নয়াদিল্লি, ১০ আগস্ট (হি.স.) : “ভারতই সবচেয়ে সহিষ্ণু দেশ।” সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে নাম না করে বৃহস্পতিবার বিদায়ী উপরাষ্ট্রপতি

হামিদ আনসারির সমালোচনা করে বললেন ভাবি উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া বেঙ্কাইয়া নাইডু। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই প্রচার করা হয়।
উপরাষ্ট্রপতি পদে হামিদ আনসারির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আগামীকাল শুক্রবার দেশের ১৩তম উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন বেঙ্কাইয়া।চলে যাওয়ার আগে রাজ্যসভা টিভিতে এক সাক্ষাতকারে হামিদ বলেন, ‘মুসলিমদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ভর করেছে। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অসহিষ্ণুতা এবং রাষ্ট্র বহির্ভূত নজরদারি ব্যবস্থা জাঁকিয়ে বসেছে। সংখ্যালঘুর স্বার্থ রক্ষাতেই গণতন্ত্রের মহিমা প্রকাশ পায়। সরকারের নীতির সমালোচনার পরিসর যদি বিরোধীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় তবে গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়। তবে সংখ্যালঘুদেরও দায়িত্ব রয়েছে।’ উপরাষ্ট্রপতি পদ ছাড়ার আগে কারও নাম না করে এই মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এই নিয়ে ভাবী উপ রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, ‘ভারতের সংস্কৃতিই হল একে অপরকে শ্রদ্ধা করা। সংখ্যালঘু বিষয়টি কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই মানুষ ব্যবহার করে। ভারতই সবচেয়ে সহিষ্ণু দেশ। কিছু মানুষ বলছেন, সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নন। এটা একটা রাজনৈতিক প্রচার। সারা বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, সংখ্যালঘুরা ভারতেই সবচেয়ে সুরক্ষিত ও নিরাপদ। তাঁরা প্রাপ্য অধিকার পান। ভারতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে বলে যে প্রচার চলছে সেটাও ঠিক নয়। রাজনৈতিক নেতা নয়, জনগণ ও সভ্যতার কারণেই ভারতীয় সমাজ বিশ্বের সবচেয়ে সহিষ্ণু। এই সহিষ্ণুতার জন্যই এদেশে গণতন্ত্র এত সফল হয়েছে।’
প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া আরও বলেছেন, কোনও একটি গোষ্ঠীকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়। এর ফলে অন্য গোষ্ঠীর মানুষ অসন্তুষ্ট হতে পারেন। সেই কারণেই সব গোষ্ঠীর মানুষকে সমানভাবে দেখা উচিত। তোষণ বাদ দিয়ে সবার জন্য ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, ভারতে সংখ্যালঘুরা কোনওদিন অবিচারের শিকার হননি। তাঁরা সংবিধান অনুসারে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্য অধিকার পেয়েছেন। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের জন্যই ভারত অনন্য। ভারতীয়দের রক্ত ও মস্তিষ্কে সর্বধর্ম সদ্ভাব ও ধর্মনিরপেক্ষতা রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে গোরক্ষকদের তাণ্ডব এবং গণপিটুনির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে সরব হয়েছেন আনসারি। তবে বেঙ্কাইয়া বলেছেন, ভারত একটি বিশাল দেশ। এই ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিচ্যুতি ছাড়া আর কিছু নয়। যদিও ধর্মের নামে সহ-নাগরিকদের উপ হামলার পক্ষে কোনও যুক্তি থাকতে পারে না। এই ধরনের ঘটনার নিন্দা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ তৈরির জন্য এই ধরনের ঘটনাকে ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেকে আবার আন্তর্জাতিক স্তরে এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়ে দেশের বদনাম করছেন। মূল সমস্যা হল ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে দেখে রাজনৈতিক দলগুলি। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে আনসারির সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় | তিনি বলেছেন, ‘আগে তিনি এমন কথা বলেননি। এখন যাওয়ার আগে একথা বলছেন। মনে হচ্ছে রাজনৈতিক পদ পাওয়ার জন্যই এমন কথা। এসব তাঁকে মানায় না।’ তিনি আরও বলেছেন, আনসারি ভুল করেছেন। তবে তা ইচ্ছাকৃত না ভুল বশত তা বলতে পারবেন না। অপরদিকে শাহনাওয়াজ হুসেন বলেছেন, ‘মুসলিমদের কাছে ভারতের থেকে ভাল দেশ নেই। হিন্দুদের মতো ভাল বন্ধু নেই।’ বিজেপি নেত্রী এবং জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য প্রীতি গান্ধীর টুইট, আনসারিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরাই ক্ষমতার শীর্ষে বসিয়েছেন।
এর আগে, হামিদ আনসারির বিদায় বেলায় তাঁকে নিয়ে ভালভাল কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । তার আগে রাজ্যসভায় তাঁকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কূটনীতিক হিসেবে আনসারির প্রশংসা করেন মোদী । বলেন, বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে তিনি আনসারির পরামর্শ নিয়ে উপকৃত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হামিদ আনসারির প্রশংসায় দরাজ হলেও উদার হতে পারেনি বিজেপি। হামিদের সমালোচনায় সরব বিজেপি বলেছে কোনও রাজনৈতিক দলে পদ পাওয়ার জন্যই এমন মন্তব্য করা হয়েছে।
