রাজ্যের প্রতিথযশা চিকিৎসক ডাঃ রথীন দত্তের জীবনাবসান

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ জানুয়ারি৷৷ ত্রিপুরার প্রথিতযশা শল্য চিকিৎসক ডা. রথীন দত্তের জীবনাবসান ঘটেছে৷ কলকাতায় নিজের বাসভবনে সোমবার সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর৷ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধ্যক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক ডা. দত্ত৷ নিজের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার মর্যাদাস্বরূপ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ত্রিপুরা সরকার তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ডা. দত্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর চিকিৎসায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন৷


ডা. রথীন দত্ত ১৯৩১ সালে অসমের মঙ্গলদৈয়ে জন্মগ্রহণ করেন৷ শিলঙ থেকে সুকল জীবন এবং ডিব্রুগড় মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে তিনি লন্ডন চলে যান এফআরসিএস ডিগ্রি নেওয়ার জন্য৷ তিনি কিংবদন্তি চিকিৎসক ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের অধীনেও কাজ করেছেন৷


ষাটের দশকে ডা. দত্ত আগরতলার জিবিপি হাসপাতালে অ্যাসোসিয়েট সার্জন হিসেবে যোগ দেন৷ তাঁর চিকিৎসায় বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন৷ এমন-কি, পার্শবর্তী রাজ্যগুলি থেকেও রোগী আসতেন তাঁর কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য৷ তিনি বহু জটিল অস্ত্রোপচার করেছেন৷


সহকর্মীদের সাথে নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধে চিকিৎসা পরিষেবা ছড়িয়ে দিতে ডা. দত্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন৷ ওই সময় তিনি বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন৷ তাঁর ওই অবদানের জন্য ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন সন্মাননা প্রদান করেছিল৷


রোগীর সেবার পাশাপাশি তিনি ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিবের দায়িত্ব সামলেছেন৷ ১৯৯২ সালে তিনি অবসর নেন৷ ওই বছর ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে৷
ডা. রথীন দত্ত কলকাতায় একা থাকতেন৷ তাঁর স্ত্রী ডা. স্বপ্ণা দত্ত দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হলে বহুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন৷ তাঁর এক ছেলে রাজশ্রী দত্ত এবং মেয়ে সোনাল দত্ত আমেরিকায় বসবাস করেন৷ তাঁরা আসার পরই প্রয়াত ডা. দত্তের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে, পারিবারিক সূত্রে এমনটাই জানা গেছে৷


রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক পদ্মশ্রী ডা: রথীন দত্তের মত্যতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গভীর শোক ব্যক্ত করেছেন৷ এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘প্রয়াত শল্য চিকিৎসক ডা: রথীন দত্ত রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় কিংবদন্তী হিসাবে পরিচিত৷ তৎকালীন সময়ে অপ্রতুল পরিকাঠামোর মধ্যেও মানুষের সেবায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতাকে তিনি তুলে ধরেন৷ একাত্তরের যুদ্ধের সময়কালে আহতদের চিকিৎসায় তিনি যে অসাধারণ মানবিক দায়িত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন তা রাজ্যবাসী চিরকাল মনে রাখবে৷ তিনি রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ছিলেন এবং পরবর্তীকালে স্পেশাল সেক্রেটারি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন৷
আমি প্রয়াত চিকিৎসক রথীন দত্তের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি৷’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *