নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুলাই৷৷ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিদ্রোহ তৃণমূল কংগ্রেসে৷ কংগ্রেস মনোনিত এবং সিপিএম

সমর্থিত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মীরা কুমারকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সমর্থন জানিয়েছেন৷ তাই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন প্রদেশ তৃণমূলের বিধায়করা৷ সুদীপবাবুদের সাফ কথা, এনডিএ সমর্থিত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকে তাঁরা সমর্থন জানাবেন৷ অবশ্য তার আগেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন প্রদেশ তৃণমূল বিধায়কদের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দল৷ এদিন কলকাতায় পার্থবাবু বলেন, কংগ্রেস ছেড়ে সুদীপবাবুরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন৷ এখন টাকার লোভে বিজেপি’র দিকে তাঁদের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে৷ তাই, এমন বিধায়কদের সাথে তৃণমূল কংগ্রেস কোন সম্পর্ক রাখতে চায় না৷ এই খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সুদীপবাবু জানান, নীতির প্রশ্ণে সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমর্থন সম্ভব নয়৷ তাই দলনেত্রী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মীরা কুমারকে সমর্থন জানালেও, প্রদেশ তৃণমূল বিধায়করা এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকেই সমর্থন জানাবে৷ এক্ষেত্রে আগামী বুধবার তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বদের সাথে বৈঠকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, জানান সুদীপ রায় বর্মণ৷
আগামী ১৭ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন৷ এনডিএ শিবিরের প্রার্থী হয়েছেন বিহারের প্রাক্তন রাজ্যপাল দলিত নেতা রামনাথ কোবিন্দ৷ ইউপিএ শিবিরও দলিত প্রার্থী তুলে ধরেছে৷ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষা মীরা কুমার৷ তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্ত তিনি সিপিএমেরও পছন্দের প্রার্থী হওয়ায় দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ প্রদেশ তৃণমূলের বিধায়করা৷ সুদীপ রায় বর্মণ সহ ছয় বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা, দীবাচন্দ্র রাঙ্খল, বিশ্ববন্ধু সেন, দিলীপ সরকার এবং প্রণজিৎ সিংহ রায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মীরা কুমারকে সমর্থন করবেন না বলে একমত হয়েছেন৷ কারণ, রাজ্যে সিপিএমের বিরোধীতা করে কেন্দ্রে তাঁদের সাথে জোট করেছে তৃণমূল৷ সিপিএমের প্রতি ঘনিষ্ঠতা মমতার৷ ফলে, রাজ্যের রাজনীতিতে মানুষকে বোঝাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে দলীয় বিধায়কদের৷ যেখানে তৃণমূল রাজ্যে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেখানে কেন্দ্রে তারা সিপিএমের সঙ্গে জোট করে কিভাবে, প্রশ্ণ সুদীপবাবুদের৷ তাঁদের আরো যুক্তি, সিপিএম মীরা কুমারকে সমর্থন জানিয়েছে৷ ফলে, প্রদেশ তৃণমূল বিধায়করা কোনভাবেই মীরা কুমারকে সমর্থন করবেন না৷
এদিন পার্থবাবু বলেন, আমাদের দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তাই করব৷ ত্রিপুরার বিধায়করা যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছিলেন, তাঁরা কেউ খাতায় কলমে তৃণমূলের সদস্য নন৷ টাকার কাছে মাথা নত করে তারা বিজেপিতে ভিড়েছেন৷ কাজেই দল তাঁদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করল৷ সেইসঙ্গে তিনি জানান, ত্রিপুরায় তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তকে৷
এরপরই সুদীপবাবু সাংবাদিক সম্মেলনে কড়া সুরে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের সাথে অসহযোগিতা করছেন৷ যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা হলেও, তাঁদের সাথে কথা বলার সুযোগ হচ্ছে না৷ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলীয় হুইপ বলে কিছু নেই৷ তবে, সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে পার্থবাবু যা বলেছেন, তা যদি রাজনৈতিক হয় তাহলে আলোচনা করা উচিৎ৷ সুদীপবাবুর দাবি, এবিষয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি৷ দল তাঁদের বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন কিছুই জানানো হয়নি৷ সুদীপবাবু চড়া সুরে বলেন, তাঁদের বিষয়ে পার্থবাবু সর্বশেষ কথা বলার লোক নন৷ এবিষয়ে দলের তরফে কোন নির্দেশ পাইনি৷
সাথে তিনি যোগ করেন, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোন সহযোগীতা করছেন না৷ কারোর সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না৷ ফোনেও তাঁদের পাওয়া যায় না৷ ফলে, রাজ্য রাজনীতির পরিস্থিতি নিয়ে শলা পরামর্শ করা যাচ্ছে না৷ বিষয়গুলি দলের রাজ্য নেতৃত্বদের জানানো হবে৷ সুদীপবাবু বলেন, আগামী বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হবে৷ রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা তাঁদের কাছে তুলে ধরা হবে৷ এরপরই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ তিনি জানান, রাম মাধব রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থনের জন্য ফোন করেছিলেন৷ তাঁকে জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়৷ আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে যা সিদ্ধান্ত হবে তা জানানো তাঁকে হবে৷

