৷৷ নিহার রঞ্জন সাহা৷৷
বিলোনীয়া, ৬ জানুয়ারি৷৷ বেপরোয়া বাসের মরণঝাপ৷ ঝড়ে গেল ছয়টি প্রাণ৷ গুরুতর জখম হয়েছেন ২৯ জন৷ ভয়ঙ্কর এই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকাল পৌণে এগারটা নাগাদ দক্ষিণ জেলার রাজনগর ব্লকের অধীন চোত্তাখোলায়৷ আহতদের মধ্যে ১০ জন বিলোনীয়া হাসপাতালে, ৪ জন নীহারনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, ২ জন তেপানিয়া হাসপাতালে এবং ২ জন জি বি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে৷ বাকিদের নীহারনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ এদিকে, এই দূর্ঘনার পর গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে এককালীন দশ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে৷ জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে নিহতদের পরিবারকে এককালীন দেড় লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে৷ প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে বাসটির যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন৷
বুধবার সকালে যাত্রী নিয়ে টিআর-০৩-১৩৪৬ নম্বরের সিটিরাইড বাস (তম্মি ট্রেভেলস) সাব্রুমের শ্রীনগর থেকে গৌরাঙ্গবাজারের দিকে যাচ্ছিল৷ বাসটির যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সর্বাধিক কুড়ি জন৷ কিন্তু বাসে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা ছিল৷ প্রায় চল্লিশ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি গৌরাঙ্গবাজার যাওয়ার পথে চোত্তখোলা এলাকায় উত্তর শ্রীরামপুরের সিঙ্গারবিল এলাকায় পৌঁছতেই বাসটির চাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং বাসটি রাস্তার পাশে পুকুরে মরণঝাপ দেয়৷ বিকট শব্দের আওয়াজ শুনে আশেপাশের লোকজন দৌঁড়ে গিয়ে দেখতে পান যাত্রীরা বাসের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আত্মচিৎকার করছেন৷ সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা খবর দেয় পিআর বাড়ি থানায়৷ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে উদ্ধার কার্যে সামিল হন৷
ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন চারজন যাত্রী৷ তারা হলেন, মিলন বালা দাস (৭০), সন্ধ্যা দেবনাথ (৪৫), মায়া রাণী দাস (৬৫) এবং শ্রীদাম ধুপি (৬০)৷ হতাতদের উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় নীহারনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷ সেখানে নিয়ে যাওয়া হলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রাণ হারা যতন দাস (২৫) এবং অনিতা দেবনাথ(১৫)৷ আহতদের মধ্যে ১৫জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়৷ বাকিদের চিকিৎসা শুরু হয় প্রথমে নীহারনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷ তারপর সেখান থেকে ১০জনকে বিলোনীয়া হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে৷ চারজনের চিকিৎসা হচ্ছে নীহারনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷ দুইজনকে জিবি হাসাপাতলে এবং দুইজনকে উদয়পুরের তেপানিয়া হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে৷
এদিকে, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন দক্ষিণ জেলার জেলা শাসক দেবাশিষ বসু সহ পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকরা৷ নিহতেদর মরদেহ ডেথ সার্টিফিকেট সহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷ একই সঙ্গে জেলা শাসক নিহতদের পরিবারের হাতে নগদ দশ হাজার টাকা করে তুলে দিয়েছেন৷ ঘোষণা দিয়েছেন নিহতদের পরিবারকে এককালীন দেড় লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে৷ অন্যদিকে দূর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন দক্ষিণ জেলার জেলা সভাধিপতি হিমাংশু রায়, স্থানীয় বিধায়ক সুধন দাস৷
এই দূর্ঘটনার বিষয়ে বিলোনীয়া থানার পুলিশ একটি মামলা নিয়েছে৷ জানা গিয়েছে দূর্ঘটনায় বাস চালক প্রাণে বেঁচে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন৷ পুলিশ পুকুর থেকে বাসটি তুলে নিয়েছে৷ এদিকে, স্থানীয় জনগণ একপ্রকার পুলিশ প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এই দূর্ঘটনার জন্য৷ যেখানে একটি সিটিরাইড বাসের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সর্বাধিক কুড়ি জন, সেখানে চল্লিশ জন যাত্রী নিয়ে কিভাবে বাসটি থানার সামনে দিয়ে যাতায়াত করছিল৷ নিত্যদিন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে এইভাবে বাসগুলি যাতায়াত করে চলেছে, কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে কোন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা৷
এদিকে, এদিনের মর্মান্তিক দূর্ঘটনার জন্য মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার শোক প্রকাশ করেছেন এবং প্রয়াতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন৷ পাশাপাশি, আহতদের দ্রুত আরোগ্যও কামনা করেছেন তিনি৷
এদিকে, আজ বিলোনীয়া মহকুমার রাজনগর ব্লকের চোত্তাখোলায় মিনি বাস দূর্ঘটনায় ছয় জনের মৃত্যু এবং ৩৪ জন যাত্রী আহত হয়েছেন৷ দূর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী৷ আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে৷ একই সঙ্গে দূর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় যথাসম্ভব সহায়তা দিতে রাজ্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দল৷
2016-01-07