নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ মে৷৷ করোনা আক্রান্তের তালিকায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ত্রিপুরা শীর্ষে পৌঁছে গেছে৷ আজ বুধবার নতুন করে ২২ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে৷ তাঁরা সকলেই ধলাই জেলা সদর আমবাসায় জওহরনগরস্থিত বিএসএফ-এর ১৩৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের৷ তাদের মধ্যে ১ জন মহিলা ও তিন শিশু রয়েছে৷ সব মিলিয়ে ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪৷ ইতিমধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বুধবার রাতে টুইট করে এই খবর দিয়েছেন৷
প্রসঙ্গত, টানা পাঁচদিনে এ-নিয়ে ৬২ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে ত্রিপুরায়৷ গত শনিবার প্রথম বিএসএফ-এর দুই জওয়ান করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট এসেছিল৷ এর পর থেকে চারদিনে ৬০ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ রাতে টুইট বার্তায় বলেন, ত্রিপুরায় আরও ২২ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে৷ তাঁদের মধ্যে বিএসএফ-এর ১৩৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানের তিন শিশুসন্তান রয়েছে৷ এক মহিলাও আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাঁর আবেদন, আতঙ্কিত হবেন না৷ সরকারি নির্দেশ পালন করুন এবং বাড়িতে থাকুন৷
আজ করোনা আক্রান্তের তালিকায় ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীর্ষে পৌছে গিয়েছে৷ অসম-কে পেছনে ফেলে দিয়ে ত্রিপুরা এগিয়ে গেছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, ত্রিপুরায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে৷ কারণ, এখনও অনেকের নমুনা পরীক্ষা এবং সংগ্রহ করা বাকি রয়েছে৷
আজ সন্ধ্যায় মহকারণে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের করোনা সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য প্রদান করে অতিরিক্ত মুখ্য সচিব এস কে রাকেশ জানিয়েছেন, আক্রান্ত বিএসএফ ছাড়াও একজন সাধারণ নাগরিক যিনি বিএসএফ ক্যাম্পে মেস কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি লকডাউন চলাকালে গত ১ মাস যাবৎ নিজ বাড়িতে যাননি৷ তবে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে তার বাড়ির লোকজন সহ ম্যাগাজিন পাড়ার ৫১জনের নমুনা পরীক্ষাধীন৷ তিনি বলেন, আজ মোট ৪৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষা চলছে৷ তার মধ্যে ২৫৯ জন ধলাই জেলার৷ ২৫৯ জনের মধ্যে ১৫২ জন বিএসএফ, ৫১জন ম্যাগাজিন পাড়ার সাধারণ নাগরিক, ১৯জন একটি জনজাতি বাড়ি সহ সংলগ্ণ পুলিশ লাইনের কর্মী এবং ৩৭জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন৷ অতিরিক্ত মুখ্য সচিব আরও জানান, আজ পর্য্যন্ত ৬ হাজার ২২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷
অতিরিক্ত মুখ্যসচিব জানান, চুড়াইবাড়ি দিয়ে যেসব পণ্যবাহী গাড়িগুলি রাজ্যে প্রবেশ করছে সেক্ষেত্রে এখন থেকে ননহটস্পট এলাকা থেকে এলে প্রতি পাঁচটি গাড়ির একটির চালক বা সহকারীর নমুনা পরীক্ষা করা হবে৷ এছাড়া তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় এমন পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসা যানবাহন হটস্পট এলাকা থেকে এলে গাড়িগুলির চালক ও সহকারীর নমুনা সংগ্রহ করে তাদের যেতে দেওয়া হবে৷ পণ্য সামগ্রী নির্দিষ্ট জায়গায় নামানোর পর নমুনা রিপোর্ট আসা পর্য্যন্ত তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে৷
এদিকে, গতকাল ত্রিপুরায় নতুন করে ১৩ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে৷ বুধবার তাদের আগরতলার জিবি হাসপাতালে আনা হয়েছে৷ তাঁরা সকলেই বিএসএফ পরিবারের সদস্য৷ তাঁদের মধ্যে একজন মেস ওয়ার্কার রয়েছেন৷ তাঁরা ধলাই জেলা সদর আমবাসায় জহরনগরস্থিত বিএসএফ ১৩৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের মুখ্য কার্যালয়ে ছিলেন৷
আজ দুপুরে জওহরনগর থেকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ১৩ জন করোনা আক্রান্তকে নিয়ে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়৷ বিকালে তারা জিবি হাসপাতালে পৌঁছে৷ তাঁদের জিবি হাসপাতালের কোভিড-১৯ কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভরতি করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, করোনা আক্রান্ত বিএসএফ জওয়ানরা সুস্থ আছেন৷ হাসপাতালে পৌঁছতেই তাদের চিকিৎসাও শুরু হয়ে যায়৷
প্রথমে বিএসএফ জওয়ানদের চান্দ্রাইছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রাখার চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল৷ সে মোতাবেক দ্বিতীয় দফায় করোনা আক্রান্ত ১২ জনকে সেখানে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু আতঙ্কিত স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত বিক্ষোভে ওই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে প্রশাসন৷ ত্রিপুরা সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, কোনও ঝুঁকি নেওয়ার বদলে সকলকে জিবি হাসপাতালে কোভিড-১৯ কেন্দ্রে আনা হোক৷

