লাইট হাউজ প্রকল্প আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জানুয়ারি৷৷ দেশের গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন নির্মাণ নতুন সংকল্পের সাথে দ্রতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার কাজ আজ শুরু হয়েছে৷ দেশের ৬টি শহরে লাইট হাউজ প্রকল্পে গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশ আজ এক নতুন দিশা লাভ করেছে৷ এই লাইট হাউজ প্রকল্প আলোক স্তম্ভের মতোই দেশকে আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে এক নতুন দিশা দেখাবে৷


গ্লোবাল হাউজিং টেকনোলজি চ্যালে’ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (শহর) অন্তর্গত দেশের ৬টি শহরে লাইট হাউজ প্রকল্প আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিলান্যাস করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একথা বলেন৷ লাইট হাউজ প্রকল্পের শিলান্যাস করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ আজ যে নতুন প্রযুক্তি লাভ করেছে তাতে দেশের উত্তর থেকে পূর্ব, পশ্চিম থেকে দক্ষিণ সব দিক থেকেই রাজ্যগুলি এই প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হবে ও সংযুক্ত রাষ্ট্রীয় ভাবনাকে আরও মজবুত করবে৷ লাইট হাউজ প্রকল্প দেশের নির্মাণ কাজের পদ্ধতিতেও একটা সর্বোত্তম উদাহরণ হিসেবে চিহ্ণিত হবে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় দেখা গেছে পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মপরিকল্পনায় আবাস যোজনায় যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিলো সেটা দেওয়া হয়নি৷ দেশের গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার নতুন এক দিশা নিয়ে কাজ করছে৷ আবাসন নির্মাণে কেন্দ্রীয় সরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ গরিবদের আধুনিক ও মজবুত আবাসন তৈরির লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে গ্লোবাল হাউজিং টেকনোলজি চ্যালেে’র উপর সম্মেলনের আয়োজন করেছে৷ এই সম্মেলনে বিশ্বের প্রথম সারির ইনোভেটিভ কনস্ট্রাকশন কোম্পানিগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো৷ এই সম্মেলন থেকেই আবাসন নির্মাণে অত্যাধুনিক নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর করার উপায় পাওয়া যায়৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করেই আজ থেকে ৬টি লাইট হাউজ প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে৷ ফলে আবাসন নির্মাণের সময় যেমন কম লাগবে তেমনি গরিবদের জন্য আরামদায়ক আবাসন তৈরি হবে৷


প্রকল্পের শিলান্যাস করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ত্রিপুরায় লাইট হাউজ প্রকল্পটি রূপায়ণের ক্ষেত্রে নিউজিল্যাণ্ড স্টিল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে৷ ত্রিপুরা ভূমিকম্প প্রবণ অ’লে অবস্থিত থাকার কারণে এই পদ্ধতিতে আবাসন তৈরি অনেক নিরাপদ৷ এই ৬টি লাইট হাউজ প্রকল্পে এক বছরে ১,০০০ করে ঘর তৈরি করা হবে৷ এই প্রকল্পে যে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তাতে আমাদের দেশের ইি’নিয়ার, আর্কিটেক্ট, বিল্ডিং প্ল্যানারস ও বিভিন্ন ইি’নিয়ারিং কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে ’ান লাভ করতে পারবেন এবং তা প্রয়োগ করতে পারবেন৷ প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন কারিগরী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের কাছে আবেদন রাখেন যাতে ছাত্রছাত্রী ও প্রফেসরদের নিয়ে ১০-১৫ জনের গ্রপ তৈরি করে এই লাইট হাউজ প্রকল্পে ব্যবহৃত নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন এবং আগামীদিনে দেশের নির্মাণ কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে আসেন৷


প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গরিব অংশের মানুষ আবাসন নির্মাণে বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে দেশের মধ্যেই আধুনিক আবাসন নির্মাণের প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত রিসার্চ ও স্টার্ট আপকে প্রমোট করার জন্য আশা ইণ্ডিয়া নামে একটি কর্মসূচি রূপায়ণ করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, শহরের গরিব ও মধ্যবিত্তদের সবচেয়ে বড় স্বপ হলো নিজের গৃহ পাওয়া৷ এই গৃহের সাথেই জড়িয়ে থাকে তাদের সুুখ দুঃখ, আশা আকাঙ্ক্ষা এবং সন্তানের লালন পালনের ভবিষ্যৎ৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সকল গরিবদের আবাসন প্রদানের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় যেমন জল, গ্যাস, বিদ্যৎ ইত্যাদিও সুুনিশ্চিত করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় যে সমস্ত গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলির জিও ট্যাগিং করা হয়েছে৷ গৃহ নির্মাণের টাকাও সরাসরি সুুবিধাভোগীর হাতে চলে যাচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গৃহ পাওয়ায় গরিবদের আত্মবিশ্বাস যেমন বেড়েছে তেমনি তাদের জন্য ভবিষ্যৎ সুুরক্ষার পথও খুলে গেছে৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, আজ ত্রিপুরাবাসীর জন্য গর্বের দিন৷ নববর্ষের শুরুতেই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে তিনটি পুরস্কার দিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রেরণাতেই আমরা কাজ করার শক্তি পাই৷ ত্রিপুরা এখন নতুন দিশায় এগিয়ে চলছে৷ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্রেরণায় শক্তি পেয়ে উত্তর-পূর্বা’লও অনেক এগিয়ে যাচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য রাজ্যগুলিকে আলাদাভাবে চিহ্ণিত করার ফলেই রাজ্য আজ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (শহর) সর্বোত্তম রূপায়ণে তিনটি পুরস্কার লাভ করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে লাইট হাউজ প্রকল্পে যে আধুনিকতম আবাসন তৈরি হবে তাতে রাজ্যের গরিব অংশের মানুষ উপক’ত হবেন৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় গৃহ ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বলেন, আবাসন নির্মাণ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশবাসীর জন্য আজ ঐতিহাসিক দিন৷ প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত গড়ার স্বপকে সফল করার ক্ষেত্রে নতুন এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে৷ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ আগামী ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে পাকা গৃহ প্রদান করা৷ এই লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৫ জন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর) প্রকল্প শুরু হয়৷ এই প্রকল্পে আজ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন রাজ্যগুলি থেকে ১ কোটি ১২ লক্ষ গৃহের দাবি এসেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৯ লক্ষ গৃহ নির্মাণের ম’রি দিয়েছে৷ এরমধ্যে ৪০ লক্ষ গৃহ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে এবং ৭০ লক্ষ গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে৷
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজ্যকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (শহর) কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য পুরস্ক’ত করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর) সফল রূপায়ণের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ও পাহাড়ি রাজ্যগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজ্যের পুরস্কার লাভ করেছে ত্রিপুরা৷ তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর) রূপায়ণে আগরতলা পুরনিগম শ্রেষ্ঠ পুরনিগম এবং বিলোনীয়া পুরপরিষদ শ্রেষ্ঠ পুরপরিষদ হিসেবে পুরস্কার লাভ করেছে৷ তাছাড়াও এই প্রকল্পে শ্রেষ্ঠ বাড়ি নির্মাণ ক্যাটাগরিতে রাজ্যের তিনজন সুুবিধাভোগীকে পুরস্ক’ত করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে এই পুরস্কারগুলি প্রদান করেন৷
এদিনের অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল রমেশ বৈস, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক, অর্থ দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে এবং অধিকর্তা ড. সন্দীপ এন মাহাত্মে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *