আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয়, এনকাউন্টার ইস্যুতে মন্তব্য মমতার

কলকাতা, ৬ ডিসেম্বর (হি.স):  আইন হাতে তুলে নিয়ে নয়, কড়া আইনের মাধ্যমেই ধর্ষকদের সাজা দেওয়া উচিত বলে হায়দরাবাদ এনকাউন্টার ইস্যুতে শুক্রবার এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন কলকাতার মেয়ো রোডে সংহতি দিবস পালন করে তৃণমূল কংগ্রেস । সেখানেই বক্তব্যের শুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ষণের সাজা নিয়ে আরও কঠোর আইনের দাবি তোলেন । বলেন, দ্রুত বিচার করে চার্জশিট পেশ করে সাজা দেওয়া উচিত । একই সঙ্গে তিনি জানান, হায়দরাবাদে যে এনকাউন্টার হয়েছে তাতে ধর্ষণে অভিযুক্তদের দেহ ময়নাতদন্তের পরে তিনি এনিয়ে মন্তব্য করবেন ।

শুক্রবার মেয়ো রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নারীদের ওপর যে কোনও ধরনের অত্যাচার তিনি সহ্য করেন না । আবার আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াকেও সমর্থন করেন না । একই সঙ্গে পুলিশের প্রতি নির্দেশ, এই ধরনের ঘটনায় সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে হবে । কাগজপত্র জোগাড় করতে হবে ।’ পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও সরকার যে কড়া হাতে তার মোকাবিলা করবে, সেই বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘এটা জরুরি অবস্থা হিসেবে দেখতে হবে। যে করবে না, তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে ।’উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী । এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি কোনও মহিলার উপর অত্যাচার সহ্য করি না । হায়দরাবাদ ও উন্নাওয়ের ঘটনা আমাকে নাড়া দিয়েছে । উন্নাওয়ের কেসটা জানত সবাই । তার পরেও কী ভাবে তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হল ।’ একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘উন্নাওয়ের মেয়েটি সুরক্ষা পায়নি কেন ? তিনি বলেন, আইন মেনে কাজ করতে হবে । এটা আইন নয়, যে আইনকে আমি নিজের হাতে তুলে নিলাম । আইন এটাই, পুলিশ তার কাজ করবে, আদালতে পেশ করবে । বিচারক বিচারকের কাজ করবেন ।’

দক্ষিণ দিনাজপুরে একটি ধর্ষণকাণ্ডে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ । এ দিন সেই উদাহরণ টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কখনও কখনও কিছু ঘটে যায়। আমরা সমর্থন করি না । কিন্তু আইনকেও শক্তিশালী হওয়া উচিত । আমরা সরকারে আসার পর দক্ষিণ দিনাজপুরে ধর্ষণ কাণ্ডে তিন দিনে চার্জশিট দিয়েছিলাম।’

এদিন তিনি বলেন, দ্রুত বিচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে ৮৫টি ফাস্টট্র্যাক কোর্ট রয়েছে । বিচার ব্যবস্থায় গতি আনা দরকার । দ্রুত চার্জশিট পেশ করে আদালতে অভিযুক্তদের বিচার হওয়া দরকার । কোথাও আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হবে না । আদালতের মাধ্যমেই দোষিদের সাজা দেওয়া উচিত । সম্প্রতি মালদায় ধর্ষণের পরে নির্যাতিতাকে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

গত ২৭ নভেম্বর হায়দরাবাদের সামশাবাদ এলাকায় তরুণী চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে খুন করা হয় । শুক্রবার ভোরে অভিযুক্ত চার জন পালানোর চেষ্টা করলে এনকাউন্টারে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ । সেই খবরে তোলপাড় সারা দেশ । উঠে আসছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত । শুক্রবার বি আর অম্বেডকরের মৃত্যু বার্ষীকিতে মেয়ো রোডের একটি অনুষ্ঠান যোগ দিয়ে সেইই ঘটনা নিয়েই মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।