নয়াদিল্লি, ৩০ মার্চ (হি.স) : পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি কেরল ও তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার কেরলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচারে এলডিএফ ও ইউডিএফ কে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
পালাক্কড়ে এক জনসভায় তিনি বলেন, কেরলে একমাত্র বিজেপিই পারবে হিংসার সংস্কৃতি বন্ধ করতে। পালাক্কড় থেকে কেরলবাসীকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “এলডিএফ এবং ইউডিএফ যদি আমাদের সংস্কৃতিকে অবমাননা করে, তাহলে আমরা কিন্তু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করব না।” কেরলের পালাক্কড় বিধানসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী হলেন ‘মেট্রোম্যান’ ই শ্রীধরণ। মঙ্গলবার ই শ্রীধরণের সমর্থনে পালাক্কড়ে নির্বাচনী জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “পালাক্কড়ে এসে আমি আনন্দিত ও মুগ্ধ। এখান থেকেই কেরলে নিজের প্রথম জনসভার সূচনা করছি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জন্য আপনাদের আশীর্বাদ নিতে এসেছি আমি। আমি এখানে এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছি, যা কেরলের বর্তমান পরিস্থিতির থেকে ভিন্ন। বিগত কয়েক বছরে কেরলের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। এই পরিবর্তন যুবকদের আকাঙ্খিত, বিশেষ করে প্রথমবার যাঁরা ভোটার হয়েছেন। কেরলের জন্য বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গি হল এগিয়ে যাওয়া এবং উচ্চাভিলাষী। আর তাই রাজ্যের যুবকরা বিজেপিকে প্রকাশ্যেই সমর্থন করছেন, গোটা দেশে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।”
আগামী ৬ এপ্রিল বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কেরলে, এদিন পালাক্কড়ের জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেরলের যুবসমাজ পরিবর্তন চাইছেন, বিজেপি সেই পরিবর্তনের আশ্বাস দিচ্ছে। ৬ এপ্রিল আপনারা যখন ভোট দেবেন, সুশাসন ও উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবেন। এমন একটি সরকারকে ভোট দেবেন, যে সরকার শান্তি ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয়।” মোদি বলেন, “গণতন্ত্রে আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক পার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু হিংসা কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের বহু কার্যকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। কেরলে বিজেপি সরকারই পারবে হিংসার সংস্কৃতি বন্ধ করতে। বামদলগুলি বহুবার কেরলের ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু তাঁদের নেতারা এখনও জুনিয়র স্তরের গুন্ডাদের মতো আচরণ করেন।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি এলডিএফ এবং ইউডিএফ-কে বলতে চাই-আপনারা যদি আমাদের সংস্কৃতিকে অবমাননা করেন, তাহলে আমরা কিন্তু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করব না।” প্রধানমন্ত্রী এদিন জানান, ‘কৃষি উন্নয়ন এবং কৃষকদের স্বার্থে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে আমাদের সরকার। যুব সমাজের ক্ষমতায়নই আমাদের সরকারের লক্ষ্য। কেরল ও পর্যটনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হল ইউডিএফ এবং এলডিএফ সেই লক্ষ্যে কিছুই করেনি।” কেরলে দ্রুত উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির কথায়, “ফাস্ট মানে আমি বলতে চেয়েছি, মৎস্যজীবী ও সারের জন্য এফ। কৃষি এবং আয়ুর্বেদের জন্য এ। দক্ষতা বিকাশ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য এস এবং পর্যটন ও প্রযুক্তির জন্য টি।
শুধু কেরল নয় তামিলনাড়ুর বিধানসভা ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি। এদিন তিনি ধারাপুরাম এক জনসভায় একদিকে ডিএমকে ও অন্যদিকে কংগ্রেসকে একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন,মহিলাদের অপমান করাই ডিএমকে ও কংগ্রেসের সংস্কৃতি। এনডিএ-র হাতে রয়েছে উন্নয়নের অ্যাজেন্ডা, কংগ্রেস ও ডিএমকে-র অ্যাজেন্ডা তখন পরিবারবাদ। এদিন তামিলনাড়ুর ধারাপুরমের নির্বাচনী জনসভা থেকে এভাবেই ডিএমকে ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন দুপুরে তামিলনাড়ুর ধারাপুরমে নির্বাচনী জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই কে পালানিস্বামী। তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে-র সঙ্গে জোট বেঁধে দক্ষিণী এই রাজ্যে লড়ছে বিজেপি। তাঁদের প্রতিপক্ষ ডিএমকে-কংগ্রেস জোট। এদিন ধারাপুরমে ভোট প্রচারে এসে বিরোধী জোটকেই আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি বলেন, “এনডিএ-র হাতে যখন উন্নয়নের অ্যাজেন্ডা, কংগ্রেস-ডিএমকে-র অ্যাজেন্ডা তখন পরিবারবাদ। রাজ্যকে ডিএমকে-র নতুন কিছু দেওয়ার নেই।” এদিন বক্তব্যের শুরুতেই মোদি বলেছেন, “আগামী কিছু দিনের মধ্যে নতুন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভোট দেবে তামিলনাড়ু। রাজ্যের জনগণকে সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের আশীর্বাদ চাইছে এনডিএ পরিবার। চূড়ান্ত উন্নয়নের দৃঢ় অ্যাজেন্ডা ভিত্তিতে আমরা আপনাদের ভোট চাইছি।”
পশ্চিমবঙ্গে শোভারানি মজুমদার নামে একজন বৃদ্ধার মৃত্যু নিয়ে তামিলনাড়ুর জনসভা থেকে তৃণমূল, কংগ্রেস, ডিএমকে এবং বামেদের আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি বলেন, “সোমবার পশ্চিমবঙ্গে শোভারানি মজুমদার নামে একজন বৃদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন, ভিন্ন মতাদর্শের কারণে তৃণমূলের গুন্ডারা কীভাবে ওই বৃদ্ধাকে আক্রমণ করেছি তা আমরা দেখেছি। কংগ্রেস কী কোনও সহানুভূতি দেখিয়েছে? ডিএমকে এবং বামেরা কী নিন্দা করেছে?” কংগ্রেস ও ডিএমকে-কে আক্ৰমণ করে মোদি বলেছেন, ‘কখনওই মহিলা ক্ষমতায়নের গ্যারান্টি দেবে না ডিএমকে ও কংগ্রেস। ১৯৮৯ সালের ২৫ মার্চের কথা কখনও ভোলা যাবে না, আম্মা জয়ললিতার সঙ্গে ডিএমকে কী ধরনের আচরণ করেছিল। মহিলাদের অপমান করা ডিএমকে ও কংগ্রেসের সংস্কৃতি। কিছু দিন আগে ডিএমকে-র বিধায়ক প্রার্থী ডি লিওনি মহিলাদের সম্পর্কে ভয়ানক মন্তব্য করেছিলেন। ডিএমকে তাঁকে থামানোর জন্য কিছু করেনি। কংগ্রেস ও ডিএমকে-কে বলতে চাই মহিলাদের অপমান তামিলনাড়ুর জনগণ কখনও সহ্য করবেন না।”