প্রচুর সম্পত্তির মালিক ব্রু নেতারা, শরণার্থী প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে তৎপরতা

আগরতলা, ৫ নভেম্বর (হি. স.) ৷৷ রিয়াং শরণার্থী প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে ফের তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে ব্রু নেতাদের বিরুদ্ধে৷ এই অবস্থায় বিলাসবহুল জীবনযাপন ব্রু নেতাদের দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারির সাথে জড়িয়ে থাকাকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করা ভুল হবে না৷ কারণ, একদিকে রিয়াং শরণার্থীদের রেশন এবং আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ায় না খেতে পেয়ে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তবুও তাঁরা মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে আপত্তিতে অনঢ় রয়েছেন৷ অথচ, ব্রু নেতাদের কূটচাল তাঁরা বুঝতে পারছেন না৷ এমবিডিপিএফ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্পত্তির হিসেব থেকেই স্পষ্ট তাঁরা কায়েমী স্বার্থ সিদ্ধির জন্য রিয়াং শরণার্থীদের মগজ ধোলাই করে চলেছেন৷ ব্রু নেতাদের জন্যই রিয়াং শরণার্থী প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া ফের ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷


সম্প্রতি, ব্রু নেতাদের সম্পত্তির হিসেব ত্রিপুরা পুলিশের হাতে এসেছে৷ ওই তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে তার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিপুরা পুলিশের আধিকারিকের কথায়, ব্রু নেতারা প্রত্যেকেই বিত্ত বৈভবে সমৃদ্ধ৷ কিন্তু, তাদের ওই সম্পত্তি কিভাবে হয়েছে কোন হিসেব পাওয়া যায়নি৷ তিনি জানান, এমবিডিপিএফ সংগঠনের সভাপতি এ সায়্যিবুঙ্গার ছেলেমেয়েরা নামি বেসরকারি সুকলে পড়াশুনা করছে৷ তাছাড়া, তাঁর কাছে দামী বাইক এবং তার ধর্মনগর-গুয়াহাটি রুটে বিলাসবহুল রাত্রিকালীন বাস পরিষেবার ব্যবসা রয়েছে৷


ওই আধিকারিক আরও জানান, এমবিডিপিএফ সংগঠনের সহ সভাপতি আর লালডুঙলিয়ানার সন্তানরাও ভুবনেশ্বর এবং শিলঙে বেসরকারি নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছে৷ তাঁর একটি কমান্ডার জীপ, একটি দামি গাড়ি ও একটি দামি বাইক রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, তাঁর স্ত্রী কাঞ্চনছড়া এলাকায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে ২ কানি জমি কিনেছেন এবং এসবিআই-তে প্রচুর টাকা জমা রেখেছেন৷
ব্রু নেতাদের সম্পত্তির হিসাব এখানেই শেষ নয়৷ ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, এমবিডিপিএফ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকেরও আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত ভাল৷ তিনি জানান, এমবিডিপিএফ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ব্রুনো মিশর সন্তানরা পানিসাগর এবং শিলঙে নামি বেসরকারি সুকলে পড়াশুনা করছে৷ তাছাড়া, তাঁর একটি দামি মোটর বাইক এবং একটি মারুতি ভ্যান রয়েছে৷ সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, ২০১৮ সালে এসবিআই কুমারঘাট শাখায় তিনি ১৫ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন৷ ওই টাকা তিনি কিভাবে উপার্জন করেছেন তার কোন হিসেবে এখনো পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু, ব্রু নেতার ব্যাঙ্ক একাউন্টে নগদ ১৫ লক্ষ টাকা জমা পড়া খুবই রহস্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে৷


ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, ব্রু ট্রাইবাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির বিপিন রিয়াংও আর্থিক দিক দিয়ে সচ্ছল৷ কিন্তু, ওই সচ্ছলতা কিভাবে এসেছে তার জীবনে সেই হিসেব এখনো রহস্যজনক রয়ে গেছে৷ ওই পুলিশ আধিকারিকের কথায়, বিপিন রিয়াং-এর একটি মাহিন্দ্রা বুলেরো গাড়ি এবং এসবিআই ব্যাংকে তাঁর জমানো প্রচুর টাকা রয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্রু শরণার্থীদের প্রতারণায় এবং টাকা উপার্জনে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের নাম বেআইনিভাবে ব্যবহার করেন৷


পুলিশের ওই আধিকারিকের প্রশ্ণ, ব্রু নেতারা এত সম্পত্তি এবং অর্থের মালিক কিভাবে হলেন৷ কারণ, শরণার্থী হিসেবেই তাঁদেরও পরিচিতি রয়েছে৷ শিবিরে হাজার হাজার ব্রু শরণার্থী খাদ্যের অভাবে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে বলে তাদের দাবি৷ অবাক করার বিষয় হল, ওই হাজার হাজার শরণার্থীরা বিত্ত-বৈভবে ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারেননি৷


১৯৯৭ সালে জাতি দাঙ্গার পরিনাম স্বরূপ মিজোরাম থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ত্রিপুরা ৭টি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিরিশ সহস্রাধিক ব্রু শরণার্থী৷ কালের বিবর্তনে বহু অধ্যায়ের রচনা হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু, শরণার্থীদের ভাগ্য সেই তিমিরেই রয়ে গেছে৷ এখন কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের জন্য সমস্ত সুযোগ সুবিধার বন্দোবস্ত করে মিজোরামে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ কিন্তু, আবারো সেই প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে ষড়যন্ত্র চলছে৷
সম্প্রতি, রেশন সামগ্রী ও নগদ আর্থিক সহায়তা পুনরায় চালু করার দাবিতে দশদা-আনন্দবাজার রাস্তা এমবিডিপিএফ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে অবরোধ চলছে৷ ব্রু নেতাদের কূটচালে কেন্দ্রীয় সরকার অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতেও শরণার্থী প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *