নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা ও বিশালগড়, ২৮ জানুয়ারি৷৷ আগরতলা পশ্চিম থানার লক আপে পুলিশ রিমাণ্ডে আনা আসামী সুশান্ত ঘোষের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই বিশালগড়ের প্রভুরামপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বিচারাধীন এক বন্দীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ মৃতের নাম সঞ্জিব সরকার৷ বাড়ি তেলিয়ামুড়া গৌরাঙ্গটিলা এলাকায়৷ ঘটনাকে কেন্ত্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ফাঁসিতে সে আত্মহত্যা করেছে বলে কর্তৃপক্ষের অভিমত৷ থানার লক আপে এবং কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পারদ আবার উর্দ্ধমুখী৷
বিশালগড়ের প্রভুরামপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে মঙ্গলবার সঞ্জিব সরকার নামে এক বিচারাধী বন্দী মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে বলে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন৷ কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বিচারাধীন বন্দীর ফাঁসিতে আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা কৌতহলের সৃষ্টি হয়েছে৷ জানা যায়, ৭ মাস আগে তেলিয়ামুড়া থানা এলাকার গৌরাঙ্গ টিলার বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক সঞ্জিব সরকারকে এনডিপিএস মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ আদালতের নির্দেশে তাকে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পাঠানো হয়৷ সংশোধনাগারের ভিতরে মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎই তা ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পায় সংশোধনাগারের এক কর্মী৷
সংশোধনাগার অভ্যন্তরে টয়লেট’র ভিতরে সে গলায় গামছা দিয়ে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়৷ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়৷ এটিকে ঝুলন্ত মৃতদেহ নামিয়ে নিয়ে আসা হয় বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঞ্জিব সরকারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ না থাকায় সেখান থেকে মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য জিবি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়৷
ঘটনার খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ছুটে যান মহকুমা শাসক, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সহ পুলিশকর্মীরা৷ চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সম্পর্কে তারা কেউই আপাতত মুখ খুলতে নারাজ৷ এদিকে, গত সোমবার সঞ্জীব ফোনে তার স্ত্রী শিখা রাণী বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে বিসুকট নিয়ে আসার জন্য স্ত্রীকে বলেছিল৷ সে অনুযায়ী মঙ্গলবার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে স্ত্রী শিখা রাণী বিশ্বাস কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার যায়৷ কিন্তু স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি৷ কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে জানানো হয় স্বামী অসুস্থ হয়ে জিবি হাসপাতালে রয়েছে৷ সেখানে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তারা৷ সে অনুযায়ী জিবি হাসপাতালে ছুটে গেলে সেখানে তাকে বলা হয় ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে সঞ্জীব৷ মৃতদেহটি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে৷ সেখানে এক পুলিশ কর্মী তার হাতে এক হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে এবং বুধবার সকাল ১০ টায় এসে মৃতদেহ নিয়ে যেতে বলে৷
এধরনের কার্যকলাপে তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেন শোকাহত স্ত্রী শিখা রাণী বিশ্বাস৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে মৃত সঞ্জীবের স্ত্রী শিখা রাণী বিশ্বাস জানান, তার স্বামী পেশায় একজন গাড়ি চালক ৷ ৭ মাস আগে কতিপয় যুবকের সঙ্গে মারামারি করার দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ সংশোধনাগারে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে তাকে দেখে রাখার কথা নিরাপত্তা কর্মীদের৷ কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে কিভাবে এই ঘটনা ঘটল সেই প্রশ্ণ তুলেছেন তিনি৷ অভাগিনি স্ত্রী তার স্বামীকে জীবন্ত অবস্থায় ফেরত চান৷ কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বিচারাধীন বন্দীর মৃত্যুর ঘটনায় বিশালগড় থানায় একটি মামলা গৃহীত হয়েছে৷ পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ তবে এখনও পর্যন্ত এব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ পুলিশ৷ ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷