নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ সেপ্ঢেম্বর৷৷ চাকুরীচ্যুত ১০,৩২৩ জন শিক্ষক এবং ১২,০০০ অশিক্ষকের চাকুরী নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে৷ একদিকে সরকার বলছে আইন মেনে ১২,০০০ অশিক্ষকের চাকুরী দেওয়া হচ্ছে৷ অন্যদিকে বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ সংবিধান না মেনে চাকুরী দেওয়া হচ্ছে৷ রাজ্য সরকারের দলতন্ত্রের কারণে গণহারে চাকুরী খোয়াতে হচ্ছে৷ বিজেপি ক্ষমতায় আসলে সংবিধান মেনে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে চাকুরীচ্যুতদের৷ শুধু তাই নয় চাকুরী দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিজেপি ক্ষমতায় এলে সংবিধান মেনে চলবে৷ সরকার, বামপন্থী যুব সংগঠন এবং বিজেপির মধ্যে এই চাকুরী ইস্যুতে রীতিমতো রাজনৈতিক তরজা চলছে৷
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য বামফ্রন্ট সরকারের চাকুরী নীতি নিয়ে তিব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন৷ পাশাপাশি তিনি দলের রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধরের ই-মেল সংক্রান্ত বিষয়টিও স্পষ্টিকরণ করেছেন৷ তিনি বলেন, রাজ্য বামফ্রন্ট সরকার ১০,৩২৩ জন চাকুরীচ্যুত শিক্ষক এবং ১২০০০ অশিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করেছেন সুনীল দেওধর৷
অন্যদিকে, আদালতের রায় অবমাননা করেনি রাজ্য সরকার৷ এমনকি ১২০০০ অশিক্ষক পদে অবৈধভাবে কোন নিয়োগ করা হবে না৷ তাই, অশিক্ষক পদে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নোটিশের জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে রাজ্য সরকার৷ সোমবার মহাকরণে সাংবাদিকদের এই কথা জানান শিক্ষা মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ তাঁর কথায়, আইনি সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্টের নোটিশের জবাব দেওয়া হবে৷ পাশাপাশি তিনি বলেন, ১২০০০ অশিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন বিভ্রান্তি কিংবা চিন্তার বিষয় নেই৷
সম্প্রতি জনৈক দেবাশিষ পাল চৌধুরী ১২০০০ হাজার অশিক্ষক পদের নিয়োগের বৈধতার প্রশ্ণে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হন৷ চাকুরীচ্যুত ১০৩২৩ জন শিক্ষককে পুণর্র্বসনের উদ্দেশ্যেই নতুন অশিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাতে গত ২৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অবমাননা করেছে রাজ্য সরকার এই অভিযোগ আনেন তিনি৷ এরই প্ররিপ্রেক্ষিতে, সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গ্রহণ করে রাজ্য সরকারের কাছে ২ সপ্তাহের মধ্যে জবাব চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে৷
এদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে চাকরী বাতিলের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীকে বিজেপির রাজ্য প্রভারী সুনিল দেওধর এক ই-মেল বার্র্তয় অশিক্ষক পদে চাকুরী বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী৷ এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী এদিন জানান, কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী দেওধরের ই-মেল সম্পর্কে রাজ্য সরকারের কাছে স্পষ্টিকরণ চেয়েছে৷ তখনই জানা সম্ভব হয়েছে অশিক্ষক পদে চাকুরী বাতিলের জন্য রাজ্যে ষড়যন্ত্র চলছে৷
শিক্ষামন্ত্রী এদিন বলেন, অশিক্ষক পদে চাকুরী নিয়ে কাউকেই বিভ্রান্ত কিংবা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবেনা৷ নিয়োগ প্রক্রিয়া যথারিতি চলছে৷ বাছাই করা প্রার্থীদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে অফার পাঠানো হবে৷
এদিকে, রাজ্য সরকার চাকরীর দরজা খোলে দিয়ে বেকারদের স্বস্তি দিতে চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ বিজেপি’র রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর চাকরী খতম করতে উঠেপড়ে লেগেছে৷ ১৩ হাজার নতুন চাকরীর সরকারী প্রয়াসকে বানচাল করতে দেওধর কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ মন্ত্রকে চিঠি দিয়েছেন৷ সোমবার মেলারমাঠ ছাত্র যুব ভবনে শহিদ গৌতম দত্তের শহিদান দিবসে সুনীল দেওধর ও বিজেপির বিরুদ্ধে এমনভাবেই তোপ দেগেছেন, ডি ওয়াই এফ আই রাজ্য সম্পাদক অমল চক্রবর্তী৷ গেরুয়া শিবির দক্ষিণপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী৷ তাঁর দাবি, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে বিজেপি৷ তৎকালীন কংগ্রেস ১০, ৩২৩ জনের চাকরী বানচালের অন্যতম কারিগর৷ সম্প্রতী ১৩ হাজার চাকরী দেওয়ার বামপন্থীদের চেষ্টাকে মহারাষ্ট্রের সংঘ নেতা সুনীল দেওধর বাতিল করে ভোটে ইস্যু বানাতে চেষ্টা চালাচ্ছে৷ মানুষকে বোকা বানিয়ে বাকাপথে ক্ষমতা দখল করা সংঘ পরিবারের জন্মগত অভ্যাস৷ ১৯৮০ সনের ভাতৃদাঙ্গাত্তোর পরিস্থিতিতে শান্তি ফেরানোর আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন গৌতম দত্ত৷ অমল বাবুর মতে রাজ্যে চলমান উদ্ভট পরিস্থিতিতে বিজেপিকে রুখতে গৌতম দত্তের পথ অনুসরণ করতে হবে৷ বাম বিরোধী প্রধান শক্তি হিসাবে বিজেপি উত্থান নিয়ে তিনি গভীর উদ্বেগের সুরে গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন বিজেপি’র বিরুদ্ধে৷ বামপন্থী আন্দোলন তেজী করে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠন হবে বিজেপি’র চক্রান্ত নষ্ট করে, দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অমল চক্রবর্তী৷
2017-09-19
