নগ্ণ নীতিহীনতা

ত্রিপুরায় রক্তের রাজনীতি এক সময় খুব প্রবল ভাবে চালু ছিল৷ রাজনৈতিক সংঘর্ষ, হানাহানির ঘটনায় গোটা রাজ্য অগ্ণিগর্ভ হইয়া উঠিয়াছিল৷ কংগ্রেসী দুসৃকতিকারীদের হাতে বহু বামপন্থী নেতা কর্মীকে প্রাণ দিতে হইয়াছে৷ তেমনি সিপিএম হামলাকারী দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ দিয়াছেন বহু কংগ্রেস কর্মী৷ ত্রিপুরায় বার বার কায়েম হইয়াছে এই হানাহানি
Congress CPIMরক্তাক্ত ঘটনা৷ উপজাতি উগ্রপন্থীরা যেমন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষকে সর্বস্বান্ত করিয়াছে, শত শত মানুষের প্রাণ ছিনাইয়া নিয়াছে, তেমনি রাজনীতির যুপকাষ্টে প্রাণ হারানোর সংখ্যাও কম নহে৷ এই প্রান্তিক রাজ্যে,  কংগ্রেস ও সিপিএম একে অপরের রক্ত পানের প্রতিযোগীতা চলিতেছিল আজ তাহা বোধহয় কল্পনায়ও আনা যায় না৷ ত্রিপুরা কেন পশ্চিমবঙ্গ, কেরলে এই সংঘর্ষের, হত্যার ইতিহাস তো অজানা নহে৷ এই দুই দলই এখন রক্তমাখা হাত ধুইয়া গলাগলি করিতে ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে৷ স্বাধীনতার পরবর্তী সময় হইতে, এতকাল যে কমিউনিষ্ট পার্টি কংগ্রেসের মুন্ডুপাত করিয়াই দলের ভিত গড়িয়াছে, আজ স্রেফ ক্ষমতা দখল ও তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠাইবার জন্য সব নীতি আদর্শ, এতকালের সংগ্রামের লক্ষ্য তছনছ করিয়া দেওয়া যাইবে? এতকাল না হয়, দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গোপন বোঝাপড়া ছিল৷ তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মাথায় টুপি পরাইয়া কংগ্রেস সিপিএম নেতারা গোপন প্রেমে মজিয়া থাকিতেন৷ রণকৌশলের কথা বলিয়া কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারকে বাঁচাইয়া রাখিত সিপিএম৷ সাধারণ্যে বোঝানো হইত বিজেপিকে ঠেকাইতে কংগ্রেস সরকারকে বাঁচানো ছাড়া  উপায় নাই৷ কিন্তু বিজিপিকে তো আটকানো যায় নাই৷ সগৌরবে, ব্যাপক সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়া কেন্দ্রের ক্ষমতায়৷
এই পরিস্থিতিতে, কংগ্রেস-সিপিএমের নির্বাচনী জোট প্রশ্ণে ত্রিপুরায় তো তলে তলে ভূমিকম্পই ঘটিয়া যাইতেছে৷ এ রাজ্যে যাহারা কোনও অবস্থাতেই সিপিএম দলে যোগ দিতে পারিবেন না বা এই দলকে সমর্থন করা সম্ভব নহে তাহারাই কংগ্রেস বা অবাম দলে যুক্ত থাকিতেছেন বা সমর্থন করিতেছেন৷ যদি কংগ্রেস ও সিপিএমে সখ্যতা হয়, নির্বাচনী যুদ্ধে এক মঞ্চে আরোহন করেন তখন পরিস্থিতি কি দাড়াইবে, অন্তত এই ত্রিপুরায়? এই জোট সম্ভাবনার প্রস্তাব বা প্রয়াস দেখিয়াই তো অনেক নীচুতলার কংগ্রেস কর্মী মুখ ঘুরাইয়া নিয়াছেন৷ জোট সম্ভাবনা যে অনেক দূর আগাইয়া গিয়াছে তাহাও ঠিক৷ আর এই অবস্থায় ত্রিপুরায় কংগ্রেস যে ধুইয়া মুছিয়া সাফ হইয়া যাইবে সে সম্পর্কে দ্বিমত থাকিবার কথা নহে৷ কংগ্রেসের যে ক’জন নেতা এখনও সগৌরবে আছেন, তাহারও তলে তলে বুঝাপড়া সারিয়া নিতেছেন৷ কারণ, এমনিতেই এরাজ্যে কংগ্রেস ধরাশায়ী৷ সিপিএমের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে জোট হইলে তো আর রক্ষা নাই৷ একথা হাড়ে হাড়ে বুঝিলেও কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের কিছুই করণীয় নাই৷
কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে রাজনৈতিক রক্তাক্ত লড়াই যতখানি হইয়াছে আর কোনও দলের সঙ্গে তাহার ছিটাঁফোঁটাও হয় নাই৷ ইন্দিরাকে রাক্ষুসে, ডাইনী, রাজীব গান্ধী চোর এইভাবেই তো বর্ণনা করিয়াছিল সিপিএম৷ রাজনীতিতে তাহা ভুলিয়া যাইতে পারিবে কংগ্রেস কর্মীরা? অবশ্য রাজনীেিত শেষ কথা বলিয়া কিছু নাই৷ নীতিহীনতাই এখন রাজনীতি৷ আর এজন্যই রাজনীতির প্রতি সৎ স্বচ্ছ ভাবনার মানুষ মুখ ফিরাইয়া নিতে চান৷ চুলছেড়া বিশ্লেষণ করিয়া বঙ্গের কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা জোটের পক্ষে জোর সরব হইয়াছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতো ‘কাঁচকলা’ বলুন না কেন আসলে বিরোধী ভোট ভাগাভাগি না হইলে কিছুটা হইলেও চ্যালেঞ্জের মুখ্য দাঁড়াইয়া যাইবে তৃণমূল৷ কারণ, একে অপরকে ভোট দিয়া জয় আনার হিসাবেই পঃবঙ্গের কংগ্রেস সিপিএম নেতারা উদ্দীপ্ত হইয়াছেন৷ কিন্তু প্রশ্ণ দাঁড়াইয়াছে, সাধারণ ভোটাররা কি নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তন করিতে পারিবেন? সিপিএম ভোটাররা হাত চিহ্ণে ভোট দিতে পারিবেন?  একই প্রশ্ণ কংগ্রেস ভোটাররা ‘কাস্তে হাতুড়ি তারকা’ চিহ্ণে ভোট দিতে মনে জোর পাইবেন? এই সব নানা প্রশ্ণই উঠিয়া আসিবে৷ তবে শেষ কথা ইহাই যে, রাজনীতিতে নীতি বলিয়া কিছু নাই৷ ক্ষমতা দখলের জন্য যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবেই চলা৷ একেবারে রেজ্জাক মোল্লা৷ যেখানে গেলে সুবিধা হয় সেখানে যাইব৷ আসলে, নীতিহীনতা, আদর্শহীনতা, আত্মসর্বস্বতা, ক্ষমতার লোভ লালসা গোটা রাজনীতিকেই কলুষিত করিয়াছে৷ আর এজন্যই সমাজের কলংকিত ব্যাক্তিরাই দেশ শাসকের জায়গায় পৌঁছিয়া যায়৷ রাজনীতির এই অবক্ষয় গোটা দেশের মানুষের সামনে নতুন প্রশ্ণ নিয়া আসিয়াছে৷ একদিন, এইভাবে দেশ অন্ধকারে ছাইয়া যাইবে না তো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *