কিশোর সরকার
ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর (হি.স.): ভারতের বন্ধুত্বের সঙ্গে অন্য কারও বন্ধুত্বের তুলনাই হয় না। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক-সহ বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। বহুভাষী সংবাদ সংস্থা ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমনই জানিয়েছেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তাঁর কথায়, “ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।” বাংলাদেশে বিএনপি-জামাতের ভারত বিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতীয় সীমান্তের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরের দিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে চিনের স্বীকৃতি দেওয়া, ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্ক-সহ বিভিন্ন বিষয়ে হিন্দুস্থান সমাচার-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি কিশোর সরকারকে বিশেষ স্বাক্ষাৎকার দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
হিন্দুস্থান সমাচার: বিএনপি-জামাত সর্বদাই অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে প্রভু মনে করে, এক্ষেত্রে আপনার কী অভিমত?
তথ্যমন্ত্রী : ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের যে অবদান তা বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যেমন প্রাণ দিয়েছে, তেমনই মিত্রবাহিনী হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও প্রাণ দিয়েছেন। সুতরাং ভারতের বন্ধুত্বের সঙ্গে অন্য কারও বন্ধত্বের তুলনা হয় না। তাই ভারতকে আমরা সর্বদা পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে দেখি, প্রভু হিসেবে নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিএনপি যেভাবে প্রচার করে তা কখনওই তেমন নয়।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভারত আমাদের প্রতিবেশী, তাই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক-সহ বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে ভারতবর্ষ। সুতরাং ভারতবর্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়াই স্বাভাবিক। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বিএনপি যে রাজনীতিটা করে তা ভারত-বিরোধিতার রাজনীতি। যদিও পর্দার অন্তরালে তারা ভারত তোষণের রাজনীতিটাই করে। যেটি আওয়ামী লীগ করে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পুরোটাই উন্মুক্ত এবং আমরা মনে করি আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থাকা উচিৎ। আর ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।
হিন্দুস্থান সমাচার : বিএনপি-জামাতের অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন পদে পদোন্নতি ও বদলি করা হচ্ছে, আপনি কী মনে করেন?
তথ্যমন্ত্রী : এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে। পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে যে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল বাঙালিরা সেটি মেনে নেয়নি। কারণ, আপামর বাঙালি মনে করেন, আমদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি। আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে, আমরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ বৌদ্ধ, কেউবা খ্রিস্টান। এটাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বুকে ধারণ করে, লালন করে। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে একটা ভিন্নতা আছে। তারা মনে করে, মানুষের আগে পরিচয় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান হিসেবে। এরপরে তারা বাঙালি না বাংলাদেশী এই নিয়েও দ্বন্দ্বের মধ্যে আছে। বিএনপি সর্বদা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ায়। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন না করে সংখ্যালঘুদের যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাদের পদোন্নতি বা বদলি করা হয় নি। আওয়ামী লীগ সরকার যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ধর্মের ভিত্তিতে নয়।
হিন্দুস্থান সমাচার : শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরবর্তী দিনই, বাংলাদেশকে চিনের স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে আপনার কী অভিমত?
তথ্যমন্ত্রী : আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারত যেমন আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ভারতের রাস্তায়-রাস্তায় শরণার্থীদের জন্য চাঁদা তোলা হয়েছে। ভারতের সাধারণ মানুষ শরণার্থীদের জন্য চাঁদাও দিয়েছেন। বাংলাদেশের শরণার্থীদের যে শুধু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল তা কিন্তু নয়, সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলোর সাধারণ মানুষেরা নিজেদের বাড়িতেও আশ্রয় দিয়েছেন। এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া চারটিখানি কথা নয়! তখন অনেক দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাও করেছে। কোন রাষ্ট্রগুলো বিরোধিতা করেছে, সেটি ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। তখন পাকিস্তানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল চিন। পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র থাকার কারণেই হয়তো চিন আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবিত থাকাকালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে চিনও আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।
হিন্দুস্থান সমাচার : পাকিস্তানে উন্মুক্ত, অথচ বাংলাদেশে ভারতীয় ‘ফিল্ম’ আমদানি নিষিদ্ধ কেন?
তথ্যমন্ত্রী : আকাশ যেমন উন্মুক্ত, তেমনই ভারতীয় সকল ধরনের ছবি বাংলাদেশে আমাদনি উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু, বাংলাদেশের ‘শিল্পী সমিতির’ বাধার কারণে শুধু হিন্দি ছবি আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে, সিনেমা হল মালিকদের ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি আছে। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় ‘ফিল্ম’ তৈরিতে কোনও বাধা নেই।