নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ মার্চ৷৷ মা বাবা এমনই হয়৷ তাদের নিজের স্বপ্ণের কথা কোনদিনও মনে রাখেনা৷ স্বপ্ণ শুধু থাকে নিজের সন্তানকে কিভাবে বড় করে তুলবে কিভাবে তাকে মানুষের মত মানুষ করবে৷ আর হঠাৎ যদি চোখের অলক্ষ্যে সেই সন্তানটিই নৃশংসভাবে হত্যা হয়৷ তাহলে সেই মা-র অবস্থা কেমন হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা৷ কলমচৌড়া থানাধীন পুটিয়া গ্রামের এক ছাত্রকে সীমান্তে নিয়ে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল৷ তা আজও ভুলতে পারেনি গ্রামবাসী৷ তারই মধ্যে সেই হতভাগা মা পুলিশ প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে হন্য হয়ে ঘুরছে ছেলের খুনের অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে৷ সেই ছাত্র শরিফ মিয়ার মা সংবাদ মাধ্যমের কাছে বার বার অভিযোগ করছে যে পুলিশ মূল অভিযুক্তদের বাচিয়ে বিএসএফএর উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু অভিযোগ অন্যরকম৷
তার মা জানান ছেলে পড়াশোনার জন্য বহিরাজ্যে গিয়েছিল৷ কিন্তু কিছুদিন পর পরই নাকি বন্ধুদের কথায় সে রাজ্যে ফিরে আসতো৷ বন্ধু সোহেল, আরিফদের কথায় প্রায়শই বাড়িতে চলে আসলে পরিবারের মা এবং বড় ভাই শাসন করতেন৷ পড়াশোনা নষ্ট করে কেন বাড়িতে চলে আসে৷ এমনভাবে শেষ একবার বাড়িতে এসেই এই দূনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হল ছাত্রকে৷ অভিযোগ, বাড়িতে আসার পর থেকেই স্থানীয় শাহআলমের সাথে তার পরিবারের একটি ঝামেলা চলছিল৷ তখন থেকেই ছাত্র শরিফকে হত্যার জন্য বহু চেষ্টা চালিয়ে আসছিল শাহআলম বাহিনী৷ মূলত, সীমান্তের পারে জমিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত৷ বাড়িতে আসার কিছুদিন পর বক্সনগরে গিয়েছিলেন তার মার জন্য ঔষধ আনতে৷ তখনই নাকি দূসৃকতীরা তার বাইকের ব্রেকের তার কেটে দেয়৷ বাইকের ইঞ্জিন চালু করার পরই শরিফ বাইক নিয়ে পরে আহত হয়৷ বাড়িতে এসে এই কথা জানানোর পরই তার মা বলেন এই কাজ একমাত্র শাহআলমই করতে পারে৷ জানাগেছে, সীমান্তে শরিফের বাবা জমিনে যাচ্ছিলেন৷ এমন সময় বিএসএফ বাধা সৃষ্টি করে৷
শরিফ প্রশ্ণ করে এতক্ষণ অবৈধ মাল পাচার হয়েছে আমার বাবা কেন জমিনে যেতে পারবেনা ? এরপরই নাকি বিএসএফ শাহআলমদের এনে শাশিয়ে দেয়৷ এখান থেকেই শুরু হয় ঝামেলা৷ শরিফকে হত্যা করার জন্য তখন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছিল শাহআলম গোষ্ঠী৷ অভিযোগ, তারা অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত৷ প্রায়শই কথায় কথায় বলতো শরিফকে মাটির সাথে মিসিয়ে দেবে৷ হয়তো তাই হল৷ ২০১৯ সালের জুন মাসের একটি রাতে শরিফ বাড়িতে পড়াশোনা করছিল৷ এমন সময় শরিফের বন্ধু সোহেল, জোয়েল, রাসেল সহ কয়েকজন রাতে বাড়িতে আসে৷ এবং মোবাইল ঠিক করার কথা বলে তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়৷ কিন্তু ছাত্রর মা তাকে যেতে দিচ্ছিলনা৷ তখন নাকি তার বন্ধুরা বলছেন ’’’’তুমার ছেলেকে কি মাইরা লামু আমরা’’’’৷ শেষে বন্ধুদের উপর বিশ্বাস রেখেই তার মা ঘরে যায় ঘুমাতে৷ হঠাৎ মনে হয় ছেলে বাড়িতে ফিরে আসেনি৷ এবং মনে পরে যায় শাহআলমের হত্যার হুমকি৷ তারপরই তার মা এবং বড় ভাই মিলে খুজতে বের হন শরিফকে৷ বহু খোজাখুজির পর দেখতে পায় শরিফ সীমান্তে ওইপারে পরে রইলেন মৃত অবস্থায়৷
তাদের চিৎকারে জড়ো হয় গোটা গ্রামের মানুষ৷ তার মা অভিযোগ, করছে শাহআলম বাহিনীই তাকে হত্যা করেছে৷ এবং এই হত্যার ঘটনায় জড়ির বিএসএফও৷ এই নিয়ে কলমচৌড়া থানায় মামলাও হয়৷ যার নাম্বার ৪৬/১৯৷ অভিযোগ, পুলিশ কোনরকম তদন্ত না করে বিএসএফএর উপর দোষ চাপিয়ে মূল অভিযুক্তদের আড়াল করতে চাইছে৷ শরিফের মা শনিবারও ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে সংবাদ মাধ্যমের দ্বারস্থ হন৷ তিনি চাইছেন অভিযুক্তদের কঠুর শাস্তি দেওয়া হউক৷ তিনি অভিযোগ করছেন বন্ধুদের দিয়েই বাড়ি থেকে নিয়ে তাকে হত্যা করেছে৷ উল্লেখ্য, সীমান্তে এই ধরনের ঘটনা বহু ঘটেছে৷ কিন্তু বিচারের বানি সেই নীরবেই কাদে৷