আগরতলা, ১ সেপ্ঢেম্বর (হি. স.)৷৷ ত্রিপুরা সরকার লক্ষ্য করেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে যা জনসাধারণের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার পক্ষে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে৷ এমতাবস্থায় সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে সংক্রমণ আরও বড় আকারে ছড়াতে পারে এবং জীবনহানির সম্ভাবনাও রয়েছে৷ ১১ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট ত্রিপুরায় কন্টেইনমেন্ট জোন-এ লকডাউন এবং তার বাইরে আনলক-২ বলবত ছিল৷ পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ত্রিপুরায় সংক্রমণের চেইনকে ছিন্ন করতে কিছু কিছু বিধিনিষেধ জারি রেখে আরও কিছু কার্যকলাপ পুনরায় চালু করা দরকার৷ যেহেতু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব ২৯ আগস্ট আদেশে কন্টেইনমেন্ট জোন-এ লকডাউন জারি রেখে তার বাইরে আরো কিছু কার্যকলাপ পুনরায় চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন তাই ত্রিপুরার মুখ্য সচিব স্টেট এগজিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৫-এ প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে কন্টেইনমেন্ট জোন-এর বাইরে ’আনলক মেজারস ত্রিপুরা’ জারি করেছেন৷ আদেশ কার্যকর থাকবে ১ সেপ্ঢেম্বর থেকে ৩০ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত৷ তবে কন্টেইনমেন্ট জোন-এ লকডাউন ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে ৩০ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত৷ আনলক প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরায় বিভিন্ন বিধিনিষেধ কার্যকর হবে৷
যেহেতু লকডাউন জারি থাকবে এসব এলাকায় জেলাশাসক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থাকবেন৷ উতবিহীন কোভিড সংক্রমণ হলে তার চারপাশের কয়েকটা বাড়ি নিয়ে মাইক্রো কন্টেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করা যেতে পারে৷ এসব জোন-এ শুধুমাত্র জরুরী কার্যকলাপ চালু থাকবে, সেখানে যানবাহন আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, ঔষধ, জীবিকার্জন সম্পর্কিত পরিবহন অনুমোদন থাকবে৷ তাছাড়া কন্টেইনমেন্ট জোন-এ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও পরিষেবা বাড়িতে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ সংক্রমণের ধারা নিরূপণ, বাড়ি বাড়ি নজরদারি ও চিকিতা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ ১৪ দিন ধরে কোন নতুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটলে কন্টেইনমেন্ট জোন অরেঞ্জ-জোন হিসেবে ঘোষণা করা হবে৷ কনটেইনমেন্ট জোন এর সর্বশেষ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়ার ১৪ দিন পর সংশ্লিষ্ট এলাকাটিকে কন্টেইনমেন্ট জোন’র আওতা থেকে বাদ দেওয়া হবে৷ সর্বশেষ রোগী আরটি-পিসিআর টেস্ট-এ নিগেটিভ হওয়ার ২৮ দিন পর সংশ্লিষ্ট জেলা/শহরকে রোগ মুক্ত বলে ঘোষণা দেওয়া হবে৷
এদিকে, কনটেইনমেন্ট জোন-এর বাইরে (আনলক মেজারস) সমস্ত ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান, প্রতিষ্ঠান, ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপের অনুমোদন রয়েছে৷ তবে দোকান, মার্কেট কমপ্লেক্স ও শপিং মলগুলিতে ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে৷ যেসব দোকানের সামনে এক মিটারের কম প্রশস্ত জায়গা রয়েছে সেসব দোকানে একবারে একজনের বেশি ক্রেতা ঢুকতে পারবেন না৷ যেসব দোকানের সামনের দিক এক মিটার বা তার বেশি প্রশস্ত সেক্ষেত্রে দুজন ক্রেতা একসাথে ঢুকতে পারবেন, অন্যরা তাদের পেছনে দাঁড়াবেন৷ বাজার এলাকা প্রতিদিন স্যানিটাইজ করতে হবে৷ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই মাস্ক পরিধান করতে হবে৷
বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে, জেলার মধ্যে-এবং জেলার ভিতরে সরকারি ও বেসরকারি যানবাহন চলাচল করতে পারবে৷ তবে সব যানবাহনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ চালক, তার সহকারি এবং যাত্রী সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে৷ আগরতলা পুর পরিষদের বাইরে সমস্ত সরকারি/স্ব-শাসিত সংস্থা তার অধীনস্ত ও বেসরকারি অফিস পুরােদমে খােলা থাকবে৷ তবে আগরতলা পুর এলাকায় জরুরী পরিষেবার সাথে যুক্ত দপ্তরগুলিকে বাদ দিয়ে বাকি অফিসগুলি গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি কর্মচারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ কর্মচারী দিয়ে চলবে৷ মাস্ক/মুখাবরণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক৷ অফিস চত্বর নিয়মিতভাবে স্যানিটাইজেশন করতে হবে এবং অফিসে প্রবেশ নির্গমন পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ দ্বাররক্ষীরা মাস্ক ছাড়া কাউকে অফিসে ঢুকতে দেবেন না৷ বাইরে থেকে আসা লােকেরা অগ্রিম অনুমতি নিয়ে আসবেন যাতে ভিড় না হয়৷ অন্যান্য যােগাযােগ ব্যবস্থা যেমন ফোন, হেল্পলাইন, কন্েন্টাল রুম, অনলাইন গ্রীভেন্স ব্যবস্থা করা যেতে পারে সমস্যা সমাধানের জন্য৷ যদি অফিসে বৈঠক করতেই হয় তাহলে ২০ জনের বেশি এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন৷
সমস্ত বিদ্যালয়, কলেজ, শিক্ষা ও কোচিং প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে৷ তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২৯ আগস্ট জারি করা আদেশ অনুযায়ী কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ব্যবস্থা নেওয়া যাবে যার জন্য শিক্ষা দপ্তর আলাদাভাবে আদেশ জারি করবে৷ সিনেমা হল, সুইমিং পুল, বিনোদন পার্ক, থিয়েটার, অডিটরিয়াম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের হল ইত্যাদি বন্ধ থাকবে৷ ৬. সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংসৃকতিক, খেলাধুলা, বিনোদনমূলক, শিক্ষাগত এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে৷ বিনা প্রয়োজনে লোকের জমায়েত এড়িয়ে চলতে হবে৷ দাহক্রিয়া বা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ২০ জন এবং বিবাহ অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি লােকের সমাগম হতে পারবে না৷ স্বাস্থ্য শিবির/রক্তদান শিবির ও বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে ২০ জনের বেশি লোকের জমায়েত হতে পারবে না৷ ২৯ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা নির্দেশ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে৷
আগরতলা পুর নিগম এলাকা ছাড়া সারা রাজ্যে রাতের কার্ফু বলবত থাকবে রাত ৯টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত৷ ৩০ সেপ্ঢেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত এই কার্ফু চলবে৷ কিন্তু আগরতলা পুর নিগম এলাকায় কারফিউ বলবত থাকবে রাত ৮টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত৷ সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক কার্ফু সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন৷ তবে জরুরী পরিষেবা ও ক্রমচলমান শিল্প প্রক্রিয়া কাফুর বাইরে থাকবে৷ সমস্ত অফিস ও পাবলিক প্লেসে থার্মাল স্ক্যানিং, হ্যান্ডওয়াশ এবং স্যানিটাইজার-এর ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং নিয়মিতভাবে এসব জায়গা স্যানিটাইজ করতে হবে৷ অফিসে, পাবলিক প্লেসে এবং ভ্রমণের সময় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক৷ জরুরী প্রয়ােজন কিংবা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজ ছাড়া ৬৫ বছরের বেশি কিংবা ১০ বছরের কম বয়সী অন্যান্য রােগের সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের বাড়িতে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ উল্লিখিত নিয়ম নির্দেশিকা কার্যকর করার দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক৷ নিয়ম
উল্লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৫-এর ৫১ থেকে ৬০ ধারা এবং পি সির ১৮৮ ধারায় আইনী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে৷ তাছাড়াও রাজ্য সরকার দ্য এপিডেমিক ডিজিজ কোভিড- ১৯ রেগুলেশনস ২০২০ অনুযায়ী কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে৷
ভ্রমণের ইতিহাস থাকলে ১৪ দিনের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন-এ থাকা৷ পাবলিক প্লেস/কর্মসংস্থান/ভ্রমণকালে/ড্রাইভিং-এর সময় মাস্ক/মুখাবরণ ব্যবহার করা৷ গণপরিবহন ও বেসরকারি/ব্যক্তিগত পরিবহণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ইত্যাদি নিয়ম মেনে দোকান চালানো৷ মাস্ক না ব্যবহার করলে জরিমানা হবে ২০০ টাকা (প্রথমবার) এবং ৪০০ টাকা পরবর্তী প্রতিবারে৷ দোকানে/ভ্রমণে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ভঙ্গ করলে বা গৃহে একান্তবাসের নিয়ম ভঙ্গ করলে ১০০০ টাকা জরিমানা হবে৷

