নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ অক্টোবর৷৷ বহু প্রতীক্ষার অবসান হল আজ৷ জৌলুস ছাড়াই চালু হয়ে গেল ত্রিপুরার প্রথম উড়ালপুল৷ আজ নরসিংগড়ে অবস্থিত দৃষ্টিহীন সুকলের পড়ুয়াদের হাত দিয়ে উদ্বোধন হয়েছে উড়ালপুলের৷ সে সময় ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রিসভার কোনও সদস্যই৷ শুক্রবার বিকেল চারটায় সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে উড়ালপুল৷ মূহর্তের মধ্যেই বাইক এবং ছোট গাড়ির যাতায়াত শুরু হয়ে যায়৷ মূলত, দুর্গাপূজায় আগরতলায় যানজট এড়াতেই তড়িঘড়ি উড়ালপুলটি ত্রিপুরাবাসীর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে৷
তিন বছর আগে ওই উড়ালপুলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল৷ নির্মাণ কাজে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে৷ উড়ালপুলটি শুরু থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল৷ কারণ, নির্মাণকারী সংস্থা নাগার্জুনা কনস্ট্রাকশন কোম্পানির খ্যাতি ছিল না দেশে৷ অভিযোগ, ওই সংস্থা বহু জায়গায় কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে৷ পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার তবুও ওই সংস্থাকেই কাজের বরাত দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক ক্রমশ বেড়েছে৷ তাছাড়া, উড়ালপুলটি নির্মাণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণেও বিস্তর জলঘোলা হয়েছে৷ কারণ, উড়ালপুল নির্মাণে বহু মানুষের বাড়িঘর প্রশাসন ভেঙে দিয়েছে৷ অবশ্য তারা বেআইনিভাবে সরকারি জমি দখল করে দোকানপাট, বাড়িঘর তুলেছিলেন৷ তাই, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন ওই সব বাড়িঘর, দোকানপাট ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে উড়ালপুলের জন্য জমির ব্যবস্থা করেছিল৷
তাতেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি উড়ালপুলের৷ নির্মাণ কাজের গুণমান নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে৷ তবে, বহিঃরাজ্যের অভিজ্ঞ সংস্থা দিয়ে গুণমান এবং নিরাপত্তা যাচাইয়ের পর উড়ালপুলিট ব্যবহারের জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে৷ কিন্তু এরই মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে উড়ালপুলের নির্মাণকাজ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ত্রিপুরা সরকার৷ প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী-সহ পূর্ত দফতরের পাঁচ আমলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে তদন্ত চলছে৷ ইতিমধ্যে ত্রিপুরা পুলিশ চার্জশিটও জমা দিয়েছে৷ তাছাড়া, পূর্ত দফতরের তিন প্রাক্তন আমলাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ৷ তাদের মধ্যে দুজন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন৷ ১ জন ১১ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হাজতে রয়েছেন৷ এতসব বিতর্কের মাঝেই আজ উড়ালপুল জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে৷
এদিন, উড়ালপুলে দাঁড়িয়ে অনেককে সেলফি নিতে দেখা গেছে৷ তাছাড়া গাড়ি কিবা বাইক থেকে ফেসবুক লাইভ ভিডিও করতে অনেকেই ব্যস্ত ছিলেন৷ জনৈক বাইক চালক বলেন, আজ সবটাই স্বপ্ণের মত মনে হচ্ছে৷ তিনি অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, মাটি থেকে আস্তে আস্তে আকাশে উঠে যাওয়া যেন চোখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷ তাঁর কথায়, আগরতলার মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হল আজ৷