কৈলাশহর, ২২ জুন : রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কৈলাশহর রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় আবারও উত্তপ্ত। এবার ভর্তি প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রীদের কাছ থেকে ‘কালচারাল ফি’-এর নামে অর্থ আদায় এবং ছাত্র সংসদে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের দুই প্রধান ছাত্র সংগঠন, এসএফআই ও এবিভিপি, একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, যা কলেজের শিক্ষা পরিবেশকে রীতিমতো বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, চলতি বছর ছাত্রীদের জন্য কলেজে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ভর্তির ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গত ১৩ই জুন থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতেই অভিযোগ ওঠে, কলেজ ইউনিফর্ম পরিহিত কিছু ছাত্রছাত্রী এবং এবিভিপি-র হেল্প ডেস্ক ব্যবহার করে ছাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে রশিদ দিয়ে আদায় করা হচ্ছে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ছাত্র মহল ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দ্রুত প্রতিবাদে নামে এসএফআই ও এনএসইউআই দাবি তোলে যে সরকার যেখানে বিনামূল্যে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে টাকা নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
বিষয়টি নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো কলেজ অধ্যক্ষ ডঃ পিনাকি পালের সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরতের দাবি জানায়। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ জারি করে জানায় যে, কলেজের পক্ষ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, নোটিশ জারির পরেও ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় অব্যাহত রয়েছে এবং অনেকেই ভয়ে মুখ খুলছেন না।
বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি চলাকালীন পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এবিভিপি-র অভিযোগ, এসএফআই-এর একদল সদস্য হঠাৎ করেই কলেজ কাউন্সিলের রুমে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। উত্তপ্ত পরিস্থিতির খবর পেয়ে কৈলাশহর থানার ওসি সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
এবিভিপি-র বিভাগ সংযোজক অনুপ কান্তি মজুমদার সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানান, “শান্তিপূর্ণ ভর্তি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতেই এসএফআই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হট্টগোল ও ভাঙচুর করেছে। এবিভিপি কোনো ছাত্রীর কাছ থেকে টাকা নেয়নি। এসএফআই সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।” তিনি আরও জানান, এবিভিপি সোমবার কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তের দাবি জানাবে, অন্যথায় আন্দোলনে নামবে সংগঠন।
অন্যদিকে, এসএফআই-এর বিভাগীয় সভাপতি সাহাব উদ্দিন পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, “এবিভিপি-র নাম ব্যবহার করে কিছু ছাত্রছাত্রী সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছে।
বিষয়টি সামনে আসতেই তারাই ষড়যন্ত্র করে কলেজ কাউন্সিল ভাঙচুরের নাটক করেছে।” তাঁর দাবি, গত সাত বছর ধরে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি, তাই কাউন্সিল কক্ষ তালাবদ্ধ থাকাই উচিত। তিনি আরও জানান, কলেজের অধ্যক্ষকে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়েছে এবং অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে টাকা ফেরতের দাবি জানানো হয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ ডঃ পিনাকি পাল অনুপস্থিত বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে যে তিনি নিয়মিত কাউকে দায়িত্ব না দিয়েই কলেজ থেকে বেরিয়ে যান, যার ফলে কলেজ কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এই প্রশাসনিক স্থবিরতা এবং ছাত্র রাজনীতির দ্বন্দ্ব কলেজের শিক্ষার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
কলেজের দপ্তর জানিয়েছে, এ নিয়ে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বহু অভিভাবক এবং সচেতন মহল বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সকলেরই প্রশ্ন, কৈলাশহর রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ কবে ফিরে আসবে?

