উদয়পুর, ১৩ জুলাই – ত্রিপুরার আধ্যাত্মিক ও পর্যটন ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা। আজ গোমতী জেলার উদয়পুরের বনদুয়ার এলাকায় আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহার হাত ধরে সম্পন্ন হলো বহু প্রতীক্ষিত ‘৫১ শক্তিপীঠ পার্ক’-এর শিলান্যাস ও ভূমি পূজন।
প্রায় ৯৭.৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে গড়ে তোলা হবে এই বিশেষ প্রকল্প, যেখানে থাকবে ভারতজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৫১টি পবিত্র শক্তিপীঠের অবিকল প্রতিরূপ। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, দেবী সতীর দেহের খণ্ডিত অংশ পতিত হয়ে যে ৫১টি স্থানে শক্তিপীঠের সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রতীকী উপস্থিতি ঘটবে এই পার্কে। এর মাধ্যমে ত্রিপুরার আধ্যাত্মিক পর্যটন শিল্পে যুক্ত হবে এক অনন্য পালক।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, পর্যটন ও পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, মাতাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, বাগমা বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, কাকড়াবন-শালগড়া কেন্দ্রের বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, গোমতী জেলার জিলা সভাধিপতি দেবল দেব রায়, পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা, গোমতী জেলার জেলাশাসক-সহ একাধিক বিশিষ্ট আধিকারিক।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে তৈরি হবে রাজ্যের প্রথম গ্লাস স্কাইওয়াক ব্রিজ, নির্মিত হবে দেশের অন্যতম বৃহৎ নটরাজ মূর্তি, থাকবে ৪০০ আসনের অ্যাম্পিথিয়েটার, পর্যটকদের জন্য থাকবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও বিশ্রামাগার। তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের জন্য এ এক আধ্যাত্মিক ও নান্দনিক অভিজ্ঞতার কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার আধ্যাত্মিক পর্যটন থেকে শুরু করে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের ওপর জোর দিয়ে পর্যটন শিল্পে প্রসার ঘটাতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক শুধু আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বহন করবে না, বরং রাজ্যের অর্থনীতিতেও প্রাণ সঞ্চার করবে। পর্যটন এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে ত্রিপুরার পর্যটন শিল্প জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্ব পাবে। ইতিমধ্যেই মাতাবাড়িকে ঘিরে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটক আসছেন। এই প্রকল্প ত্রিপুরাকে দেশের আধ্যাত্মিক পর্যটন মানচিত্রে অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে। একইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মাতাবাড়িকে কেন্দ্র করে আধ্যাত্মিক পর্যটন বিকাশে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রকল্প তারই একটি মাইলফলক। মুখ্যমন্ত্রী জনগণকে আহ্বান করেন, এই ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে।
ভূমি পূজন উপলক্ষে এদিন উদয়পুর বনদুয়ারে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজারো মানুষ। রাজ্যের পর্যটন বিকাশে এই প্রকল্প যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, তা নিয়ে উপস্থিত সকলের মধ্যেই ছিল প্রবল উৎসাহ ও প্রত্যাশা।

