নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ সেপ্ঢেম্বর৷৷ ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্ত আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার৷ প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের মৃতের ঘটনায় আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে৷ এদিকে, মঙ্গলবার রাজ্যে নতুন করে ৫৬৬ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ মিলেছে৷ ৩৭৭৪ টি নমুনা পরীক্ষায় ওই করোনা আক্রান্তদের সন্ধান মিলেছে৷ বর্তমানে করোনা আক্রান্ত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪১৭০ জন৷
স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এন্টিজেনে ২৯২১টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৭৩ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ এদিকে, ৮৫৩ টি আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ৯৩ জনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ এদিকে, জেলা ভিত্তিক আক্রান্তের হিসেবে উনকোটিতে৫১ জন, উত্তর ত্রিপুরায় ৩৬ জন, ধলাইতে ৭২জন, খোয়াইতে ২৯ জন, পশ্চিম ত্রিপুরায় ২৬৯ জন, সিপাহীজলায় ৩৪ জন, দক্ষিণ ত্রিপুরা ৪৪ জন এবং গোমতী জেলায় ৩১ জন কোভিড-১৯ পজেটিভ রয়েছেন৷
এদিকে এদিন যে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে তাতে পশ্চিম জেলার তিনজন, গোমতী জেলার কেজন, ধলাই জেলার একজন এবং সিপাহীজলা জেলার একজন৷ অন্যদিকে এদিন রাজ্যের বিভিন্ন কোভিড কেয়ার সেন্টার থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯৩ জন৷
ত্রিপুরায় করোনা-র প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে৷ তাই, কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় জনগণকে মুখে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ আজ সাব্রুম টাউন হল দক্ষিণী-তে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অগ্রণী মহিলা কর্মীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী এই আহ্বান জানান৷ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ জেলার চিকিৎসক, নার্স, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, পুলিশ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী মিলে ২৪ জন অগ্রণী মহিলাকর্মীকে মুখ্যমন্ত্রী সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রিমোট টিপে দক্ষিণ জেলার ১০০টি স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রের উদ্বোধন করে জনকল্যাণে উৎসর্গ করেন৷
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, এই স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রগুলি করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে৷ তিনি জনগণকে আশস্ত করে বলেন, করোনাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে৷ জেলা হাসপাতালগুলিকেও করোনা মোকাবিলায় শক্তিশালী করা হচ্ছে৷ তাঁর দাবি, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে৷ ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্তদের হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার৷ তাঁর আবেদন, উপসর্গহীন করোনা রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাড়িতে থাকুন৷ করোনা আক্রান্তদের জন্য ত্রিপুরা সরকার ১০ দিনের খাদ্য সামগ্রী বিনামূল্যে পৌঁছে দেবে৷ বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া সম্ভব না হলে হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের দেড় হাজার টাকা নগদে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ উপসর্গযুক্ত করোনা রোগী যাদের শ্বাসকষ্ট, জ্বর, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে তারা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করে চিকিৎসার সুযোগ গ্রহণ করুন৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অযথা বাজারে ভিড় করবেন না, প্রতিদিন বাজার করার অভ্যাস পাল্টান৷ নিজে সতর্ক থাকুন, অপরকে সতর্ক করুন৷ তিনি বলেন, করোনা আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে৷ আগে ত্রিপুরা রাজ্যের কোথাও একটিও মাস্ক তৈরি হত না৷ জিবিপি হাসপাতালে প্রথম সরকারি উদ্যোগে মাস্ক তৈরি করা হয়৷ এখন ত্রিপুরার মা বোনেরা এবং অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাস্ক তৈরি করছে৷ সর্বত্র এখন মাস্ক পাওয়া যায়৷ রাজ্যের সব হাসপাতালেই এখন স্যানিটাইজার, মাস্ক, পিপিই কিট, গ্লাভস ও পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে৷ ইতিমধ্যে ১০০৬টি অক্সিমিটার নানা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ তাছাড়া ৩০০টি অক্সিমিটার আনা হয়েছে৷ আরও ৭০০টি অক্সিমিটার আনা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে নেওয়ার পরামর্শ দেন৷ তিনি আদা, তুলসী, লং ইত্যাদি গরম জলে ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেন৷ কোভিড-১৯ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারের পরও কিছু মানুষ করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না৷
এদিন তিনি ত্রিপুরায় চলা কিছু আন্দোলন সম্পর্কে প্রশ্ণ তুলে বলেন, এখন আন্দোলনের সময় নয়৷ ১৬ দফা আন্দোলন মানে করোনা-কে আহ্বান করা৷ দেশের অর্থনীতির হাল কী হবে তা চিন্তা করার জন্য দেশের অর্থনীতিবিদগণ আছেন৷ এ সময়ে আন্দোলন করা মানে কোভিড-১৯ যোদ্ধাদের হীনবল করে তোলা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার৷ জনকল্যাণে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ে তোলার দিশায় সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে৷ আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গঠনে রাজ্য সরকার ২৩টি আত্মনির্ভর প্রকল্প ঘোষণা করেছে৷ ১ লক্ষ ছোট ছোট ব্যবসায়ী ভরতুকিতে ঋণ পাবেন৷ বর্গাদারদের কল্যাণেও সরকার নতুন প্রকল্প আনছে৷ এতে ৫০ হাজার বর্গাদার উপকৃত হবেন৷ দুর্নীতিমুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তুলতে রাজ্যে ৮০টি ব্যবস্থাকে অনলাইন করা হয়েছে৷

