পৃথক স্থানে সিপিএম-বিজেপি সংঘর্ষ, আহত বহু, থানা ঘেরাও, পার্টি অফিস ভাঙচুর, পরিস্থিতি উত্তপ্ত, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের জল্পনা উস্কে দিলেন সমীর বর্মণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, চড়িলাম / বিশালগড় / কমলাসাগর, ৯ নভেম্বর৷৷ রাজনৈতিক সংঘর্ষে আবারও উত্তাল রাজ্য৷ পৃথক স্থানে সিপিএম ও বিজেপি’র মধ্যে সংঘর্ষে উভয় দলের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ উভয় দলের পার্টি অফিসও ভাঙচুর করেছেন কর্মী সমর্থকরা৷ রাজ্যে উত্তপ্ত এই পরিস্থিতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের জল্পনা উস্কে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীর বর্মণ৷ সংঘর্ষের পর রাতে বিশালগড়ে দাঁড়িয়ে বলেন, রাজ্যে এখন কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোট করতে গেলে, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া তা কোনভাবেই সম্ভব নয়৷

বৃহস্পতিবার মুড়াবাড়িতে বিজেপি ও সিপিএমের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়দলের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ এই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে বিজেপি ও সিপিএমের কর্মী সমর্থকরা উভয়দলের পার্টি অফিসে ভাংচুড় চালিয়েছে৷ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মুড়াবাড়ি সহ বিস্তির্ণ এলাকায় বিশাল পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ খবর পেয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব, সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক এবং বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন৷ এদিকে, উভয় দলের পার্টি অফিসগুলিতে দলীয় কর্মী সমর্থকরা জড়ো হয়েছেন৷ পরিস্থিতি যেকোন মুহুর্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে, সেই আশঙ্কাও করছে পুলিশ৷ তাই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চারিদিকে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ৷

এদিন, মুড়াবাড়ি এলাকায় সিপিএম কর্মীদের সাথে বিজেপি কর্মীদের বাকবিতন্ডাকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত বলে দাবি সিপিএমের৷ সিপিএমের অভিযোগ, স্থানীয় এক সিপিএম নেতাকে বিজেপি কর্মী মদমত্ত অবস্থায় গালাগাল দিয়েছিলেন৷ এর থেকেই দুই দলের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়৷ এক সময় তা রণক্ষেত্রের রূপ ধারন করে৷ এদিকে, বিজেপি’র অভিযোগ, বিশ্রামগঞ্জে দলীয় সম্মেলন থেকে ফেরার পথে সিপিএম কর্মীরা বিজেপি’র জনৈকা মহিলা কর্মীকে আক্রমণ করেন৷ এই খবর পেয়ে যুব মোর্চার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধারে গেলে তাদের উপরও সিপিএম কর্মীরা আক্রমণ করেন৷

অভিযোগে জানা গেছে, মুড়াবাড়ি এলাকায় এদিন রাত পৌনে ৮ টা নাগাদ সিপিএম কর্মীদের উপর বিজেপি কর্মীরা হামলা চালান৷ তাতে চারজন সিপিএম কর্মী গুরুতর আহত হন৷ সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তখন, এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় সিপিএম কর্মীরা হাসপাতালের সামনে আগরতলা-সাব্রুম জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন৷ একই সময়ে বিজেপির একটি গাড়ি ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল৷ অভিযোগ, অবরোধকারী সিপিএম কর্মীরা বিজেপির গাড়িতে হামলা চালান৷ তাতে, বিজেপির এক নেতা সহ তিন জন আহত হন৷ বিজেপি’র আরো দাবি, ঐ নেতা বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে আক্রান্ত কর্মীদের দেখতে যাচ্ছিলেন৷ তখন তার গাড়ি ভাঙ করে সিপিএমের কর্মীরা৷ এই ঘটনায় প্রতিবাদে বিজেপি বিশালগড় থানা ঘেরাও করে৷ একই সাথে উত্তেজিত বিজেপি কর্মীরা থানার উল্টো দিকে শাসকদল সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের অফিসে ভাংচুড় চালান৷ এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কড়ইমুড়া এলাকায় সিপিএম বিজেপির পার্টি অফিসে ভাংচুড় চালায়৷ পাল্টা বিজেপিও ঐ এলাকায় সিপিএমের পার্টি অফিস ভাংচুড় করে৷

সমগ্র ঘটনায় বিশালগড় মহকুমা জুড়ে পরিস্থিতি প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশাল পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷ সূত্রের খবর, চড়িলাম বাজারে সিপিএম ও বিজেপি পার্টি অফিসে প্রচুর কর্মী সমর্থক জড়ো হয়েছেন৷ যে কোন সময় দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধতে পারে, সেই আশঙ্কাও করছে পুলিশ৷

এদিকে, খবর পেয়ে আগরতলা থেকে ছুটে গেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব, সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক এবং বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ৷ জানা গেছে, সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সিপাহীজলা জেলা পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলেছেন৷ বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে আটকে থাকা বিজেপি কর্মীদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার জন্য পুলিশ সুপারকে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য আইজি আইন শৃঙ্খলার সাথেও তিনি কথা বলেছেন৷

এই পরিস্থিতির খোজ খবর নিতে যান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীর বর্মণ৷ তিনি বলেন, রাজ্যের পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে৷ বিরোধী সমর্থকদের উপর ক্রমাগত আক্রমণ করছেন শাসক দলীয় সমর্থকরা৷ এমন পরিস্থিতি থাকলে আগামী বিধানসভা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা যাবে না৷ তাই তিনি মনে করেন, রাজ্যে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন৷ কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৮৮ সালেও এমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল৷

এদিকে, আজ রাতে শেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, বিজেপি কর্মীরা বিশালগড় থানা ঘেরাও তুলে নিয়েছেন৷ তবে, সমগ্র মহকুমা জুড়ে পরিস্থিতি থমথমে হয়ে রয়েছে৷

এদিকে, কমলাসাগর বিধানসভার অধীন পান্ডবপুর পঞ্চায়েতের নাকের ডগায় রয়েছে কমিউনিটি হল৷ আর তার পাশেই রয়েছে পুরোনো দুইটি শৌচালয়৷ ডুকলী ব্লক থেকে শেষ পর্যন্ত স্থীর হয় সেই গুলি ভেঙ্গে নতুন ভাবে নির্মাণ করা হবে৷ কিন্তু আচমকা সেই গুলি ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা৷ এই খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ১২টা নাগাদ বিজেপি কর্মীরা ছুটে যান এবং হাতে নাতে আটক করেন কয়েক জন শ্রমিকদের৷ তাদের জিজ্ঞাসা করতেই তারা জানান, পঞ্চায়েত সচিবের অনুমতিতে ইটগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু সরকারী ইট কিভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ণ তুলেন বিজেপি কর্মীরা৷ তাই তারা সচিব পিন্টু দে’কে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ তাদের বক্তব্য, সচিব প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ইট চুরির সাথে জড়িত৷ তাই তাকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান বিজেপি কর্মীরা৷ খবর পেয়ে ছুটে আসে আমতলী থানার পুলিশ৷ এদিকে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সিপিএমের সমর্থকরা ছুটে আসেন এবং পঞ্চায়েত অফিস কেন ঘেরাও করা হয়েছে, তাই বিজেপি কর্মীদের মারধোর শুরু করে৷ এই ঘটনায় চারিদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ আহত হন বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী৷ অভিযোগ, পুলিশের সামনেই বিজেপি কর্মীদের মারধর করেছেন সিপিএম কর্মীরা৷ বিজেপির দাবি, ইটগুলি স্থানীয় সিপিএমের নেতাদের বাড়ীতে রয়েছে৷ এই ঘটনায় বেশ উত্তেজনা ছড়ায় পান্ডবপুর পঞ্চায়েতের ফুলতুলী এলাকায়৷

এদিকে, কাঠালিয়া পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিজেপি ও শাসক দলের কর্মীদের মধ্যে বচসায় গুরুতর জখম হয়েছেন বিজেপি সমর্থক৷ অভিযোগ, শাসক দলের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত নকুল মন্ডলের নেতৃত্বে শতাধিক সিপিএম কর্মী হামলা চালায় বিজেপি কার্যকর্তাদের উপর৷ এই ঘটনায় সিপাহীজলা জেলার যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ ঘোষ গুরুতর জখম হয়ে জি বি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ বিজেপি মন্ডল নেতৃত্বের অভিযোগ, কাঠালিয়া পঞ্চায়েতে দূর্নীতি ইস্যুতে বিজেপি কার্যকর্তারা পঞায়েত অফিসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত৷ রাতে বাড়িঘরে শাসক দলের সমর্থিতরা হামলা হুজ্জুতি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বিজেপি নেতৃত্ব৷ এই ঘটনার দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে যুব মোর্চা৷