২১ জুন, ২০২৫ — সারা দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আসামেও উদযাপিত হল ১১তম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। এই উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাকসা জেলার সলবাড়িতে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের দুই হাজারেরও বেশি মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন, যা সলবাড়িকে এক উৎসবমুখর কেন্দ্রে পরিণত করে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়নের (বিটিআর) মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য প্রমোদ বড়ো, মন্ত্রী জয়ন্ত মল্ল বড়ুয়া ও উরখাও গোরা ব্রহ্ম, স্থানীয় বিধায়ক ফণীধর তালুকদারসহ বিটিআর-এর একাধিক কাউন্সিল সদস্য। সম্মিলিত যোগ সেশনের মাধ্যমে শুরু হয় এই কর্মসূচি, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা একসাথে বিভিন্ন যোগাসন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামে অংশ নেন। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা যোগ সেশন শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, “যোগা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার মূল চাবিকাঠি, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।” একইসঙ্গে তিনি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সুশাসন সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অগ্রাধিকার নিয়েও মন্তব্য করেন।
যোগ দিবস উপলক্ষে আজই দিফু শহরের সার্সিং টেরন লংকুং হ্যাবে মাল্টিপারপাস স্পোর্টস কমপ্লেক্সেও এক উৎসবমুখর কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে কার্বি আংলং জেলা প্রশাসন ও কার্বি আংলং অটোনোমাস কাউন্সিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেএএসি-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য তুলিরাম রংহাং, হাওরাঘাটের বিধায়ক দার্সিং রংহাং ও দিফুর বিধায়ক বিদ্যা সিং ইংলেং, ম্যাক সদস্যবৃন্দ, জেলা কমিশনার নিরোলা ফাংচোপি, পুলিশ সুপার সঞ্জীব সাইকিয়া সহ অন্যান্য গণ্যমান্য অতিথিবৃন্দ। একটি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান, এরপর বিশাখাপত্তনম থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সকলে মিলিত হন একটি সুশৃঙ্খল যোগ সেশনে, যেখানে শরীর ও মননের ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন আসন ও প্রাণায়াম চর্চা করা হয়। এই উপলক্ষে তুলিরাম রংহাং বলেন, “যোগ শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি আত্মিক শান্তি এবং জাতীয় সুস্থতারও একটি পথ।” অনুষ্ঠান শেষে ১৮ জুন অনুষ্ঠিত জেলা পর্যায়ের যোগ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
যোগ দিবসের আগেই সোনাপুরে মাদকবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করে সশস্ত্র সীমা বল-এর ১ম ব্যাটালিয়ন। চামতা পাথর হাই স্কুলে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেন ১৫ জন এসএসবি কর্মী, ১৫০ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিক্ষক এবং স্থানীয় গ্রামবাসী। কমান্ড্যান্ট সুনীল কৌশিকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল তরুণ প্রজন্ম ও উপজাতি সম্প্রদায়কে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং তাদের মধ্যে প্রতিরোধমূলক শিক্ষা বিস্তার করা। জাতিসংঘের ১৯৮৭ সালের ঘোষণা অনুযায়ী ২৬ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাদক সেবন ও পাচার বিরোধী দিবস। এই বছরের এসএসবি উদ্যোগে কেবল মাদকের ক্ষতির কথাই নয়, বরং চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়। সচেতনতামূলক এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার মাধ্যমে মাদক সেবন প্রতিরোধ, আসক্তির সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, এবং বিদ্যালয় ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে প্রতিরোধ আন্দোলনের সক্রিয় অংশীদার হিসাবে তৈরি করা। এসএসবি কর্মকর্তারা বলেন, “সীমান্ত সুরক্ষা ছাড়াও সমাজের অভ্যন্তরেও জাতীয় অখণ্ডতা রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আর তারই অংশ এই সচেতনতামূলক অভিযান।”
এই তিনটি পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে গোটা আসামজুড়ে স্বাস্থ্য, ঐক্য এবং মাদকবিরোধী সচেতনতাকে কেন্দ্র করে এক শক্তিশালী সামাজিক বার্তা তুলে ধরা হল — সুস্থ দেহে, সুস্থ মনেই গঠিত হয় এক সুস্থ সমাজ।
2025-06-21

