চট্টগ্রাম, ৭ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ । রবিবার চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৫ রান তাড়া করতে নামে কাইল মেয়ার্সরা। অভিষেক টেস্টে কাইল মেয়ার্স-এর ২১০ রানে ভর করে ৭ উইকেট হারিয়েই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেন ক্রেগ ব্রেইথওয়েটের ছেলেরা।
চতুর্থ দিনের শেষ পর্যন্ত কার্যত ম্যাচটা ছিল বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। চট্টগ্রামে পঞ্চম দিনের খেলা যখন শুরু হয়, তখন অতি বড় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমর্থকও মনে হয় আশা করেননি, এই খর্বশক্তির ক্যারিবিয়ান দল বাংলাদেশের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে প্রায় ৪০০ রান তাড়া করে এক অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে নেবে। তবে ক্রিকেট ঈশ্বরের ভাবনা চিন্তা হয়তো একটু অন্যরকমের ছিল। তাই বাংলাদেশের মাটিতে চট্টগ্রামের মাটিতে বাংলাদেশের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে এক অবিশ্বাস্য জয় পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এশিয়ার মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেটে এর আগে চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৫ রান তাড়া করে শেষ দিনে এমন জয় পায়নি কোনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল।
অভিষেককারী কাইল মেয়ার্স যেন শাকিব-আল-হাসানদের শিখিয়ে দিলেন টেস্ট ম্যাচ কীভাবে খেলতে হয়। চতুর্থ ইনিংসে প্রায় ৪০০ রান করা বিশ্বের যে কোনও ক্রিকেট দলের জন্যই কঠিনতম কাজ। চারদিনের খেলা শেষে স্বাভাবিকভাবেই উইকেট ক্ষতবিক্ষত হয়ে থাকে। বাউন্স থাকে অসমান, স্পিন করে বল। তার ওপর স্পিনিং ট্র্যাকে কার্যত রাজ করছেন স্পিনাররা। করোনাভাইরাসের কারণে এবার বাংলাদেশের সফরে আসেননি একাধিক তারকা প্রথম সারির ক্রিকেটার। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে তথাকথিত বড় কোনও তারকা নেই। নতুনদের নিয়ে তারা টেস্ট খেলতে এসেছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিনজনের অভিষেক হয়েছে চট্টগ্রামে। সেই অভিষেককারীই কার্যত সব হিসেব উলটে দিয়ে বাংলাদেশকে তিন উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে! জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিনের শেষে ৩ উইকেটে ১১০ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পঞ্চম দিনের স্পিন সহায়ক উইকেটে ব্যাটিং করতে নেমে জয়ের জন্য ২৮৫ রান করতে হত। যা প্রায় অসম্ভব বিষয় বলা চলে। কিন্তু নবীন দলের সামনে বাংলাদেশি বোলাররা যেন বোলিংটাই করতে ভুলে গেছিলেন। অভিষিক্ত কাইল মেয়ার্স তুলে এক অসাধারণ অপরাজিত ২১০ রানের ইনিংস খেলেছেন। অভিষেককারী কোনও ক্রিকেটারের রান তাড়া করার সময় এটাই প্রথম দ্বি-শতরান। আরও এক ব্যাটসম্যান একনক্রুমা বোনারের সঙ্গে তিনি ২০৭ রানের জুটি গড়ে দলকে লড়াইয়ে রাখেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ জুটি গড়েন এই দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটার। চতুর্থ ইনিংসে দুই ক্রিকেটারের এটিই সেরা জুটি। ফলস্বরূপ তিন উইকেটে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০ ফলে এগিয়ে গেল টেস্ট সিরিজে।
এনক্রুমা বোনার আউট হন ২৪৫ বলে ৮৬ রান করে। তাঁকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিশাল জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। এরপর কিছু পরেই ব্ল্যাকউডকে বোল্ড করে দেন নইম হাসান। জোসুয়া ডি’সিলভাকে সঙ্গী করে বাংলাদেশি বোলারদের নাস্তানাবুদ করে দেয় মেয়ার্স। মেয়ার্সের ডাবলের পর জসুয়া ডি সিলভাকে (৫৯ বলে ২০) বোল্ড করে জুটি ভাঙেন তাইজুল। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় থেকে মাত্র তিন রান দূরে। শেষদিকে একটু বেকায়দায় পড়েন ক্যারিবিয়ানরা। কিমার রোচকে (০) সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে মিরাজ ক্যারিবিয়ানদের উপর চাপ তৈরি করে ফেলেছিলেন। তবে মেয়ার্স শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে আর কোনও অঘটন ঘটতে দেননি। বার্বাডোজের ২৮ বছরের তরুণ মেয়ার্স মাত্র ৩১০ বলে ২১০ রান করেন। মারেন ২০টি চার ও ৭টি ছয়। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে দ্বিশতরান করা ষষ্ঠ ক্রিকেটার হলেন তিনি। নিশ্চিতভাবেই তিনি ম্যান অফ দ্য ম্যাচও নির্বাচিত হন।সেই সঙ্গে টেস্টের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান তাড়া করার নজির তৈরি করেছেন ক্যারিবিয়ানরা।