হাফলং (অসম), ৫ মে (হি.স.) : গৌহাটি হাইকোর্টের নির্দেশে সন্তোষ হোজাই হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে অসম পুলিশ অবশেষে এসআইটি গঠন করেছে। অপহরণ এবং খুনের তদন্ত করতে নিহত সন্তোষ হোজাইয়ের স্ত্রী জয়ন্তা হোজাইয়ের রিট আবেদনের ভিত্তিতে গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অজয় লাম্বা ও সৌমিত্র শইকিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করে অসম পুলিশকে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে এসআইটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের পর রাজ্যের পুলিশ প্রধান ভাস্করজ্যোতি মহন্ত দক্ষিণ অসম রেঞ্জের ডিআইজি দিলীপ কুমার দে-র নেতৃত্বে এসআইটি গঠন করেছেন।
গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের অন্য সদস্যরা যথাক্রমে ডিমা হাসাওয়ের পুলিশ সুপার বীরবিক্রম গগৈ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মানবেন্দ্র গগৈ এবং কাছাড় পুলিশের ডিএসপি সঞ্জীব ভার্গব গোস্বামী।
ডিমা হাসাও জেলার হারাঙ্গাজাও থানার অন্তর্গত গামাডিহাওর গ্রামের বাড়ি থেকে ভেঙে দেওয়া ডিএইচডি-র প্রাক্তন নেতা তথা ঠিকাদার সন্তোষ হোজাইকে লকডাউনের মধ্যে গত ২৪ এপ্রিল পাঁচজনের দুষ্কৃতকারীর এক দল বন্দুকের নলের মুখে অপহরণ করে নিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করে। তার পর গত ৩০ এপ্রিল সন্তোষ হোজাইয়ের মৃতদেহ হারাঙ্গাজাও থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে লাংটিং থানার অন্তর্গত মুপা রিজার্ভ ফরেস্ট সংলগ্ন ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে লাইলিঙের জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে পুলিশ।
এর পরই মৃত সন্তোষ হোজাইয়ের স্ত্রী জয়ন্তা হোজাই গৌহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর স্বামীকে নৃশংস খুনের পিছনে ডীমা হাসাওয়ের ডিএসপি সূর্যকান্ত মরানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগনামা দাখিল করেন স্ত্রী জয়ন্তা। ওই আবেদন ও অভিযোগের ভিত্তিতে গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অজয় লাম্বা ও সৌমিত্র শইকিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করে অসম পুলিশকে এসআইটি গঠন করার নির্দেশ দেয়। তদন্ত গৌহাটি হাইকোর্টের নজরদারিতে হবে বলেও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। তাছাড়া এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় ফরেনসিক ল্যাবের বিশেষজ্ঞ সহ যেখান থেকে সন্তোষ হোজাইয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে সেখানে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ৮ মে-র মধ্যে এ সম্পর্কে হলফনামা গৌহাটি হাইকোর্টে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেবল তা-ই নয়, বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ অতিমারির অজুহাতে তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনও বিলম্ব করা চলবে না বলেও অসম পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি অজয় লাম্বা ও সৌমিত্র শইকিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিকে মঙ্গলবার সন্তোষ হোজাইয়ের নৃশংস খুনের প্রতিবাদে হাফলঙে জেলাশাসক কার্যালয়ের সামনে ডিমাসা স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন, অল ডিমাসা স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন, ডিমাসা সর্বোচ্চ সংগঠন জাদিখে নাইশ হসমের সদস্যরা প্রতিবাদী কার্যসূচি পালন করেছে। সংগঠনের পদাধিকারী ও সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের সুবিচার চেয়ে এবং সমগ্র ঘটনার এনআইএ (নিয়া) তদন্তের দাবি জানিয়ে ডিমা হাসাওয়ের জেলাশাসক অমিতাভ রাজখোয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশ্যে এক স্মারকপত্র পাঠিয়েছেন।
সন্তোষ হোজাইকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের পেছনে পুলিশের ভূমিকা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে ডিমাসা স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রমিত সেংইয়ং, অল ডিমাসা স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক উত্তম লাংথাসা ও জাদিখে নাইশ হসমের সভাপতি রঞ্জু হাকমকসা বলেন, এই নৃশংস ঘটনার পর যাদের হাতে আইন রক্ষার দায়িত্ব তাদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন জেলার সাধারণ মানুষ। তাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইন অনুযায়ী সাজা প্রদানের দাবি জানান তাঁরা।