নয়াদিল্লী, ২৮ মে : কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রবীন নাগরিক ও ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বাড়ির কাছে টিকাকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, কোভিড-১৯এর টিকাকরণের জন্য জাতীয় বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী (এনইজিভিএসি) সেটি মেনে নিয়েছে। এ সংক্রান্ত সুপারিশগুলিও স্বাস্থ্য মন্ত্রক গ্রহণ করেছে। বাড়ির কাছে কোভিড টিকাকরণ কেন্দ্র (নিয়ার টু হোম কোভিড ভ্যাকসিনেশন সেন্টারর্স- এনএইচসিভিসি) ব্যবস্থা করার জন্য সম্প্রদায়গত উদ্যোগ নিতে হবে, যেটি জনমুখী হওয়া প্রয়োজন।
কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশের মাধ্যমে প্রবীন নাগরিক ও ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের শারীরিক সমস্যার জন্য টিকাকরণ কেন্দ্রে যাওয়ার অসুবিধাগুলি দূর করতে উদ্যোগী হয়েছে। এই সুপারিশগুলির উদ্দেশ্য হল সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে ও সুরক্ষার দিকটি বিবেচনা করে বিভিন্ন সময় পরিচালনগত পরামর্শগুলিকে বজায় রেখে টিকাকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা।
বাড়ির কাছে এই টিকাকরণ কেন্দ্রগুলি যাদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে তারা হলেন :
১. ষাটোর্ধ যেসব নাগরিক টিকা নেননি অথবা টিকার একটি ডোজ নিয়েছেন
২. ৬০ বছরের কম বয়সি ভিন্নভাবে সক্ষম অথবা যাদের শারীরিক সমস্যা রয়েছে
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এই মর্মে যে নীতি-নির্দেশিকা পাঠিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে :
- স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর আওতাভুক্ত নয় এ ধরণের কোনো জায়গায় সম্প্রদায়গত উদ্যোগের মাধ্যমে টিকাকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। মূলত কমিউনিটি সেন্টার, আরডাব্লুএ সেন্টার, গ্রুপ হাউসিং সোস্যাইটি সেন্টার, পঞ্চায়েত ভবন, স্কুল বাড়ি বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি জায়গায় এই কেন্দ্রগুলির ব্যবস্থা করতে হবে।
- ডিস্ট্রিক্ট টাস্ক ফোর্স (ডিটিএফ), আর্বান টাস্ক ফোর্স (ইউটিএফ) নির্দিষ্ট নাগরিকদের জন্য এনএইচসিভিসি-র ব্যবস্থা করবে যাতে বর্তমান স্বাস্থ্য পরিষেবা অক্ষুন্ন রেখে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য টিকাকরণের ব্যবস্থা করা যায়। এক্ষেত্রে টিকা নষ্ট না হওয়ার বিষয়টিকেও বিবেচনা করতে হবে।
- এনএইচসিভিসি-কে টিকাকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত রাখা হবে। টিকার ব্যবস্থা করা, সেগুলি টিকাকরণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মানব সম্পদের যোগান টিকাকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আধিকারিককে করতে হবে।
- নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য অথবা আরডাব্লুএর-কথা বিবেচনা করে এনএইচসিভিসি-র স্থান নির্বাচন করতে হবে। পঞ্চায়েত ভবন, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনএইচসিভিসি-র ব্যবস্থা করা যাবে। এছাড়াও কমিউনিটি হল, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র, স্কুলবাড়িতে এ ধরণের কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। এইসব কেন্দ্রে টিকাকরণের জন্য নির্দিষ্ট ঘর, প্রতীক্ষালয়, র্যাম্প, পর্যবেক্ষণ কক্ষ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।
- টিকাকরণ কেন্দ্রের শর্তগুলি পূরণ করলে পরে এই ধরণের কেন্দ্রগুলিকে কোইউন পোর্টালে এনএইচসিভিসি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
- এনএইচসিভিসি-তে টিকাকরণের কর্মসূচির পরিকল্পনা ডিটিএফ, ইউটিএফ করবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদাগুলি বিবেচনা করে পুরো কাজটি করতে হবে।
- এনএইচসিভিসি-তে ৫ সদস্যের দল থাকতে হবে। এই দলে নেতৃত্বদান করবেন একজন চিকিৎসক। এছাড়াও টিকা প্রদানকারী, উপভোক্তাকে শনাক্ত করার জন্য এবং কোইউন নিবন্ধীকরণের জন্য টিকাকরণ আধিকারিক, ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ২ জন টিকাকরণ আধিকারিকের প্রয়োজন। এই দুই আধিকারিক টিকা প্রদানকারীকে সাহায্য করবেন। টিকা দেওয়ার পর সুবিধাভোগীদের ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। টিকার দেওয়ার পর কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ আধিকারিকদের জানাতে হবে।
- বৃদ্ধাশ্রমের মতো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মানুষদের যদি এক ছাদের তলায় পাওয়া যায় তাহলে পরিচালনগত নির্দেশাবলী মেনে এনএইচসিভিসি-র ব্যবস্থা করতে হবে।
বিস্তারিত নীতি নির্দেশিকা
- আগে অথবা টিকাকরণ কেন্দ্রে কোইউন পোর্টালে নাম নিবন্ধীকৃত করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে
- সুবিধাভোগীদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। টিকাকরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি এনএইচসিভিসি-র ব্যবস্থা করতে হবে
- এনএইচসিভিসি-তে স্থানীয় স্তরে টিকাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করতে হবে
- চাহিদা অনুযায়ী প্রবীন নাগরিক ও ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য টিকাকরণ কেন্দ্রে নিয়ে আসার বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে
- টিকাকরণ কেন্দ্রে প্রবীন নাগরিক ও ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নির্দেশ দিয়েছে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের সব সুপারিশগুলি জানাতে হবে। বিস্তারিত পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে দেশজুড়ে কোভিড-১৯ টিকাকরণ অভিযান সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়।