক্ষে অভিযোগ করা হইয়াছে৷ রবিবার তিন যুবক সিপিআই (এম) অফিসের দেওয়ালে কালি লাগায়৷ পরে, পার্টি অফিসের বাহিরের বোর্ডে পাকিস্তান জিন্দাবাদ লিখিতেও চেষ্টা করে৷ পার্টি অফিসের কর্মীরা তাহাদের ধাওয়া করে৷ দুইজন পালায়৷ একজনকে আটক করা হয়৷ সিপিএম বলিয়াছে হামলাকারীরা দক্ষিণপন্থী সংগঠনের কর্মী৷ তবে, দিল্লীর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার যতীন নারওয়াল দাবী করিয়াছেন, ধৃত ব্যাক্তি আম আদমী সেনার কর্মী বলিয়া পরিচয় দিয়াছে৷ সিপিআই (এম) দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এই হামলার নিন্দা করিয়া গুরুতর অভিযোগ করিয়াছেন যে, আরএসএস গান্ধীজির হত্যাকারীকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে৷ তাঁহারাই সিপিএমকে দেশ বিরোধী তকমা লাগাইতে চাহিতেছে৷ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করিয়া মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরাইতে চাহিতেছে আরএসএস৷
একথা আজ গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, দেশ জুড়িয়া এক সাম্প্রদায়িক হিংসার বাতাবরণ সৃষ্টির চেষ্টা জোর কদমে চলিতেছে৷ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে বিভিন্ন দল দেশে হিংসার উদ্যোগে মদত দিয়া চলিয়াছে৷ দিল্লীর জে এন ইউ’র কান্ডে নেপথ্যে লস্কর জঙ্গীরা রহিয়াছে বলিয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবী করিয়াছেন৷ তাঁহার দাবীর পিছনে নিশ্চয়ই প্রামাণ্য তথ্য থাকিবে৷ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের যদি দেশ বিরোধী শ্লোগান দিতে বাধ্য করা হয় বা দেওয়া হয় তাহা তো গর্হিত অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত৷ ভারতের নাগরিক এই দেশের মাটিতে দাঁড়াইয়া যেকোনও দেশের নামে জিন্দাবাদ ধবনি দিলেই তাহাকে দেশবিরোধী বলিয়া শনাক্ত করা ঠিক হইবে না৷ তবে কেহ যদি খুব উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কোনও নিষিদ্ধ সংগঠনের নামে জিন্দাবাদ বলিতে চায় বা বলে তাহাকে দেশ বিরোধী বলা যাইতে পারে৷ একথা আজ অনেক বেশী সত্যি যে, দেশের সামনে এক গভীর সংকট আসিয়া দাঁড়াইতেছে৷ বিদেশী দেশ বিরোধী শক্তির পক্ষে কাজ করে এমন ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাইবে না? এই রাজনীতি তো আত্মঘাতী৷ গত ৯ই জানুয়ারী জে এন ইউ’র এক অনুষ্ঠানে যদি দেশবিরোধী শ্লোগান দেওয়া হয়, তাহাকে মানিয়া নেওয়া যায় না৷ এই ঘটনার দায়ে যে ছাত্রনেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তিনি সিপিআই’র ছাত্র সংগঠনের নেতা৷ খোঁজ চলিতেছে অন্যান্য বাম সংগঠনের অন্তত কুড়িজন ছাত্রছাত্রীর৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট জানাইয়া দিয়াছেন দেশবিরোধী কাজকর্ম, দেশের প্রতি অসম্মান বরদাস্ত করা হইবে না৷ অন্যদিকে, পাল্টা দাবী জানানো হইয়াছে যে, জে এন ইউ কান্ডে লস্কর প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সৈয়দের যে সমর্থন রহিয়াছে তাহার উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হইবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে৷
একথা আজ মানিতেই হইবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশবিরোধী শক্তি আস্তানা নিবার যে সংবাদ বা অভিযোগ উঠিতেছে তাহা আগামী দিনে অনেক বেশী বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে৷ একথা হয়তো ঠিক যে, পাক সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সবচাইতে বেশী সোচ্চার হিন্দুত্ববাদী দলগুলি৷ ধর্মের নামে হিংসায় ইন্ধন দেওয়ার ঘটনা কোনও ভাবেই মানিয়া নেওয়া যায়না৷ হিন্দু ধর্মও একটি প্রাচীন ধর্ম৷ দেশের সংবিধানে যেকোনও ধর্মের উপাসক হইবার অধিকার দেওয়া আছে৷ সুতরাং হিন্দু ধর্ম নিয়া আলোচনা, প্রচারকে প্রতিহত করা যাইবে না৷ দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতেই তো দেশ বিভাজিত হইয়াছে৷ লক্ষ লক্ষ হিন্দুর ভাগ্যে নামিয়া আসিয়াছিল অন্ধকার৷ তাহাদের উপর বঞ্চনা নীপিড়ন হইয়াছে, সেগুলিকে উপেক্ষা করিয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংক অটুট রাখার জন্য সমস্ত অন্যায়কে সমর্থন দিয়া যাইতে হইবে? হিন্দুরা হিন্দু পার্টি করিলে সাম্প্রদায়িক৷ মুসলীমরা মুসলীম লীগ করিলে কি? রাজনীতির সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠিবার মানসিকতা নাই কোনও দলেরই৷ এইভাবে ভোটের রাজনীতি দেশের চরমতম সর্বনাশকেই আমন্ত্রণ জানাইবে৷ এখনই যদি রাজনৈতিক দলগুলি শক্ত না হয়, মুসলীম মৌলবাদীদের না বুঝিয়া মদত দিয়া চলে তাহার পরিণতি ভয়ংকর৷ আজ দেশের সামনে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হইতেছে৷ তাহার হাত হইতে মুক্তি পাইতে হইলে এখনই মানুষের জন্য ঝাপাইয়া পড়িতে হইবে৷ নিজের পায়ে কুড়াল মারার ঘটনা রুখিবার পথে না হাটিলে ভয়ংকর পরিণতি গ্রাস করিবেই৷