দীপাবলি উৎসবে আলোর রোশনাই আনন্দে মেতে উঠল গোটা রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, উদয়পুর/ আগরতলা, ২৮ অক্টোবর৷৷ শ্যামা মায়ের আরাধনা এবং দীপাবলি উৎসবে আলোর রোশনাই ও উল্লাসে মেতে উঠেছে সারা ত্রিপুরা৷ একান্ন পিঠের মধ্যে একপিঠ উদয়পুরে মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে মঙ্গল আরতি দিয়েই সূচনা হয় উৎসবের৷ দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে রবিবার ভোরে ত্রিপুরাসুুন্দরী মন্দিরের কল্যাণ সাগরের পাড়ে আয়োজিত মঙ্গল আরতিতে অংশ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ মঙ্গল আরতিতে ৫১ জন ঢাকি, ৫১ জন পুরোহিত অংশ গ্রহণ করেন৷


ওইদিন ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরে এসে পৌছলে শুরু হয় এই ভক্তি বিনম্র মঙ্গল আরতি দর্শন৷ শুরুতেই প্রায় পাঁচ শতাধিক মহিলা পট্টবস্ত্র পরিধান করে হাতে প্রদীপ নিয়ে আলোর উৎসবকে স্বাগত জানিয়ে আরতিতে অংশ গ্রহণ করেন৷ উপস্থিত পূণ্যার্থীগণ এই আরতি উপভোগ করেন৷ প্রায় ৩০ মিনিট ধরে এই আরতি চলে৷ মঙ্গল আরতিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক, মুখ্যসচিব ইউ ভেঙ্কটেশ্বরলু, মেলা কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ, গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি স্বপন অধিকারী৷ এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমীর স্ত্রী নিতি দেব, গোমতী জেলার জেলাশাসক টি কে দেবনাথ, পুলিশ সুুপার এ আর রেড্ডী সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ৷ উল্লেখ্য, যে এই রকম মঙ্গল আরতি মাতাবাড়ি দীপাবলি অনুষ্ঠানে প্রথম বারের মতো আয়োজিত হয়৷


এদিকে, সকল দশটা থেকে শ্যামা মায়ের পূজা শুরু হয়ে যায় মন্দিরে৷ দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পুণ্যার্থী উদয়পুরে শ্যামা পূজা এবং দীপাবলি উৎসবে সামিল হতে ত্রিপুরায় এসেছেন৷ এই উৎসবকে ঘিরে উদয়পুর জুড়ে বিরাট আয়োজন করা হয়েছে৷


মন্দির নগরী উদয়পুরের মাতা ত্রিপুরাসুুন্দরী মন্দির সংলগ্ণ সাংসৃকতিক মঞ্চে দীপাবলি উৎসব ও মেলার শুভ উদ্বোধন করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ৫১ পীঠের অন্যতম ত্রিপুরাসুুন্দরী মায়ের মন্দির৷ দীপাবলি উৎসব ও মেলা উপলক্ষে এই পবিত্র পীঠস্থানে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তের অগণিত ভক্ত, সন্ত ও পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরাসুুন্দরী মা হলেন শক্তির প্রতীক ও একতার উৎস৷ ত্রিপুরাসুুন্দরী মায়ের ভূমি যথেষ্ট উর্বরা-সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমি৷ মায়ের আর্শীবাদে আমরা সমস্ত অশুভ শক্তিকে নাশ করে, সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে সমৃদ্ধশালী ত্রিপুরা গড়ার সংকল্প নিয়ে কাজ করে চলছি, বলেন তিনি৷


ওইদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নারী নির্যাতনমুক্ত, ভ্রষ্টাচারমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত ত্রিপুরা ও সাসমুক্ত ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরকার কাজ করছে৷ আলোর উৎসব দীপাবলি আমাদের সকলের জীবনে সুুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে৷ মায়ের আশীর্বাদে আগামী দিনে রাজ্য হয়ে উঠবে বৈভবশালী, পূর্ণ হবে মডেল ত্রিপুরা রাজ্য গড়ার স্বপ্ণ৷ তিনি বলেন, তিরুপতি মন্দির ট্রাস্ট, বৈষ্ণোদেবী মন্দির ট্রাস্ট, কামাক্ষা মন্দির ট্রাস্ট সকলের কাছেই পরিচিত৷ কিন্তু মাতা ত্রিপুরাসুুন্দরী মন্দির ট্রাস্ট এখনো সেভাবে পরিচিতি লাভ করেনি৷ এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়৷ রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় অতিদ্রুত এই ট্রাস্ট সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করবে৷ সরকার প্রচেষ্টা নিয়ে মাতাবাড়ির উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন দেশের বা রাজ্যের উন্নয়ন করতে গেলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী৷ মাতাবাড়িকে কেন্দ্র করে আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় পর্যটন বিকাশের সম্ভবনা যথেষ্ট উজ্জল৷ যা রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলি বিশ্বের সেরা পর্যটনস্থল৷ যা দেখে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের মানুষই আনন্দে আপুত হয়ে উঠেন৷


অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির ভাষণে রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা বলেন, ত্রিপুরাসুুন্দরী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে যুগযুগ ধরে রাজ্যের মানুষ মায়ের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে আসছে৷ এটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান৷ আমাদের ইতিহাস ও সংসৃকতি তার সাক্ষী৷ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দীপাবলি উৎসবের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের মধ্যে সম্পীতি ও শান্তির মেলবন্ধন সুুদৃঢ় হবে৷ এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক বলেন, এই মিলন মেলা আমাদের সংসৃকতি ও ঐতিহ্যকে আরো শক্তিশালী করবে৷ এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জমাতিয়া হুদা অক্রা পদ্মলীলা জমাতিয়া৷ স্বাগত ভাষণ রাখেন মেলা কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি, পর্যটন ও পরিবহণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, মুখ্যমন্ত্রীর জায়া নিতি দেব, গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি স্বপন অধিকারী, উদয়পুর পুর পরিষদের চেয়ারম্যান শীতল চন্দ্র মজুমদার, জেলাশাসক টি কে দেবনাথ, পুলিশ সুুপার এ আর রেড্ডী প্রমুখ৷


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিগণ ত্রিপুরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়নমূলক প্রদর্শনী মণ্ডপ পরিদর্শন করেন৷ এরপর সাংসৃকতিক মঞ্চে শুরু হয় সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷ এই সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান ও মেলা চলবে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত৷ এতে স্থানীয় শিল্পীরা ছাড়াও রাজ্যের ও বর্হিরাজ্যের খ্যাতনামা শিল্পীরা তাদের শিল্পকলা পরিবেশন করবেন৷


এদিকে, রাজধানীর ইন্দ্রনগর কালীবাড়িতে সোমবার সকালে ভাগগম্ভীর পরিবেশে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়৷ কুমারী পূজাকে কেন্দ্র করে সকালে ইন্দ্রনগর কালীমন্দিরে ভক্তপ্রাণ মানুষের উঁপচে পড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয়৷ রাজধানীর ইন্দ্রনগর কালী বাড়িতে দীপাবলি উপলক্ষ্যে রবিবার থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী মেলা ও উৎসব৷ মেলা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়৷ রীতিনীতি মেনে সোমবার সকালে ইন্দ্রনগর কালীবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা৷ কুমারী পূজাকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মানুষের উপচে পড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয়৷ পূজা শেষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়৷ তিনদিনব্যাপী মেলা ও উৎসব পরিচালনা করছে জয় মা কালী সন্তান সংঘ৷ দীপাবলি উৎসব উপলক্ষ্যে ইন্দ্রনগর কালীবাড়িতে মেলায় শত শত দোকানি নানা প্রসারী নিয়ে দোকানও খুলেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *