ত্রিপুরায় চা উৎপাদন বেড়েছে ৩৪ শতাংশ, সম্ভব হয়েছে ইচ্ছাশক্তি ও পরিচালন কর্মকৌশলতায় : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৮ জুলাই (হি.স.) : ত্রিপুরায় চা উৎপাদন ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এ-ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি পরিচালনগত কর্মকৌশলতা চা উন্নয়ন নিগমকে লাভজনক সংস্থায় পরিণত করেছে৷ বুধবার সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হল-এ ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের ২ বছরের সাফল্য সম্পর্কিত পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব দৃঢ়তার সাথে এ-কথা বলেন৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নতুন করে ২৫৩ একর চা বাগান গড়ে তোলা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পর্যটন শিল্পের প্রসারে চা বাগানগুলিতে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলা হবে৷


মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ত্রিপুরায় বর্তমানে ৫৪টি বড় চা বাগানের জমির পরিমাণ ১২,৮০০ হেক্টর৷ ত্রিপুরা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্যটন শিল্পের প্রসারে চা বাগানগুলির ২০ একর পর্যন্ত জায়গায় ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলা হবে৷ এর মধ্যে লগ হাট সহ অন্যান্য বিনোদনমূলক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে৷ তিনি বলেন, নতুন সরকার আসার পর নতুন করে ২৫৩ একর চা বাগান গড়ে তোলা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ত্রিপুরায় চায়ের গুণগতমান উন্নত হওয়ায় কলকাতার নিলাম বাজারে এখন সবর্োচ্চ ২৩১ টাকা কেজি দরে রাজ্যের চা বিক্রি করা হয়েছে৷ যা নিগমের ইতিহাসে এক রেকর্ড৷ তিনি বলেন, দুই বছরের মধ্যে রাজ্যের চায়ের মূল্য প্রতি কেজি ১৪৭ টাকা থেকে বেড়ে ২৩১ টাকায় পৌঁছে গেছে৷ ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের পরিচালনগত সাফল্যের জন্যেই তা সম্ভব হয়েছে, দাবি করেন তিনি৷


তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরার চায়ের দেশ বিদেশে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে চা উন্নয়ন নিগম ২০১৮ সালে বীরচন্দ্র লাইব্রেরিতে একটি টি কর্ণার চালু করেছে৷ এছাড়াও ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের উন্নয়নের আরও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল রেশনশপেও ত্রিপুরেশ্বরী চা দেওয়া হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আগরতলা পুর নিগমের অধীন সমস্ত রেশনের দোকানে ত্রিপুরেশ্বরী চায়ের প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে৷ পরবর্তী সময় রাজ্যের অন্যান্য শহর ও গ্রামীণ এলাকায়ও রেশনের মাধ্যমে ত্রিপুরেশ্বরী চা পাতা বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে৷


তিনি আরও বলেন, ১৯৮০ সালে ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগম যাত্রা শুরু করলেও রাজ্যের চায়ের কোনো ব্যাণ্ড বা লোগো ছিল না৷ বর্তমান রাজ্য সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্যের চা শিল্পের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে লোগো চালু করেছে৷ এই লোগোর সঙ্গে রাজ্যের ঐতিহ্যও জড়িয়ে রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার গঠিত হওয়ার পর বিগত বছরগুলির তুলনায় নিগমের অধীনস্ত বাগানগুলির চা পাতা উৎপাদন অনেকাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তাঁর দাবি, চা উৎপাদনে আমাদের রাজ্য বর্তমানে দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে৷ এ-বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথ্য তুলে ধরে বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রাজ্যে কাঁচা চা পাতা উৎপাদন হয়েছিল ১৫.৫৬ লক্ষ কেজি৷ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ১৬.৫০ লক্ষ কেজি৷


এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে নিগমের কারখানায় তৈরি চা পাতা উৎপাদন হয়েছিল ২.৯৮ লক্ষ কেজি, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা ৩৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪.০৪ লক্ষ কেজি৷ তিনি আরও বলেন, রাজ্যের চা শিল্পে বর্তমানে ১৩,৩০০ জন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের উৎপাদিত চা ব্যবহার করার জন্য রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান৷ এর ফলে চা শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *