নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ ডিসেম্বর৷৷ অপহৃত চার গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মীর ফিরে আসার ক্ষেত্রে কোন মুক্তিপণ দেওয়া হয়নি৷ রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে জোর গলায় এই দাবি করেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক এ কে শুক্লা৷ তবে অপহরণ কাণ্ডে ধৃতদের জেরা করে ৪৮,৮৫,৮৭০ টাকা উদ্ধার হয়েছে, একথাও তিনি জানিয়েছেন৷ ফলে, উদ্ধার হওয়া টাকার উৎস কি, তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে৷ এদিকে, অপহৃত সুব্রত দেববর্মার ভাইয়ের কোন অপরাধিক রেকর্ড রয়েছে কিনা সেই প্রশ্ণের জবাবে ডিজিপি শ্রী শুক্লা জানিয়েছেন, এবিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে৷
এদিন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অপহরণকাণ্ডের বৃত্তান্ত তুলে ধরেন৷ তিনি জানান, গত ২৪ নভেম্বর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের তৈদু শাখার চার কর্মীকে দুসৃকতীকারীরা অপহরণ করেছিল৷ তৈদু-তেলিয়ামুড়া সড়কে অপহরণ সংগঠিত হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে তিন জন গাড়ীতে এবং একজন বাইকে করে অফিসের কাজ সেরে প্রতিদিনের মত সেদিনও বাড়ি ফিরছিলেন৷ ডিজিপি জানান, অপহরণের পর গাড়ী এবং বাইক অপহরণস্থলে ফেলে রেখে যায়নি অপহরণকারীরা৷ ফলে, অপহৃতদের তল্লাশিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল৷ এবিষয়ে তৈদু থানায় একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়৷ গত ২৬ নভেম্বর আমবাসায় গাড়ীটি এবং তেলিয়ামুড়ায় বাইক উদ্ধার হয়৷ ডিজিপি দাবি করেন, অপহৃতদের উদ্ধারে সবরকম চেষ্টা করেছে পুলিশ৷ গত সোমবার হেলিকপ্ঢারে তল্লাশি চালানো হয়েছে৷ কিন্তু, তাঁদের কোন হদিশ পাওয়া যায়নি৷ অবশেষে শুক্রবার অপহৃত চারজনই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন৷
ডিজিপি জানান, এই অপহরণকাণ্ডের সূত্র ধরে শনিবার দিনভর পশ্চিম জেলা, গোমতী জেলা এবং খোয়াই জেলায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ৷ তাতে ৯ জন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে৷ ধৃতদের জেরায় প্রথমে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৭০ টাকা এবং গভীর রাতে আরো ৪৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে৷ ধৃতদের আজ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে৷ ডিজিপি জানিয়েছেন, তারা কেউই উগ্রপন্থি নন৷ তবে, তাদের মধ্যে চারজন আত্মসমর্পণকারী উগ্রপন্থি৷ অবশ্য সেই চারজন আত্মসমর্পণকারী উগ্রপন্থির পরিচয় গোপন রেখেছেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক৷
এদিকে মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃতরা ফিরে এসেছেন তাঁদের পরিবারের এই দাবি পত্রপাঠ খারিজ করে দেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক একে শুক্লা৷ তিনি বলেন, অপহৃতরা ফিরে আসার ক্ষেত্রে কোন মুক্তিপণ দেওয়া হয়নি৷ কারণ, তাঁদের ফিরে আসার ক্ষেত্রে আদৌ কোন টাকা দেওয়া হয়েছে কিনা এ যাবতীয় তথ্য পুলিশের জানা নেই৷ ডিজিপি এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অপহৃতদের মধ্যে একজন পুলিশকে বলেছেন তিনি কোন টাকা দেননি৷
উল্লেখ্য, শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যাঙ্ক কর্মী রক্তিম ভৌমিকের বাবা রতন ভৌমিক স্পষ্ট জানিয়েছিলেন ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহৃতরা ফিরে এসেছেন৷ এমনকি মুক্তিপণ দেওয়া না হলে তাঁরা ফিরে আসতে পারতেন না, সে কথাও জোর গলায় রতনবাবু দাবি করেছিলেন৷ পাশাপাশি, তিনি অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশের অসহযোগীতার অভিযোগ তুলেছিলেন৷ রতনবাবুর এই অভিযোগও খারিজ করেছেন ডিজিপি৷ তাঁর বক্তব্য, অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশ সবরকমের চেষ্টা করেছে৷ অপহরণ করে তাঁদেরকে যেখানে রাখা হয়েছিল তার খুব কাছাকাছি পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল৷ তিনি জোর গলায় দাবি করেন, পুলিশ নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক মতোই পালন করেছে৷
এদিকে অপহরণকারীদের কাছে অস্ত্র ছিল, এধরণের কোন তথ্য রাজ্য পুলিশের জানা রয়েছে কিনা এই প্রশ্ণের জবাবে ডিজিপি জানান, বিষয়টির তদন্ত চলছে৷ তবে, তারা কোন জঙ্গি দলের সদস্য নন৷ রাজ্যে নতুন কোন জঙ্গি সংগঠনও গড়ে উঠেনি৷
2017-12-04