আগরতলা বইমেলার উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ ফেব্রুয়ারি৷৷ ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতার ইতিহ্যকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে আজ থেকে উমাকান্ত একাডেমী প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ১২ দিন ব্যাপী ৩৪ তম আগরতলা বইমেলা৷ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন জ্ঞকছরে এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মহঃ হাসেম খান৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই বইমেলা চত্বর চলে যায় বইপিপাসুদের দখলে৷ এক বছরের অপেক্ষা প্রথম দিনেই তারা নানাভাবে পুষিয়ে নোবার চেষ্টা করেন৷
DSC_1369৩৪ তম আগরতলা বইমেলার মূল থিম হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদী সহিষ্ণু ভারতবর্ষ আমাদের ঐতিহ্য৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাদের ভাষণেও এই বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বলেন, আমাদের দেশ একটি জটিল এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যখন চলেছে সে সময় আমরা এই বইমেলায় মিলিত হয়েছি৷ দেশের পরিস্থিতির সাথে আগরতলা বইমেলার ভাবনার প্রাসঙ্গিকতা এবং সাজুয্য আছে৷ তবে এরকম হবে ২০ মাস আগে আমরা অনেকেই হয়ত তা ভাবতেও পারিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্র অঙ্গাঁঙ্গিঁভাবে যুক্ত৷ ধর্মনিরপেক্ষতাকে দুর্বল করে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা সম্ভব নয়৷ এরা হাতধরাধরি করে চলে৷ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিভাজনের কৌশল অবলম্বন করতে আশ্রয় নিয়েছিল ধর্মের৷ তারপরেও আপামর ভারতবাসী লড়াই করে ব্রিটিশদের ভারতছাড়া করেছিল৷ আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্ণধাররা যারা সংবিধান রচনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তারা বুঝেছিলেন আমাদের বৈচিত্রকে এক সূত্রে না বাঁধতে পারলে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্য অনুকুল পরিবেশ তৈরী করা সম্ভব হবেনা৷ সার্বভৌমত্ব এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এই বিষয়টি এর সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তারা উপলব্ধি করেছিলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যারা সংবিধান রক্ষার নামে এখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে এখন প্রতিনিয়ত সংবিধান ভূলুন্ঠিত হচ্ছে৷ দেশের সাংসৃকতি ঐতিহ্যের বিশেষত্বই হচ্ছে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য৷ কিন্ত খাদ্যের অভ্যাস, পোষাক পরিচ্ছেদের অভ্যাস, খেলালেখির ক্ষেত্রে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার  এক কথায় নাগরিক স্বাধীনতার উপর৷ পরিকল্পনা করে আক্রমণ সংগঠিত করা হচ্ছে৷ ইতিহাসকে নতুন করে লেখার চেষ্টা হচ্ছে৷ যাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে কোন ভূমিকা ছিলনা তাদের নাম নতুন করে ইতিহাসে স্থান করে দেবার এখ ঘৃণ্য প্রয়াস শুরু হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন পুস্তক লেখার নাম করে পাঠক্রমকে পাল্টে দিয়ে আমাদের ছেলে মেয়েদের অন্ধকারের গহ্বরে ঠেলে দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এর বিরুদ্ধে যারা কথা বলার চেষ্টা করছে তাদের দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারেনা৷ সব ধর্ম তার কাছে সমান৷ এখন ধর্মের নামে যা চলছে তার বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করা দরকার৷ এক্ষেত্রে লেখালেখি, সৃষ্টিধর্মী কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তারাই পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে৷ অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য বজায় রাখা আজ খুব বেশি প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, দেশের ইতিহাস বিকৃত করে সুক্ষ্ন এবং তীক্ষ্নভাবে সাম্প্রাদায়িকতার বিরুদ্ধে সকল অংশের মানুষের সতর্ক থাকার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিত্র শিল্পী মহঃহাসেম খান বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ত্রিপুরার সহযোগিতার ইতিহাস তুলে ধরেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ত্রিপুরার ভূপ্রকৃতি প্রায় এক৷ মানুষের জ্ঞাণ ভান্ডারকে চিরস্থায়ী করে রাখার সেরা উপহার বই৷ ত্রিপুরার এই মননের মেলায় থাকতে পেরে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা বুক সেলার্স ও পাবলিসার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী এবং ত্রিপুরা পাবলিসার্স গিল্ড-এর সম্পাদক শুভব্রত দেবও বক্তব্য রাখেন৷ স্বাগত ভাষণ দেন তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের বিশেষ সচিব সৌমিত্র বন্দোপাধ্যায়৷ ৩৪ তম বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ত্রিপুরা  সরকারের সাহিত্য ও সংসৃকতি বিষয়ক পত্রিকা গোমতীর বিশেষ সংখ্যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন মহঃ হাসেম খান৷ অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের অধিকর্তা শান্তনু দেববর্মণও উপস্থিত ছিলেন৷ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন সুরঝর্ণার শিল্পীগণ৷